সেদিন বল্টু ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে অবাক হয়ে গেলাম । দেখি ওনি কানে ম্যাচের শলাকা দিয়ে খোচাচ্ছেন আর একটু পরপর হাচ্ছু ..হাচ্চি করে চেচাচ্ছেন ।
: সে কি বল্টু ভাই ! আপনার কানে এভাবে খোচাচ্ছেন কেন ?
প্রশ্নটা করেই ভড়কে গেলাম আমি । ওনি কান খোচানো থামিয়ে রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন । যেন আমি ওনাকে ভয়ানক খারাপ একটা গালি দিয়েছি ।
: আমার কান খোচাব না তো তোর কান খোচাব ?
শেষমেষ প্রশ্নটা শুনে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম । ভাগ্যিস মুখে বলেছেন ,হাতে বলেন নি ।
: তা তো ঠিকই । কিন্তু লোকে তো দেখি নাকে খোচিয়ে হাচি দেয় !
একটু সাহস পেয়ে মিনমিন করে বললাম আমি ।
: ইয়া ..ইয়া ..পল্টু ..
এবার আরও বেশি অবাক হয়ে গেলাম আমি ।
পাগল হয়ে গেলেন নাকি ওনি ? এই দেখি রাগেন এই দেখি আবার হাত পা তুলে নাচানাচি শুরু করেছেন ।
এই যখন ভাবছি ,দেখি পল্টু ভাই এবার বেশ করে নাকেই খোচাচ্ছেন । আর একটু পর পর ধমাধম হাচি দিচ্ছেন ।
কয়েকমিনিট এভাবে চলার পর ওনি এবার একটু শান্ত হয়ে বসলেন ।
: বুঝলিরে পল্টু ..ভুলেই গিয়েছিলাম সব ! বেমালুম ভুলে গিয়েছিলা
আমি চুপ করে রইলাম ।
কি জানি আবার কি করে বসেন ।
: তাইত ভাবছি হাচি আসছে না কেন । বুঝলি ..আজকে দোকানের হিসেব নিয়ে যেই বসেছি অমনিই মনে হল হাচি আসছে ।
ওনি বলতেই থাকলেন । আমি ভয়ে ভয়ে শ্রবনে মনযোগী হলাম ।
সেইসাথে একটু চিন্তিতও । কালকে টুসিকে নিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়ে দোকান থেকে শ খানেক টাকা মেরে দিয়েছিলাম । ব্যাটা কি সেই হিসাব ধরে ফেলল নাকি ।
: ভাবলাম যে খাতাটা বন্ধ করেই হাচিটা দেই । থুথু ছিটিয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে ।
হিসাবের খাতাটা বন্ধ করে ..
আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম । যাক খাতাটা বন্ধ তো হল ।
: বুঝলি ..দশ মিনিট বসে রইলাম । কত চেষ্টা করলাম । কই হাচি ? ব্যাটা কই উধাও হয়ে গেছে ।
তাই আবার খাতাটা খোলে বসলাম .
আবার আতকে উঠলাম । আবার খাতা খোলা কেন ?
: খোলতে না খোলতেই আবার হাচি এসে হাজির । তারাতারি খাতাটা বন্ধ করে যেই আবার হাচি দিতে যাব অমনিই লাপাত্তা !
: তারপর ?
বেচারার কষ্টের কাহিনী শুনতে বড্ড কৌতুহল হল আমার ।
: হাবলুটাকে ডেকে বললাম ,ঐ হাবলু হাচি দেয় কেমনেরে ?
বল্টু ভাই বলে যেতে লাগলেন । আমিও শুনে যেতে লাগলুম ।
: হাবলু কি জানি খোঁচা খোঁচির কথা বলল দূরে থেকে বুঝলামই না । তোদের নিয়ে হয়েছে আরেক ঝামেলা । গার্লফ্রেন্ডের সাথে আসতে করে টুকুস টুকুস কথা বলে এমন অভ্যেস গড়ে তুলিস পড়ে ভাল কথাও আসতে করে বলিস । যত নষ্টের গোড়া মোবাইল ...
আমি প্রমাদ গুনলাম । হাতে রাখা মোবাইল পিছিয়ে নিয়ে প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলাম ।
: যাক গে ! ও কি খোঁচাখোঁচির কথা বলল কিছুই বুঝলাম না । তখন গিয়ে ডিটেকটিভ সূত্র প্রয়োগ করলাম । বুঝিস নাকিরে ..ডিটেকটিভ কি জিনিস ?
আমি মাথা নেরে সায় দিলাম । গোয়েন্দা ।
: ভাবলাম কোথায় কোথায় খোঁচানো যায় ।
আমরা কোথায় কোথায় সচরাচর খোঁচিয়ে থাকি । ওপাড়ার দাদিকে দেখতাম দাঁতে খোঁচায় । ভাবলাম দাঁত দিয়েই শুরু করি । ঘন্টা খানেক দাঁতে বেশে করে খোঁচালাম .বুঝলি ?
আমি সায় দিলাম ।
: দাঁতে খোঁচিয়ে লাভ না হওয়ায় শুরু করলাম কানে খোঁচানো ।
ভাবলাম গাড়ি যেমন মাঝে মাঝে ঠেলে স্টার্ট করতে হয় ,হাচিটাও ওরকম কিনা । তাই ই হাচি হাচি করেও বার কয়েক চেষ্টা করলাম ।
আর সেইসময়ই না তুই এলি । তোর একটু কথা শুনেই কেমন বুদ্ধিটা খাটালাম বল ! সোজা নাকে ঢুকিয়ে দিলাম আর হাচিও আসি , ..গেছি বলে পালাল ।
কাল নতুন সিনেমা আসছে ..টাকা নিয়ে দেখে আসিস ।
শুনে আমি বানরের মত এমন একটা লাফ দিলাম যে চার্লস ডারউইন বেঁচে থাকলে বানর থেকে মানুষ নয় বরং বলত মানুষ থেকেই বানরের সৃষ্টি ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।