গনজাগরনের মাধ্যেমে পরিবর্তন সম্ভব....মানুষের চিন্তার পরিবর্তন করাটা জরুরি ....বুদ্ধিবৃত্তিক পুনরজাগরনে বিশ্বাসী দামেস্কের প্রাণকেন্দ্রে লড়াই তীব্রতর হয়েছে। সিরীয় নেতা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অবস্থান সম্পর্কে রহস্য ঘনীভূত হয়েছে। ভয়াবহ বোমা হামলার পর সিরীয় নেতাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। পাওয়া যায়নি কোনো বিবৃতি। ভয়াবহ বোমা হামলায় প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ আসাদের চার শীর্ষ ব্যক্তিত্বের প্রাণহানির একদিন পর গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সরকার ও বিদ্রোহী বাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াই চলে।
সরকারি সেনারা কাবুন ও বারজেহতে গোলাবর্ষণ করেই চলেছে। দামেস্কের আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়। দামেস্কে লড়াইয়ের গতকাল ছিল পঞ্চম দিন। দামেস্কে বসবাসরত বহু ফিলিস্তিনি বিদ্রোহী ফ্রি সিরিয়ান আর্মি যোদ্ধাদের সঙ্গে অস্ত্রহাতে যোগ দিয়েছে। ১৯৪৮ সালে ইসরাইলের সৃষ্টির পর থেকে সিরিয়ায় কমপক্ষে ৫ লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করে আসছে।
তারা এখন আসাদবিরোধী লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে।
এদিকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে অবশ্যই সরে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। বৃহস্পতিবার আফগানিস্তান সফরকালে সাংবাদিকদের উদ্দেশে ক্যামেরন এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আগেই দামেস্ককে সরকারের পরিবর্তন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি পরিষ্কারভাবে এই বার্তাই প্রেসিডেন্ট বাশারকে জানিয়ে দিতে চাই, আপনার যাওয়ার সময় এখনই।
এখনই সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়। কিন্তু যদি তা না হয়, এ অত্যন্ত পরিষ্কার যে, গৃহযুদ্ধ অত্যাসন্ন। ’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্যের প্রতি আহ্বান, পরিষ্কার ও কঠোর ভাষায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের এখনই সময়। ’ বুধবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ দফতরে এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী দাউদ রাজিহাসহ প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শ্যালক ও উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসেফ শওকত নিহত হয়েছেন। ‘সন্ত্রাসী বোমা’ হামলায় তারা নিহত হন বলে জানিয়েছে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।
গুরুতর আহত হয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা প্রধানসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী ফ্রি সিরিয়ান আর্মি (এফএসএ) এবং একটি জিহাদি গ্রুপ ‘লর্ড অব দ্য মার্টার্স ব্রিগেড’ হামলার দায় স্বীকার করেছে। দামেস্কের রাওডা এলাকায় ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ ভবনের ওই দফতরে রয়েছে দেশের প্রধান একটি গোয়েন্দা শাখা। মন্ত্রী ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বৈঠক চলাকালে সেখানে হামলা হয়। ওই হামলার একদিন পরই আফগানিস্তান সফরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সিরিয়া সম্পর্কে এই মন্তব্য করলেন।
সিরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল দাউদ রাজিহাসহ চার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হওয়ার পর রাশিয়া পশ্চিমা দেশগুলোকে সন্ত্রাসে মদত দেয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছে। সেই সঙ্গে সিরিয়ার সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেয়ার জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছে। রাশিয়ার রিয়া নভোস্তি বার্তা সংস্থাকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, পশ্চিমারা সিরিয়ার বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে মদত দিচ্ছে। তিনি বলেন, সিরিয়ার বিরোধীদের সংবরণ হওয়ার কথা না বলে বরং আমাদের কয়েকটি বন্ধুরাষ্ট্র তাদের উসকে দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সিরিয়ার সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেয়ার অর্থই হচ্ছে একটা চূড়ান্ত পথ বেছে নেয়া, যেখান থেকে তাদের পক্ষে আর ফিরে আসা সম্ভব নয়।
যখন সিরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি পশ্চিমা প্রস্তাব পাসের চেষ্টা চলছে, তখন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বললেন। আজই নিরাপত্তা পরিষদে এ প্রস্তাব তোলা হবে বলে কথা রয়েছে। তবে রাশিয়া ও চীন বলেছে, তারা এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো দেবে। ব্রিটেনের আনা এ প্রস্তাবটি পাস হলে জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেয়া যাবে। এছাড়া দেশটির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক থেকে শুরু করে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা পর্যন্ত আরোপ করা সম্ভব হবে।
কারণ জাতিসংঘ সনদের সাত অনুচ্ছেদের আওতায় এ প্রস্তাব আনা হচ্ছে। এ অনুচ্ছেদের আওতায় কোনো প্রস্তাব পাস করা হলে সংশ্লিষ্ট দেশের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেয়া যায়। এদিকে দামেস্কে সন্ত্রাসী হামলায় দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ শীর্ষস্থানীয় চার কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানিয়েছে। সেই সঙ্গে সিরিয়াবাসীর প্রতি গভীর সমবেদনা ও সান্ত্বনা জানিয়েছে তেহরান।
বিবৃতিতে তেহরান বলেছে, ইসলামী ইরান যে কোনো ধরনের সহিংসতা ও ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানায় এবং একই সঙ্গে বিশ্বাস করে, সিরিয়ায় চলমান সঙ্কটের একমাত্র সমাধান হচ্ছে সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া। কারণ দেশটির প্রতিটি অস্থিতিশীল ঘটনা এ অঞ্চলে সঙ্কট ও গোলযোগ উসকে দিতে পারে এবং তাতে সহিংসতা ও অস্থিরতা বেড়ে যাবে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, সিরিয়ায় বিদেশি হস্তক্ষেপ চলছে এবং বিদ্রোহীদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে সিরিয়ার সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সন্ত্রাসী কাজের প্রতি কয়েকটি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সমর্থন রয়েছে, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে সিরিয়ার স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি ধ্বংস করা। এ ধরনের তত্পরতা যত শিগগির সম্ভব বন্ধ করতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।