দুর্নীতিমুক্ত দেশ চাই, আইনের শাসন চাই...
বিদেশে অবস্থান এবং একটি সুন্দর সম্মানজনক চাকুরি আমার মনে হয় অনেক তরুণেরই স্বপ্ন। অন্তত যারা দেশে সরকারি চাকুরি বা ভালো কিছু যোগাড় করতে পারেন না। তবে আমার ক্ষেত্রে আফ্রিকা যেতে দু’টি জিনিস কাজ করেছে... ০১. সম্মানজনকভাবে আক্ষরিক অর্থে অর্থ উপার্জন, ০২. অজানার প্রতি আসক্তি।
যাত্রার প্রথম দিনের কিছু ঘটনা বলছি... ২০০৬-এর মার্চের কোন এক সন্ধ্যায় আমি এবং আমার তিন সহযাত্রী এঙ্গোলার উদ্দেশ্যে জিয়ায় উপস্থিত হলাম। রাত ৯টার ফ্লাইটে দুবাই ৩ ঘন্টায় - সেখানে ৪ ঘন্টা অবস্থান - ভোরে দুবাই থেকে ৪ঘন্টার যাত্রায় ইথিওপিয়ার আদ্দিসআবাবায় - সেখানে দুই ঘন্টা অবস্থান - আদ্দিস থেকে আবার ৪ঘন্টার বিমানে এঙ্গোলার রাজধানী লুয়ান্ডায়।
মোটামুটি ১৫ ঘন্টার জার্নি। আমি মানসিকভাবে প্রচন্ড রোমাঞ্চিত। এর আগে ২০০৩-এ ব্যাংকক যাওয়াটাই একমাত্র বিমানযাত্রা।
কিন্তু জিয়ায় আমার সাথে থাকা তিনজনকে ইমিগ্রেশন সন্দেহবশত আটকে দিল। আমি একা হয়ে গেলাম।
রোমাঞ্চ আরো বেড়ে গেল। এত বড় একটা জার্নি একা একাই করতে হবে।
দুবাইয়ে রাত ১টায় ল্যান্ড করল এমিরেটস-এর বিমান। ভোর চারটায় ইথিওপিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা। এই ফাঁকে দেশে এবং এঙ্গোলায় আমার রিক্রুটিং কোম্পানীতে নূর ভাইকে ফোন করে দুবাই পৌঁছার খবরটা জানালাম।
হাতে এখনো ২ঘন্টা বাকি। এয়ারপোর্টের ভেতরে ঘোরাঘুরি করলাম। ডলার এক্সচেঞ্জ করে কিছু খাবার কিনলাম। সময়ের আগেই নির্দিষ্ট গেটে বোর্ডিং পাস জমা দিয়ে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের লাউঞ্জে উপস্থিত হলাম।
ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স যথাসময়ে ছাড়লো।
সৌভাগ্যবশত জানালার পাশে সিট পেয়ে আরাম করে ঘুম দিলাম। বিমান উড়ছে। বাইরে হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন অন্ধকার।
হঠাত ঘুম ভেঙ্গে গেল হই-হট্টগোলে। জেগে দেখি বিমানের অর্ধেকের বেশি সিট খালি।
একমাত্র এশিয়ান আমি। বাকিরা ইয়া লম্বা আফ্রিকান। পরিধান দেখে মুসলমান এবং ইথিওপিয়ান বলেই মনে হলো। এরা বিমানের ভেতরে প্রচন্ড হট্টগোল করছে। একজন আরেকজনকে ধাক্কা দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করছে।
জানালার পাশে বসা নিয়ে দুইজনের মধ্যে কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তিও হলো। একজন আমার দিকে কিছুক্ষণ নিবিড় দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে রইলো। ভয় পেয়ে গেলাম। এখানে আফ্রিকার এই মাঝ আকাশে আমার সব কিছু ছিনিয়ে নিলেও দেখার কেউ নেই। কিন্তু না ঘটনা ততদূর গেল না।
বিমানের ভেতরে একটা আফ্রিকান তালে মিউজিক বেজে উঠলো। বাজতে থাকলো। এই প্রথম আমার মনে হলো আমি আফ্রিকা যাচ্ছি। ছোটবেলায় যত এডভেঞ্চার বইতে আফ্রিকার বিষয়ে পড়েছি- বিশেষ করে তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে- মিউজিকের গুনে সব যেন চোখের সামনে ভাসতে লাগলো। ইথিওপিয়ানরা কেউ মিউজিকের তালে মাথা দোলাচ্ছে- কেউ চুপ করে বসে আছে- পাগলামি থেমেছে।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম... রৌদ্রজ্জ্বল প্রখর আকাশ... বহু নিচে মরুজনপদ- বালিয়াড়ি... কানে বাজছে আফ্রিকান সুর... (চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।