আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বল্টু ভাইয়ের একদিন



বল্টু ভাইয়ের একদিন এজি মাহমুদ ১. বল্টু ভাই উদাস হয়ে সিগারেট টানছেন। বল্টু ভাইয়ের এই উদাস চোখে সিগারেট টানার অর্থ হচ্ছে তিনি খুব টেনশনে আছেন। অথচ তার সিগারেট টানার ভঙ্গি দেখে কিছ্ইু বোঝা যায় না। আমি বল্টু ভাইকে গিয়ে বললাম, বল্টু ভাই তোমাকে মতি টি স্টলের মতি মিয়া খুঁজে বেড়াচ্ছে। বল্টু ভাই সিগারেটের একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে দিয়ে বললো, কেন আমাকে খুঁজবে কেন ? আমি কি ওর চায়ের দোকানের ম্যানেজার নাকি ? আমি নিরীহ গলায় বললাম, তুমি নাকি মতি মিয়ার দোকানে তিনশ বত্রিশ টাকা বাকি রেখেছ? বল্টু ভাই কথার জবাব দিলেন না।

খানিক চুপ করে থেকে বললেন, তুই পাশের পাড়ার ছাতিওয়ালা বাড়িটা চিনিস? তুমি মিলি আপুদের বাড়ির কথা বলছো ? আমি বললাম। বল্টু ভাই বিরক্ত হয়ে বললেন, আমি কারও কথা কি তোকে বলেছি ? নাকি বাড়িটা চিনিস কি-না জিজ্ঞাসা করেছি ? আমি মাথা নেড়ে দিয়ে বললাম, চিনি। বল্টু ভাই সিগারেটের ফিল্টার পায়ের নিচে পিষে বললেন, তাহলে চল। আমি অবাক হয়ে বলালাম, কোথায় ? বল্টু ভাই কথার জবাব না দিয়ে হাটা ধরলেন। ২. আমি আর বল্টু ভাই বসে আছি ছাতিওয়ালা বাড়ির বাড়িওয়ালার বাসার ড্রইংরুমে।

ছিমছাম করে সাজানো ড্রইংরুম। এমন ড্রইংরুমে সারাদিন বসে থাকতে ইচ্ছা করে। তবে যার ড্রইংরুম তিনি রাজি হবেন বলে মনে হচ্ছে না। কারণ বল্টুভাই ড্রইংরুমে থাকলে সিগারেটের ফিল্টার আর বাদামের খোসা ফেলে ড্রইংরুমকে পাঁচ মিনিটে সিটি কর্পোরেশনের অফিসরুম বানিয়ে ফেলতে পারেন। ড্রইংরুমে আমরা অপেক্ষা করছি বাড়িওয়ালা সাহেবের জন্য।

তিনি সম্ভবত এখন বাথরুমে অবস্থান নিয়েছেন। কাজের মেয়েটা আমাদের এখানে বসতে দিয়ে ভেতরে চলে গেছে। বাড়ি ভাড়া নেব বলে ভাড়াটিয়া সেজে ঢুকে পড়েছি। বল্টু ভাইদের নিজেদের বাড়ি আছে। তার বাড়ি ভাড়া নেবার প্রশ্নই উঠে না।

বল্টু ভাইয়ের আসল ইচ্ছা হলো মিলি আপাকে একনজর দেখা। সম্ভব হলে একটা প্রেমপত্র ধরিয়ে দেয়া। এক্ষেত্রে বল্টু ভাই অবশ্য আমাকে পোস্টম্যানের পদবী বুঝিয়ে দিয়েছেন। মিলি আপার সাথে আগে বল্টু ভাইয়ের বাহিরেই দেখা হতো। কিন্তু সামনে এইচএসসি পরীক্ষা বলে মিলি আপা বাড়ির বাহিরে যেতে পারছেন না।

মিলি আপার বাড়িওয়ালা বাবা মিলি আপাকে মোবাইলও ব্যাবহার করতে দেন না। বল্টু ভাই এ বিরহ ঘটিত কারনেই দিনরাত উদাসী হয়ে সিগারেট খেয়ে বেড়াচ্ছেন। বল্টু ভাই সোফায় বসছেন না। পুরো রুম জুড়ে ইতঃস্তত হাটাহাটি করে বেড়াচ্ছেন। আর মাঝেমাঝে পর্দার অন্তরালে অন্দর মহলের দিকে দৃষ্টিশক্তি জুম করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

দশ মিনিট বসে থাকার পর বাড়িওয়ালা এলেন। বাড়িওয়ালাকে দেখে বল্টু ভাই দাঁড়ানো অবস্থা থেকে ঝট করে সোফায় বসে গেলেন। পর মূহুর্তেই আবার দাঁিড়য়ে হাত তুলে খানদানী ভঙ্গিতে সালাম দিয়ে বসলেন। বাড়িওয়ালার বিশালাকৃতির বাড়ির মতো বাড়িওয়ালার শরীরও সেইরকম-মাশাল্লাহ! নাকের নিচে ঝোপের মতো গোঁফ। তার সামনে বল্টু ভাইকে ছোটখাট বামনের মতো লাগছে।

সালাম দিয়ে বল্টু ভাই বললেন, স্যার আমরা বাড়ি ভাড়া নিতে এসেছি। বাড়িওয়ালা ধমকের সুরে বললেন, এ্যাই ছেলে, তুমি আমাকে স্যার বলছো কেন? আমি কি তোমাকে প্রাইভেট পড়াই? বল্টু ভাই মিনমিনে গলায় বললেন, জ্বি না। বাড়িওয়ালা আবারো ধমক দিয়ে আমাকে দেখিয়ে বললেন, তোমার সঙ্গে এটা কে? তোমরা ব্যাচেলর নাকি ? আমি ব্যাচেলর ভাড়া দেই না। বল্টু ভাই বিনীত গলায় বললেন, ও আমার আপন ছোট ভাই । আর আমরা ব্যাচেলর নই।

আমাদের বাসা পছন্দ হলে আব্বা-আম্মা এসে অ্যাডভান্স দিয়ে যাবেন। চেহারাতেতো একদম মিল নাই। আচ্ছা যাকগে...চল তোমাদের রুম দেখাই; বলে বাড়িওয়ালা চাবি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লেন। কিন্তু রুম দেখে আমরা কি করবো ? বের হবার সময় বাড়িওয়ালার পেছনে বল্টু ভাই থাকলেন। আর আমি থাকলাম বল্টু ভাইয়ের পেছনে।

রুম থেকে বের হয়ে বাড়িওয়ালা সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে শুরু করতেই বল্টু ভাই সামনে থেকে তার বাম হাতের আঙুল দিয়ে আমার পেটের মধ্যে একটা গুঁতো মেরে বসলেন। সাথে সাথে বুঝলাম সময় হয়েছে। এদিকে বল্টু ভাইয়ের বাড়িওয়ালা স্যার বল্টু ভাইকে কি সব বিষয়ে যেন জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছেন। আমার অতকিছু শোনার সময় নেই। বাড়িওয়ালার অগোচরে বল্টু ভাইয়ের পেছন থেকে সরে অন্দরমহলে ঢুকে পড়লাম।

ঢুকেই দেখেতে পেলাম মিলি আপা একরুমে বসে একমনে কি যেন পড়ে যাচ্ছেন। আমি আর তার কাছাকাছি না গিয়ে দূর থেকে বল্টু ভাইয়ের পত্র খানি মিলি আপার দিকে ছুড়ে মারলাম। ছুঁড়ে দিয়েই আর দেরি করলাম না। ছুটে এসে বল্টু ভাইয়ের পেছনে দাড়িয়ে গেলাম। এর মাঝে কি কারনে কে জানে মিলি আপা তার গলার সাইরেন বাজিয়ে দিলেন।

সাইরেন শুনে বাড়িওয়ালা ঘুরে দাড়িয়ে আমাদের দুজনকেই দেখতে পেলেন। তাই আমাদেরকে বিন্দুমাত্র সন্দেহ না করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে বাসায় ঢুকে পড়লেন। বাড়িওয়ালা বাসায় ঢোকা মাত্র আমরাও সিঁড়ি দিয়ে লাফ মেরে নিচে নামতে শুরু করলাম। বল্টু ভাইতো পারলে সিঁড়ি থেকেই উড়ে চলে আসেন। বাড়ি থেকে বের হয়ে দুজনে ভদ্রলোকের মতো একটা রিকশায় চেপে বসলাম।

রিকশায় উঠেই বল্টু ভাই তার বিখ্যাত উদাসী ভাব নিয়ে একটা সিগারেট ধরালেন। সিগারেটে কয়েক টান দিয়ে বললেন, এমনটা হতে পারে ভাবিনি। আমি বল্টু ভাইকে বললাম, মিলি আপা নেইতো কি হয়েছে ? তোমাদের পাশের বাড়ির তিন তলায় লিলি নামে একটা মেয়ে আছে না ? আমার কথা শুনে বল্টু ভাইয়ের মুখটা কেমন যেন হাসি হাসি হয়ে গেল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.