আমি অতি সাধারন,কিন্তু মনে হয় কিছু অসাধারণত্ব আমার মাঝে বিদ্যমান আছে। আমি সেটাকে বাস্তব রূপ দেয়ার চেষ্টায় এই প্রচেষ্টা। আমাদের বল্টু,দারুন স্মার্ট। চেহারা এক খান ,মাইয়ারা তো দেইখা হুমড়ি খায়। যেন লাখে একটা।
লেখাপড়ায় তেমন একটা ভালো না,তবে একটা মোটামুটি রেজাল্ট নিয়ে সে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ফেলেছে। বাবার টাকা করি একেবারে ফেলনা না,তাই প্রাইভেট একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স এ ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করলো। কিছু হউক বা না হউক একটা সার্টিফিকেট তো লাগবে। দেখতে দেখেত একটা ভালো রেজাল্ট নিয়ে আমাদের বল্টু অনার্স ও পাশ করে ফেলল। ওয়াও,হুক্কা হুয়া কেয়া মজা !সার্টিফিকেট মিল গায়া…
তখন ২০০৯ সাল,হঠাৎ ইংল্যান্ড এর রানীর মাথা কেন জানি খারাপ হয়ে গেল,নাকি মনে হয় দয়া উদ্রেক হল।
বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশের ছাত্রদের এক মহা সুজুগ দিল,ইংল্যান্ড এ এসে পড়াশোনা করার। যোগ্যতা?ও ছাত্র হলেই চলবে। এ দেখে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী নড়েচড়ে বসলো। আর বাপের একাউন্টে কিছু জমানো টাকা দেখে আমাদের বল্টু ভাই-ও তাদের সাথে যোগাযোগ করে ইংল্যান্ড এ আসার সমস্ত পথ ক্লিয়ার করে ফেললো। আহ কি সুখ!চোখে এখন শুধু ইংল্যান্ড এর রঙ্গিন ছবি আর সাদা চামড়ার উড়াল পঙ্খী।
ভাবতে ভাবতে কাঙ্খিত সেই দিনটি চলে আসলো। বিমানে উঠার আগে সেই ব্যবসায়ীদের একজন এসে বলল,ভয় পেয়ো না,তুমি তো এমনি স্মার্ট,সেখানেও এই স্মার্টনেস বজায় রাখবে,ব্রিটিশ এয়ারপোর্টে যা যা জিজ্ঞাসা করবে তা স্মার্টলি করে ফেলবে,স্মার্টলি উত্তর দিয়ে দিবে,দেখেবে সব সুন্দরভাবে হয়ে গেছে। বল্টু ভাই আমাদের খুব স্মার্টলি বলল,ও ভাই চিন্তা করবেন না,এসব ব্যপার-ই না। আমি ইংলিশ মোটামুটি খারাপ বলি না,so don’t worry.যা হউক এই বলে সে বিদায় নিয়ে ইংল্যান্ড এর উদ্দেশে বিমানে উঠে পড়লো। ১০ ঘণ্টার বিমানের বোরিং যাত্রা শেষে অবশেষে বল্টু ভাই হিত্রো এয়ারপোর্টে এসে নামলো।
এবার ইমিগ্রেশন পাস করার মুহূর্তে বল্টু ভাইকে সবার মত একটা ছোটখাটো ইন্টারভিউ দিতে হল।
প্রথম প্রশ্ন:show your passport.
বল্টু ভাই ভীষণ স্মার্ট,পাসপোর্ট শব্দটা বুঝে নাই তো কি হয়েছে শো শব্দটা তো বুঝেছেন,কোনরকম দেরি না করে,কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে,মেঝের মধ্যে চিত হয়ে শুয়ে পরলেন। বল্টু ভাই বেজায় খুশি,স্মার্টলি কাজটা করতে পেরে। এদিকে তো ইমিগ্রেশন অফিসার তো পুরা থ,কিছুটা রেগে,hey man,what the fuck you doing here?এ কথাটা আমাদের বল্টু ভাই না বুঝলেও পাশের এক বাঙ্গালী বুঝে বল্টু ভাইকে বল্লো ভাই কি করেন,আপনাকে পাসপোর্ট দেখাইতে বলতেছে,তা দেখান। বল্টু ভাই কিছুটা লজ্জা পেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পাসপোর্ট শো করলো।
ইমিগ্রেশন অফিসার ও বল্টু ভাইএর নার্ভারসনেস বুঝে আর কোন প্রশ্ন না করে ছেড়ে দিল। লম্বা জার্নি,নতুন পরিবেশ,হতেই পারে এই বলে সান্ত্বনা দিল বল্টু ভাইকে নিতে আসা কলেজের এক প্রতিনিধি।
যা হউক পরের দিন স্বপ্নের কলেজে যাবার জন্য সকাল এ ঘুম থেকে উঠেই গোসল করে নাস্তা করে বের হয়ে গেল। কলেজের ওই প্রতিনিধির বাসায়-ই ছিল। সেই নিয়ে গেল।
বেলা ১০ টায় যখন স্বপ্নের কলেজে বল্টু ভাই পোঁছাল বল্টু ভাই তো পুরাই আসমান থেকে পরছে। একটা দোকান ঘরের ভিতরে স্বপ্নের কলেজ,উচ্চ শিক্ষার্থে সিঁড়ি বেয়েই যতটুকু উচ্চে উঠা শিক্ষাটা আপাতত ফ্রিজে। ছাত্র তেমন নাই,দুএকজন লোক তাকে enrollment letter,bank letter,gp letter ইত্যাদি কয়েকটা কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,এগুলু হাতে রাখবেন,বাকি কাজ করেন,যব করতে থাকেন। ক্লাশ শুরু হলে আমরা খবর দিয়ে জানাবো। এর পর থেকে স্বপ্নের সেই কলেজকে সে স্বপ্নের মাঝে কয়েকবার দেখেছে।
ঘুমের আড়মোড়া ভাঙতেই দেখে জবের সময় হয়ে গেছে।
এভাবে দিন গেল,সপ্তাহ গেল,মাস গেল হয়ে গেল এক বছর। আমাদের বল্টু ভাই এখন ইংলিশ টুকিটাকি দু’চারটা বলতে পারেন। এ দেশের ভাবে চলতে চেষ্টা করতে পারেন। এবার সময় হল একবার দেশে যাবার।
স্বপ্নের কলেজে বাস্তবে ক্লাশ না করলেও,বাস্তবে টিউশন ফি দিতে হত। তাই মাঝে মাঝে সিঁড়ি বেয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে আসা বল্টু ভাই উচ্চে উঠতেন। সেদিনও উঠলেন,যথারীতি কিছু টাকা দিয়ে এক মাসের ছুটির একটা লেটার নিয়ে দেশে চলে আসলেন। ও এর মাঝে বল্টু ভাই আবার উঠে গেলেন ব্রিটিশ সংসদে,ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে অযোগ্য ছাত্রদের ব্যপারে মন্তব্য করতে গিয়ে বল্টু ভাইয়ের show your passport এর কাহিনী তুললেন,সংসদের কাঠখোট্টা আলচনার মাঝে একটা দারুন কৌতুক সবাইকে কিছুটা আনন্দ দিল। বল্টু ভাই এখন ব্রিটিশ সংসদেও।
নাহ তিনি আসলে এখন সংসদে না,বাংলাদেশে। এক মাসের বিশাল আনন্দময় সফর শেষ করে এবার ব্যাক করা। আবারও ইমগ্রেশন এস ইউসাল,এবার তো বল্টু ভাই আর ভীত না,কিছু ইংলিশ তো সে এরই মাঝে শিখেছে।
ইমিগ্রেশন অফিসার এর প্রশ্ন,কোন সাবজেক্ট এ পড়?বল্টু ভাইয়ের চটপট উত্তর:BTHM(Bachelor of Tourism & Hospitality Management).এবার দ্বিতীয় প্রশ্ন:এটা পড়া শেষ করে তুমি কি করবা?বল্টু ভাই কখনো ক্লাশ করেনি তো কি হয়েছে এই সাবজেক্ট এর মানে তো বুঝে,সেই অনুযায়ী উত্তর দিতে থাকলো। আমি এই সাবজেক্ট পড়া শেষ হলে আমি একটা দামী হসপিটাল এ যব নিব।
দেশের মানুষের সেবা করবো।
ইমিগ্রেশন অফিসার একটু আশ্চর্য হয়ে গেল,বলল হসপিটাল?হাও?
বল্টু ভাইয়ের চটপট উত্তর,hospitality আছে না? ইমিগ্রেশন অফিসার ক্ষেপে আগুন। বল্টু ভাই বুঝতেছে না কি ঘটেছে। সে এত সুন্দর উত্তর দিল তারপরেও এই মাথামোটা এরকম করে কেন?যা হউক কোন এক দৈব ঘটনায় এবারও বল্টু ভাই ইমিগ্রেশন পার হয়ে গেল।
কিন্তু তারপরও আমাদের বল্টু ভাই কিছু বুঝে উঠতে পারল না,কেন ইমিগ্রেশন অফিসার এরকম করলো।
আবার শুরু হল বল্টু ভাইয়ের ইউকে জীবন।
এরকম অনেক বল্টু ভাই আছে ইউকে তে,খুব-ই করুন তাদের অবস্থা। অনেক লেখা পড়া করে এসেও তারা ইংরেজিতে শূন্য,অনেকেই আবার পুথিগত বিদ্যার মায়াবি ছোবলের শিকার। আবার অনেকেই প্রতারক ব্যবসায়ীদের শিকার। এর জন্য দায়ী কারা?ইন্ডিয়া থেকে একজন শিক্ষার্থী যে পজিশন থেকেই আসুক না কেন,ইংরেজিতে খুবই দক্ষ থাকে,আর আমাদের দেশের ছেলে মেয়েরা গ্রাজুয়েশন শেষ করে আসছে তারপরও ইংলিশ বলতে দাত ভাঙ্গে।
বা অনেক গাধা ছাত্র,অছাত্র এসে আসল ছাত্রদের অপমানিত করে। এটা কি সেই সব ছাত্রদের দোষ?নাহ এ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দোষ,সরকারের অমনোযোগিতার ফসল। যা আমাদের অনেক কৃতিত্বকেও ম্লান করে দেয়। এখনো মানুষ বাঙ্গালীর এসব কথা তুলে ধরে হাসে। কেন আমরা ড:ইউনুস এর কথা বলে,স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু প্রমুখদের কথা বলে গর্ব করতে পারি না?কবে আসবে পরিবর্তন?
(একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লিখা,কাউকে hurt করার জন্য আমার এই লেখা না,আসলে রাষ্ট্রীয় সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমার এই লেখা,কেউ hurt হলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।