গালাগালি পাঠাতে srsnipun@gmail.com ফেসবুকে আমি http://www.facebook.com/mrlazy4200 ঘটনা ১:
গত বছরে ঘটনা। দাড়িয়ে ছিলাম ফার্মগেটের সেজান পয়েন্টের সামনে। হথাৎ দেখলাম, একজন লোক দৌড়ে যাচ্ছে তার পিছনে আরেক জন লোক চোর চোর বলে চিৎকার করছে। ফার্মগেটের ভীড় সম্পর্কে সকলেই অবগত আছেন। ওর ভিতরে কয়েক জন ফুটপাতের দোকানদার তাকে ধরেই মার দেওয়া শুরু করল।
সে কি মার!! একটু অবাক হলাম! দোকানদার গুলো জানেওনা আদেও সে চোর কিনা, কিংবা কি চুরি করেছে। তারা শুধু মাত্র পিছনের লোকটাকে চোর বলে চিৎকার দিতে শুনেছে। তাতেই তারা মার শুরু করেছে। পিছনের সেই লোক তখনও এসে পৌছায়ওনি। ভাবলাম কিছু লোক হয়ত ঠেকাবে।
অন্তত পিছনের লোক আসা পর্যন্ত। কিন্তু এই বার বিস্ময় এর চরম সীমায় পৌঁছে গেছি। আশেপাশের কেউতো তাঁর কথা শুনার প্রয়োজনই বোধ করল না বা পিছনের লোকটার কথা শোনার জন্যও অপেক্ষা করল না। যে যেদিক থেকে পারল মার শুরু। আমি নিশ্চিত তাদের মধ্যে অনেকে চোর ডাক শুনেও নাই।
তারা আশেপাশের লোকজনের মার দেওয়া দেখে মার দিচ্ছে।
ঘটনা ২:
যাত্রাবাড়ীর ঘটনা এটা। পত্রিকায় পড়েছিলাম ও ছবিও দেখেছিলাম। লিংক দিতে পারছিনা বলে দুঃখিত। চোর সন্দেহে ৮-১০ বছরের একটা বাচ্চা ছেলেকে ২৮-৩০ বছরের একটা লোক কি মারটাই না মারছে!!! এমনকি তাঁর মাথার উপরে সেই লোক নিজের পুরো ভর দিয়ে দাড়িয়ে পড়েছে।
মাটিতে ফেলে সারা গায়ের উপর নিজের পুর ভরে পাড়িয়ে ধরে আছে। আশে পাশের কেউ এগিয়ে আসছেনা। বরং উৎসাহ নিয়ে দেখছে। এমনকি সেই সাংবাদিক তাকে ঠেকাতে গেলে, সেই লোক সেই সাংবাদিককেও চোরের সর্দার ইত্যাদি ইত্যাদি উপাধি দেয়। আবারও মনে করিয়ে দিই শুধু মাত্র চোর সন্দেহে।
ঘটনা ৩:
২০১১ সালের শব-ই-বরাতের রাতে রাজারগঞ্জের ১১ ছাত্রের সেই নির্মম মৃত্যুর কথা মনে আছে?? ঐ ঘটনাটি মনে করুন। শুধু মাত্র ডাকাত সন্দেহে ঝরে যায় ১১টি তরতজা ছাত্রের প্রান।
ঘটনা ৪:
এই ঘটনাটি একটু অন্য রকম। ফেব্রুয়ারি মাসে শ্যাওড়াপাড়া ওভারব্রিজের একটু দূরে রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার স্বীকার হন একজন অতিরিক্ত উপমহাসচিব। রাস্তায় প্রায় ৩০ মিনিট তিনি পড়ে থাকেন।
এই সময়ের মধ্যে এক জন লোকও তাঁর সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি। যারা চলাচল করছিল তারা পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্চিল। ৩০ মিনিট পর কোন এক অমানুষ কলেজ ছাত্র তাকে উঠিয়ে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়ে আসে।
প্রথম ঘটনা ৩ টির সাথে শেষের ঘটনাটি একটু মিলান। প্রথম ৩ টি ঘটনার ক্ষেত্রে উত্তেজিত জনতা এক হয়ে চোর/ডাকাত পিটিয়ে মানুষের সাহায্য করছে।
যদিও তাকে হয়ত অনুরধও করা হয়নি। এই সব জনতার কারও বউ ভাগছে, কারও সন্তান তাঁর কথা শুনেনা, কারও বস তাকে ঝাড়ছে, কারও চাকরি চলে গেছে, কারও ব্যাবসায় মন্দা। মোটামুটি যার যত রাগ সব ঐ ব্যাটার উপর ঝাড়ে। আমি আমার অনেক ফ্রেন্ডদের দেখছি যারা এইরকম মেরেই মজা পায়। তারা মারে শুধু মাত্র মজার জন্য।
এই রকম চান্স কয়বার পাবেন? আপনি একজনকে মারবেন অথচ সে কিছুই বলতে পারবেনা? আমার মনে হয় শুধু মাত্র এই কারনেই বহুত লোক না জেনেই মারতে চলে যায়।
অথচ শেষের ঘটনাটি দেখেন। ৩০ মিনিটে কম করে হলেও ৫০০ জন লোক ঐ পথ দিয়ে চলাচল করছে। অথচ তাদের মধ্যে ১ টা লোকেরও মনে হয়নি এই লোকটির সাহায্য করা উচিৎ। কারন কি বলতে পারেন? কারন এই কাজে কারও কোন লাভ নাই।
মজাও নাই!!!
আরেকটি ঘটনা বলে শেষ করি। কোচিং এ ক্লাস করছিলাম। ৫তালার উপরে ক্লাস। তাঁর উপরেই ছাদ। চিল্লাপাল্লা শুনে তাকিয়ে দেখি বড় ভাইএরা (স্যারদের ভাই বলতাম) এক ছোকরা টাইপ ছেলের কলার ধরে উপরে মানে ছাদে নিয়ে যাচ্ছে।
ক্লাস করতে বোরিং লাগছিল বিধায় আমিও উঠে গেলাম। মোটামুটি ছোট খাট একটা ভিড় তৈরি হয়েছে ছাদে। গাঁজাখোর টাইপ চোর আর কি। ভাইয়েরা সবাইকে নামিয়ে দিলেও আমি আরও ২ জন ফ্রেন্ড এর সাথে ভালো সম্পর্ক থাকার সুবাদে আমাদের নামতে দিলেন না। যদিও আমি চাচ্ছিলাম নেমে আসতে।
জানতে পারলাম, এই বাক্তি সাইকেল চোর। কোচিং এর নিচে থাকা এক সাইকেল এর উপর বসে সে হাক্সো ব্লেড দিয়ে সাইকেল এর লক কাটতেছিল। তারপর শুরু হইল মার। কত ভাবে যে মারা যায় সেই দিন শিখলাম। আমার হাতেও একটা চলা কাঠ ধরিয়ে দেওয়া হল এবং মারের জন্য অবাধ ও পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হল।
সেই কাঠটার মাথায় আবার পেরেক পোতা ছিল। কি কারনে জানিনা, আমি তাকে ঠিক মারতে পারছিলাম না। কিন্তু আমি মারছিনা দেখে এক বড় ভাই তাড়া দিলেন। তারপরের কাহিনী মোটামুটি কমন। আমার ব্যার্থতার কারনে আমার হাত থেকে এক সময় লাঠিটি নিয়ে নেওয়া হল।
এবং আমাকে পাঠানো হল নিচে গিয়ে গরম পানি নিয়ে আসতে। কি করার জন্য বুঝতেই পারছেন। যা হউক। আমি আর গরম পানি আনছিলাম না। তাকে প্রায় আধমরা করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এই ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই বলবনা। শুধু বলব কুকুরকে যদি আপনিও কুকুরের মত কামড়ে দেন তাহলে আপনার আর কুকুরের মধ্যে কি পার্থক্য থাকল?? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।