সমাজ থেকে কল্পিত দ্বন্দগুলো দূর হোক।
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইয়াবা (থাই: ยาบ้า; অর্থ পাগলা ঔষধ) একধরনের নেশাজাতীয় ট্যাবলেট। এটি মূলত মেথঅ্যাম্ফিটামিন ও ক্যাফেইন এর মিশ্রন। কখনো কখনো এর সাথে হেরোইন মেশানো হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি খাওয়ার বড়ি হিসাবে সেবন করা হয়, তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধাতব ফয়েলে পুড়িয়ে ধোঁয়া হিসাবেও এটিকে সেবন করা হয়ে থাকে।
এই মাদকটি থাইল্যান্ডে বেশ জনপ্রিয়, এবং পার্শ্ববর্তী দেশ বার্মা থেকে এটি চোরাচালান করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পৃথিবীর অনেক দেশেই এই মাদকের বিস্তার ঘটেছে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
প্রথমদিকে ইয়াবা যৌনউত্তেজক বড়ি হিসাবে বাজারে পরিচিত ছিলো। কিন্তু দীর্ঘদিন সেবনের ফলে যৌন ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। যুক্তরাজ্যের ড্রাগ ইনফরমেশন এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ইয়াবা ট্যাবলেটি খেলে সাময়িক ভাবে উদ্দীপনা বেড়ে যায়।
কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হেরোইনের চেয়েও ভয়াবহ। নিয়মিত ইয়াবা সেবন করলে মস্তিস্কে রক্ত ক্ষরন, নিদ্রাহীনতা, খিঁচুনি,ক্ষুধামন্দা এবং মস্তিস্ক বিকৃতি দেখা যেতে পারে। ইয়াবা গ্রহণের ফলে ফুসফুস, কিডনি সমস্যা ছাড়াও অনিয়মিত এবং দ্রুতগতির হৃদস্পন্দনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত হারে ইয়াবা গ্রহণ হাইপারথার্মিয়া বা উচ্চ শারীরিক তাপমাত্রার কারণ হতে পারে। অভ্যস্ততার পর হঠাৎ ইয়াবার অভাবে সৃষ্টি হয় আত্মহত্যা প্রবণতা এবং হতাশা।
বিভিন্ন দেশে ইয়াবার ব্যবহার
বাংলাদেশ
বাংলাদেশে ইয়াবার আবির্ভাব ঘটে ১৯৯৭ সালে। [১] । পরবর্তীতে ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মায়ানমার থেকে ইয়াবা আসতে শুরু করে। [২] । এই ট্যাবলেটের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হবার কারণে উচ্চবিত্তদের মাঝেই এটি মূলত: বিস্তার লাভ করে।
মিয়ানমার
মিয়ানমারে ওয়া এবং কোকাং নামের আদিবাসী সম্প্রদায় মেথাম্ফেটামিন পিল বা ইয়াবা এর সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী। এই দুই গোষ্ঠীর লোকজন পূর্বে আফিম এবং হেরোইন উৎপাদন এর সাথে জড়িত ছিল। উল্লেখ্য যে মিয়ানমারে খুব সাধারণ ল্যাবরেটরিতেও মাত্র ২০ হংকং সেন্টের বিনিময়ে প্রতিটি ইয়াবা পিল তৈরি করা হতো। ২০০০ সালে থাইল্যান্ডের সরকার মিয়ানমার সরকারকে সীমান্তে যৌথ টহলের জন্য ব্যাপক চাপ দেয়। মূলত থাইল্যান্ড এবং মিয়ানমারের মধ্যে বিদ্যমান ২৪০০ কিলোমিটার সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা র চোরাচালান ব্যাপক চোরাচালান রোধের জন্য এই চাপ প্রয়োগ করা হয়।
[৩]
থাইল্যান্ড
থাই সরকার ১৯৭০ সালে ইয়াবা ট্যাবলেটকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সেসময় এটি সেদেশে পেট্রল পাম্পে বিক্রি হতো, এবং থাই ট্রাক চালকেরা জেগে থাকার জন্য এটা ব্যবহার করতো। ইয়াবাসেবী ট্রাক ও বাস চালকদের হাতে অনেক গুলো ভয়াবহ বাস দূর্ঘটনা ঘটেছে। থাই প্রধানমন্ত্রী থাকসিন শিনাওয়াত্রা ২০০৩ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। এর পর থেকে থাইল্যান্ডে এই মাদকের প্রকোপ কমে এসেছে।
প্রকারভেদ
ঢাকায় তিন ধরনের ইয়াবা পাওয়া যায়। প্রথম ধরনের ইয়াবা ট্যাবলেটের বেশির ভাগ সবুজ বা গোলাপি রঙের হয়। এর ঘ্রাণ অনেকটা বিস্কুটের মত হয়ে থাকে। দ্বিতীয় ধরনেন ইয়াবা ট্যাবলেট এর দাম তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু এটিও নেশাসৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।
তৃতীয়ধরনের ট্যাবলেটি আরও সস্তা এবং নেশায় আষক্তদের নিকট এটি ভেজাল বলে পরিচিত। ইয়াবা সেবনকারীদের মধ্যে প্রচলিত ধারণা অনুসারে, চিতা নামের পিলটি সবচেয়ে নিম্নমানের ইয়াবা পিল হিসেবে গণ্য হয়। এর গায়ে ক্ষুদ্র চিহ্ন থাকে। অন্যদিকে গোলাপ জল নামের ইয়াবা পিলকে উচ্চ মান পিল হিসেবে গণ্য করা হয়। ইয়াবা পিলের গায়ে ইংরেজি ডাব্লিউ ওয়াই লেখা থাকে।
ওয়াই লেখার ধরণ দীর্ঘ হলে এবং ইয়াবার রঙ পুরোপুরি গোলাপি হলে ধারণা করা হয় সেটি ইয়াবা হিসেবে ভাল মানের। [৪]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।