কিছু দেশ দেখার সুযোগ হয়েছে এই জীবনে। ভ্রমণ আমার ভাল লাগে্ তাই সবার মাঝে তা জানাতে চাই। সবার উপরে ভালোবাসি বাংলাদেশ । ধন্যবাদ
পশ্চিম আফ্রিকার আইভরি কোস্টের আবিদজান শহরে এক বছরের দিন রাত্রি যাপন করেছিলাম । দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে, সুদুর আটলান্টিক মহাসাগরের পাড়ে এই দেশে অনেক স্মৃতি, আনন্দ ও বেদনার সময় পার করেছি।
কত মানুষ, নানা শহর, গ্রাম - জনপদ দেখেছি তখন। বার বার মনে পরে সেসব কথা। আবিদজানকে আফ্রিকার প্যারিস বলে। আসলেই উপনিবেশিক ফরাসীরা তাদের প্রিয় রাজধানীর আদলেই এই শহরটাকে সাজিয়ে ছিল। আজস্র লেগুণের ছড়াছড়ি পুরো আবিদজান জুড়ে ।
বড় দুটো ব্রিজ শহরটাকে একসাথে যেন বেধে রেখেছে । ব্রিজ গুলোর নীচে শান্ত লেগুণের কাল পানি। সাগরের সাথে মিতালী থাকায় এই পানি লবনাক্ত। প্রচুর মাছ আছে এসব লেগুনে।
বুলেভারড সাঁ জারমেইন এর পাশে জোন ক্যাতার বা জোন চার এলাকায় কোন এক অলস দুপুরে আলোর বন্যা ছড়ানো নীল আকাশের সুরযের নিচে দাড়িয়ে লেগুন দেখলে কত কিছুই না দেখা যাবে।
দূরে ছোট্ট কালো রঙের ডিঙ্গিতে একলা বসে মাছ ধরছে কালো এক মানুষ। কালো পানি, ডিঙ্গি আর জেলে যেন একাকার হয়ে গেছে দূর নীলিমার সাথে। এ রকম মাছ ধরছে দূরে দূরে আরও অনেকে। পূর্ব পশ্চিমে বয়ে যাওয়া রাস্তার পাশেই লেগুন । এর মাঝে কোথাও কোথাও দোকান, রেস্টুরেন্ট, পেইন্টিং শপ কিংবা ফার্নিচারের দোকান।
পেশি বহুল সুঠাম দেহের কারিগরেরা একমনে উদম দেহে কাজ করে যাচ্ছে। ওরা এত কাজ করে তবুও অভাব কেন যেন ওদের পিছু ছাড়ে না ।
দূরে জেলে তার জাল একটু একটু করে গুটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে । আর দূরে দিগন্তের কাছে আবিদজান বন্দরের পাশে তেল শোধনাগারের বড় বড় অবয়ব। দূরে নোঙর করা জাহাজও মাঝে মাঝে দেখা যায়।
তপ্ত দুপুরে গাড়ি একটু কমই চলে এই রাস্তায়, তবে স্রোতের মত গাড়ির বহরও চলে এখান দিয়ে। রাস্তার দুপাশে ফুটপাথ নেই, রয়েছে মোটা বালির পাড়, গরমে বালিতে হাঁটতে গেলে পা দেবে যায়। গরিব মানুষগুলো এই বালিতেই খালি পায়ে দিব্যি হেঁটে যাচ্ছে। চেহারাতে কোন অভিযোগ নেই। বড় ভাল লাগে এই শানত মানুষগুলোকে।
তবে প্রতিবাদে দ্রগবার দেশের এই মানুষ গুলো হয়ে উঠে হিংস্র, অবলীলায় মেরে ফেলে শত মানুষ ।
এক সময় তাপ কমে আসে, আটলান্টিক থেকে তখন বয়ে আসে শীতল বাতাস। স্থানীয়রা তখন নিজ ডেরায় ফিরে যায় । যুবকেরা বারে গিয়ে জোরে আফ্রিকার গান ছেড়ে বিয়ারের বোতল খুলে বসে। আমরা এই সময় হাঁটতে বের হতাম আশেপাশের এলাকায়।
সন্ধ্যার সময় আজানও শোনা যেত প্রায় সময়। তখন আমাদের ঘরে ফেরার পালা। সারারাত আশেপাশের কোকো ফ্যাক্টরি গুলতে কাজ চলত । বড় বড় ট্রাকে করে কোকো এসে জমা হোতো অয়্যারহাউজে। সকালের বাতাস তাই ভারী হয়ে থাকতো কোকোর মিষ্টি মত ঘ্রানের কুয়াশাতে।
এই গন্ধ যেন এক জায়গাতে জমা হয়ে আছে । আবহাওয়া তাই গুমট মনে হতো ।
আবিদজানের বহু সকাল এভাবেই কেটে গেছে। পরে যখন সাগর পারের সাইদা বিচ এলাকাতে চলে এলাম তখন পরিবেশটা একটু অন্য রকম হল।
সলিব্রা ব্রুয়ারি মোড়
প্লাতুর ব্যাস্ত সড়ক
ইবরি লেগুন , অনেক গুলো পেনিন সুলা ও দ্বীপ নিয়ে আবিদজান শহর ।
দুইটা বড় এবং বিখ্যাত ব্রিজ দিয়ে সংযুক্ত। একটা ফেলিক্স হুপহুত বুইনি ব্রিজ অন্যটা চার্লস দ্য গল ব্রিজ । এই দুটো ব্রিজ প্লাতু এবং থ্রেসভিলের মাঝামাঝি । চার্লস দ্য গল ব্রিজ দিয়ে এয়ারপোর্ট এর সাথে শহরের সংযোগকারী ভেলেরি জিসকারড বুলেভারড যাওয়া যায় । এটা শহরের একটা অন্যতম সড়ক ।
১৯৫১ সালে শেষ হওয়া ভারিডি চ্যানেল আবিদজানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সী পোর্ট হিসেবে বিখ্যাত করেছে ।
আবিদজান শহর
আবিদজানে জীবন যাপনের জন্য শহরের নানা জায়গায় যেতে হতো । বেড়াতে যেতাম দু প্লাতু এলাকায় মাঝে মাঝে রিভেরাতেও যেতাম । থ্রেসভিলে যেতাম বাজার করতে, তাছাড়া কোকোডি, কমাছি, বাসাম ও কাছের বীচ এলাকায়। হোটেল নভতিল পারগোলা থেকে বের হয়ে ক্যাশ সেন্টারে আসতে পাঁচ মিনিট লাগতো ।
বিশাল ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর, প্রায় সব জিনিষ এখানে পাওয়া যেত । পশ দোকান দাম একটু বেশী । যুদ্ধের সময় এই শপই ছিল আমাদের ভরসা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।