https://www.facebook.com/chairmanzerozero7 ঐ ছ্যাড়া উঠ, আর কতো ঘুমাবি?
ঐ পোলা উঠছ না কেন?
ভোটকার ডাকে রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে চোখ কচঁলাতে কচঁলাতে উঠে বসে বল্টু। উঠেই ভোটকার পিঠে এক কিল বসিয়ে দেয়।
হালা তোরে না কইছি আমারে ঘুমের মইদ্যে ডাক দিবিনা? হালারপুত আমার খোয়াবটাই নষ্ট কইরা দিছোস। কি সুন্দর হপনের মইদ্যে পোলাও কোরমা দিয়া খাইতাছিলাম।
উহ আইছে আরেকজন পোলাও কোরমা ওয়ালা !পেছন থেকে খেকিয়ে উঠে বদু মিয়া।
কাম কাজের খবর নাই খালি খাওন আর খাওন। জলদি গিয়া পেশাব পায়খানা সাইরা কামে যা। আর সাবধান মুখ ধুইবি না কইলাম!ফুলবাবু সাজনের কাম নাই।
বদু মিয়ার ১৪ গোষ্ঠি উদ্ধার করতে করতে ভোটকা আর বল্টু বের হয়।
বল্টুর বুঝ হওয়ার পর থেকেই বাপ মা নেই।
বদু মিয়ার কাছেই মানুষ। মানুষ বলতে শুধু ২-৪ টা খেয়ে পড়ে বাচাঁ আরকি। বদুর আন্ডারে ১২ জন ছেলে ভিক্ষে করে। সারাদিন যা রোজগার হয় এর ৩ ভাগের ২ ভাগ বদুর আর ১ ভাগ নিজের। ভোটকা হলো বল্টুর সাগরেদ।
বল্টুর পা না থাকায় ভোটকা সকালে বেলা বেয়ারিং লাগানো ঠেলা গাড়িতে করে সকালে বল্টুকে নিয়ে বের হয় আর সারাদিন ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করে। ভোটকার আসল নাম জসিম হলেও একটু বেশি খায় বলে সবাই ডাকে ভোটকা।
আজকে বল্টু আর ভোটকার গন্তব্য মহাখালি। একেকদিন একেক জায়গায় গেলে টাকা পয়সা ভালো পাওয়া যায়। এক জায়গাই বেশিদিন ভিক্ষা করলে লোকে চিনে ফেল।
তখন আর বেশি ভিক্ষা পাওয়া যায়না।
ঠেলাগাড়ি ঠেলতে ঠেলতে ভোটকা জিজ্ঞেস করে,
কিরে কি হপনে দেখছোস রে?
আর কইছ না বেডা ,পোলাও ,গোস্ত ,আইপল,কমলা কতোকিছু যে দেখছি। খালি খাওন আর খাওন। বলেই চওড়া হাসি হাসে বল্টু।
ভোটকার জিভে জল চলে আসে।
আমারে দেহস নাই?
আমি আছিলাম না তোর লগে?উৎসুক ভাবে ভোটকা জিজ্ঞেস করে।
নাহ! তুই আছিলি না।
আইচ্ছা হুন ভোটকা ল আইজকা ২ জনে মিল্লা পোলাও খামু গোস্ত দিয়া।
উহহ!! পোলাও খাওনের টেকা পাবি কই? বুইড়া বদু জানলে তোর নলি তো ভাঙবোই আমার টাও হাতে ধরায়া দিবো,পরে তোর ঠেলা ঠেলবো কোন নানায়?
নিমিষেই মুখ কালো হয়ে যায় বল্টুর। রাগে নিজেই ২ হাত দিয়ে জোরে বেয়ারিং ঘোরাতে থেকে।
নাহ ! আজ সারাদিন ভিক্ষার পরেও মাত্র ১৮৭ টাকা হয়েছে। অন্যদিন কম করে হলেও ৪০০ টাকা হয়। অন্তত বদির চোখ ফাকিঁ দিয়ে দুজনে ২ টা কলা আর মিষ্টি কেক খেতে পারে। আজকে বোধ হয় আর খাওয়া হলোনা।
লরে বল্টু যাইগা,আমার খিদা লাগছে
হ বদুঁ বুইড়ারে গিয়া কচু দিবা তাইলে? বল্টু হিসিয়ে উঠে।
আর রাইতের খাওন পাইবা মনে করছো?শালায় আস্তা একটা খচ্চর,পত্তেকদিন ৫০০ টেকা লইয়া যাওন লাগবো হের লাইগ্যা। মানুষ যেন টেকা আমাগো লাইগ্যা লইয়া বইয়া রইছে।
ঐ ভোটকা হালা আন্ধা দেহছ না সিগনাল পড়ছে,হালা ঠেলা দে নাইলে গাড়ি ছাইড়া দিবো।
জ্যামের মাঝে গিয়ে গাড়ির জানালায় ঠুকে হাত বাড়ায় বল্টু
ঐ ফকিন্নির পুত হাত সরা,গেলাস ময়লা করছ কেন?গাড়ির ড্রাইভার চেচাঁয়।
রাগ করেন কেন ডাইবর সাব? দেন না ২ ডা টেকা?
যাহ মাফ কর,গাড়িত কেউ নাই
আফনেই দেন না?
কইলাম না যা! দিমু একটা ঠুয়া
লাগতো না টেহা,খাইস্টার টেহা লই না,বলেই বেয়ারিং ঠেলাদিয়ে বল্টুর গড়ি নিয়ে পালায় ভোটকা আর দুজনে হেসে গড়িয়ে পড়ে ঐদিকে ড্রাইভারের খিস্তি শোনা যায়।
সবুজ লাইট জ্বলতেই ওরা তাড়া লাগায় রাস্তা পার হতে,বল্টুও হাত লাগায়। রাস্তা পার হয়েছি কি হয়নি এমন সময় ধাতব কর্কশ একটা শব্দে পিছনে ফেরে দুজন,ঠেলা টা সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ভোটকাও লাফ দেয়। ঠেলা থেকে অল্প দূরে এসে বাইকটি থামে। আরোহী ছেলেটি তখনো বাইকের নিচে চাপা পড়ে আছে। সবাই ছুটে আসছে।
তবে যে পরিমাণ রক্ত রাস্তায় পড়ে আছে বোঝাই যায় বেচেঁ নেই। ভোটকা হাত পা ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে দাড়ায়,গিয়ে বল্টুকেও টেনে তুলে। ওদের দিকে কারো নজর নেই। সবাই বাইকের ছেলেটিকে নিয়ে ব্যাস্ত।
বল্টু হঠাৎ হাত দিয়ে ইশারা করে ভোটকা কে।
ভোটকা না বুঝে এপাশ ওপাশ তাকায়,বোঝে উঠতে পারছেনা কি চাইছে বল্টু! হঠাৎ চোখ পড়ে বাইকের ছেলেটির মানিব্যাগ ছিটকে এসে পড়েছে ভোটকার পায়ের পাশে। মানিব্যাগটি কুড়িয়ে নিয়েই ভোটকা বল্টুর ঠেলা নিয়ে ঐখান থেকে বেরিয়ে আসে।
নিজের ছেড়া গেন্জি দিয়ে মানিব্যাগের রক্ত মুছে বল্টু।
দেখ রে জইস্যা ভিতরে ৫০০ টেহার নোট। আইজকা পোলাও খামুরে,বল্টুর চোখে মুখে হাসির ঝিলিক।
কিন্তু ভোটকা তখনো ঘোরের মধ্যে।
নারে বল্টু আল্লায় গুনা দিবো,মরা বেডার টাকায় খাইলে।
আরে ধূর ঐ বেডা তো মরছে,আরেকটু অইলে আমাগোরে ও মারতো। এই টাকায় আমাগো হক আছে।
ভোটকা কি বুঝে কে জানে সেও বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়ায়।
২ বন্ধু রাস্তার পাশের ভাতের হোটেলের দিকে পা বাড়ায়। আজকে ওদের খুশির দিন,আজ ২ জনে পেট পুরে পোলাও খাবে,হয়তো ঐ খাবারে রক্তের নোনতা স্বাদ থাকতে পারে,তবুও আজ ওদের ক্ষুধা নিবৃত্তির দিন।
উৎসর্গঃ প্রিয় ব্লগার নোমান নমি, নিশাচর ভবঘুরে।
আর ৯ টা বানান ভূল ধরে দেওয়ার জন্য আফুনি কে থ্যান্কস,যদিও সবগুলো বানান এখনো ঠিক করা হয়নি আলসেমির কারনে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।