আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আফ্রিকার লোককাহিনী : বশ

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ অনেক অনেক দিন আগের কথা। আফ্রিকার ছোট একটি গাঁ। সে গাঁয়ে বাস করত অল্প বয়েসি এক দম্পতি ।

তাদের বিয়েটা কিন্তু বেশি দিন হয়নি। অথচ এরই মধ্যে বিবাহিত জীবনের সব আনন্দ যেন স্বামীটির মন থেকে মুছে গেছে। স্ত্রীর মুখ অসহ্য ঠেকে। ফসলের মাঠ থেকে দেরি করে ঘরে ফিরে। তার স্ত্রী অবশ্য তার স্বামীকে খুব ভালোবাসে।

কিন্তু, মেয়েটিও ধীরে ধীরে কেমন বিষন্ন বোধ করতে থাকে। স্বামীর খিটখিটে মেজাজে মেয়েটিও হতাশ । মেয়েটি নিরূপায় হয়ে গ্রামবুড়োর কাছে গেল। গ্রামবুড়োর অনেক বয়েস। থুত্থুরে।

অবশ্যি নানারকম তুকতাক জানে বুড়ো। এই যেমন কারও ওপর অপদেবতা ভর করছে ঝাড়ফুঁক করে সারিয়ে তোলে। এমন কী বশীকরণ মন্ত্রও জানে। তো, মেয়েটির মুখে সাংসারিক অশান্তির বিস্তারিত শুনে গ্রামবুড়ো গভীর দুঃখ পেল। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবতে লাগল: আজকাল কী হল।

মানুষ সুখি হচ্ছে না। অথচ আমাদের সময়ে আমরা কত সুখি ছিল। অথচ এই মেয়েটির বিয়ে দু’ বছরও হয়নি। বিয়ের সময় তো মনে হয়েছিল এরা সুখিই হবে। অথচ ... এসব ভেবে বুড়ো বিষন্ন হল।

তারপর বলল, তুমি তোমার স্বামীকে ছেড়ে দিতে চাও? তুমি তোমার স্বামীকে ছেড়ে দিতে চাইলে আমি ব্যবস্থা করতে পারি। তুমি আবার বিয়ে করতে পারবে। মেয়েটি চুপ করে থাকে। সত্যিই কি তুমি তাই চাও? গ্রামবুড়ো জানতে চাইল। মেয়েটি কান্নাভেজা কন্ঠে বলল, না, আমি আমার স্বামীকে ছেড়ে দিতে চাই না।

তাহলে? আমি চাই আমার স্বামী আমায় ভালোবাসুক। বুড়ো গভীর চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। এখন কি করা যায়। একবার পুরুষের মন উঠে গেলে তা ফের থিতু করানো তো মুশকিল। এই মেয়েটির স্বামী কি আবার একে ভালোবাসবে? এ সমস্ত ভেবে গ্রামবুড়ো বলল, দেখি কী করা যায়।

মনে হচ্ছে তোমার স্বামীকে বশ করতে হবে। তার জন্য চাই বশীকরণ মন্ত্রের সব উপকরণ । যা করার জলদি কর। এসব আমার আর ভাল লাগছে না। বলে মেয়েটি ডুকরে কেঁদে উঠল।

বুড়ো বলল, কিন্তু, বশীকরণ মন্ত্রের জন্য আমার যে একটা জিনিস চাই । কি জিনিস? বলছি। আমি বুড়ো হয়েছি। আমার পক্ষে গ্রামের বাইরে যেয়ে জিনিসটা যোগার করা সম্ভব না। তুমি কি জিনিসটা আমাকে এনে দিতে পারবে? কি জিনিস বল ? তুমি যা চাও তাই এনে দেব বুড়ো।

যে ভাবেই হোক। মেয়েটি চোখ মুছতে মুছতে বলল। হুমম। আমার চাই সিংহের গোঁফ। মৃত সিংহের গোঁফ হলে চলবে না।

গোঁফ জীবন্ত সিংহের হতে হবে। বিনা মেঘে বজ্রপাত হল। সেই প্রচন্ড শব্দে মেয়েটি ভয়ানক চমকে উঠল। জীবন্ত সিংহের গোঁফ। কিন্তু তা কি করে সম্ভব? তারপরও মেয়েটি বলল, ঠিক আছে।

এনে দেব। গ্রামটির অদূরেই নদী। সে নদীতে একটি সিংহ রোজ পানি খেতে আসে। মেয়েটি পরের দিন মাংসের বড় একটি টুকরো নিয়ে নদীর ধারে গেল। মাংসের টুকরো নদীর ধারে রেখে গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল।

এরপর ঘন্টার পর ঘন্টা গেল। সিংহ তো এল না। মেয়েটি ধৈর্য্য হারাল না। এক সময় একটা সিংহ এল। মাংস খেল।

মাংস খাওয়া শেষ হলে কেশরশুদ্ধ বড় মাথা ঘুরিয়ে একবার পিছন দিকে চাইল। মনে হল মেয়েটির উপস্থিতি টের পেয়েছে। তারপর চোখের পলকে পিছনের জঙ্গলে অদৃশ্য হয়ে গেল। পরের দিন। মেয়েটি মাংসের বড় একটি টুকরো নিয়ে নদীর পাড়ে এল।

আজ অবশ্য সিংহ জলদি জলদিই এল। মাংস খেল। তারপর মেয়েটির দিকে একবার তাকিয়ে হেলেদুলে চলে গেল। এভাবে বেশ কিছু দিন কাটল। প্রতিদিনই মেয়েটি অল্প অল্প করে সিংহের কাছাকাছি আসতে থাকে।

চার সপ্তাহ পর। নদীর ধারে সিংহ মাংস খাচ্ছিল। মেয়েটি সাহস করে সিংহের কাছে এসে বসল। মেয়েটির হাত ভীষণই কাঁপছিল। তারপরও হাত বাড়িয়ে সিংহের মুখ থেকে একটা গোঁফ তুলে নিল।

তারপর সিংহ চলে না যাওয়া পর্যন্ত স্তব্দ হয়ে বসে থাকল। সিংহ চলে গেলে মেয়েটি দৌড়াতে দৌড়াতে গ্রামবুড়োর কাছে গেল। সিংহের গোঁফ দেখিয়ে চেঁচিয়ে বলল, এই যে, এই যে! বুড়ো সব শুনল। তারপর হাসল। বলল, তোমার স্বামীকে ফিরিয়ে আনার জন্য বশীকরণ মন্ত্রের আর দরকার নেই।

তুমি এতই সাহসী যে তুমি জীবন্ত সিংহের মুখ থেকে গোঁফ তুলে এনেছ। তুমি যা করেছ সে জন্য প্রচন্ড সাহস ও প্রখর বুদ্ধির দরকার। তুমি যে রকম ধৈর্য্য দেখিয়েছ সেরকম ধৈর্য্য তুমি তোমার স্বামীর সঙ্গেও দেখাও না কেন ? কিন্তু ... কিন্তু বশীকরণমন্ত্রের কি হবে? বশীকরণ মন্ত্র কি কাজ করবে না? মেয়েটি মরিয়া হয়ে জিগ্যেস করল। গ্রামবুড়ো বলল, করবে। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।

এরচে প্রতিদিন তুমি তোমার স্বামীকে দেখাও যে তুমি তাকে ভালোবাস। সেই সঙ্গে তুমি তোমার স্বামীর সমস্যাগুলি বোঝার চেষ্টা কর। সে যেন তোমার কাছে এলে স্বস্তি পায়। সে যেন তোমাকে চায়। তুমি তোমার স্বামীকে বদলে যাওয়ার জন্য সময় দাও।

তারপর দেখ কি হয়। মেয়েটি আশ্বস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসে। বুড়োর কথামতো কাজ করতে থাকে। ধীরে ধীরে মেয়েটির স্বামীকে গ্রামের অন্যান্য পুরুষদের সঙ্গে ফসলের মাঠ থেকে ফিরতে দেখা গেল। মনে হল আজকাল সে তার বউকে দেখে খুশি।

বছরখানেকের মধ্যে গ্রামের লোকেরা ওদের সুখি দেখতে পেল ... অনুবাদ উৎস: http://africa.mrdonn.org/lion.html ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৬ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।