“আমি নিরালায় একা খুজেঁ ফিরি তারে, স্বপ্নবিলাসী, কল্পনাপ্রবণ আমার আমিরে.........”
২০১২ উইম্বলডনের চ্যাম্পিয়ান ট্রফি হাতে রজার ফেদেরার
আমাদের দেশে টেনিস খুব জনপ্রিয় খেলা নয়, কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে প্রবল। কীভাবে যেনো আমার কাছেও টেনিস ভালো লাগতে শুরু করলো। যখন থেকে টেনিস খেলাটা বুঝতে শিখলাম, তখন একজন খেলোয়াড়ের প্রতি অদ্ভুত টান অনুভব করলাম – ইভান লেন্ডল। এই চেক কিংবদন্তীর জেতা আটটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের সর্বশেষটি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন যখন ১৯৯০ সালে জিতেন, আমি তখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি। ক্যারিয়ারে একবারোও ঘাসের কোর্ট উইম্বল্ডনে জিততে না পেরে বলা ‘ঘাস হলো গরুর খাদ্য’ কথাটা ‘আঙুর ফল টক’- এর মতোই লাগে।
ইভান লেন্ডল যখন শেষের দিকে, ঠিক তখনই, ১৯৯২ সালে টেনিস বিশ্বে এক আমেরিকান যুবকের আগমন- সেই ঘাসের কোর্টে শিরোপা জিতেই- আন্দ্রে আগাসি। আগাসি- টেনিসের রাগী মানুষ,টেনিসের রঙ্গিন মানুষ। লেন্ডলের মতোই আটটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেও সবগুলো গ্র্যান্ড স্ল্যাম এবং অলিম্পিক গোল্ড মেডেল জেতায় আগাসি ছিলেন অনন্য। কিন্তু আমি তাকে পছন্দ করতাম ব্রুক শিল্ডের জন্য! হ্যাঁ, ব্লু ল্যাগুন ছবিতে সেই নিষ্পাপ চেহারার ব্রুক শিল্ডকে দেখে আমি এমনিতেই আগে থেকে দেওয়ানা ছিলাম। আগাসির খেলাতে ব্রুক শিল্ডকে দেখা যায় বলে আমিও আগাসির সমর্থক বনে গেলাম।
কিন্তু একসময় ব্রুক শিল্ডের জায়গায় চলে এলো স্টেফিগ্রাফ, আমারো সমর্থন বদলাবার সময় হয়ে এলো।
চিন্তা করলাম পিট সাম্প্রাসকে সমর্থন দিবো। কিন্তু ভাবছিলাম, এই সাম্প্রাস তার প্রথম গ্রান্ড স্ল্যাম জিতেছিলো ইউ এস ওপেনে ১৯৯০ সালে আগাসিকে হারিয়ে, আবার শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছিলো ২০০২ সালে সেই ইউ এস ওপেনেই সেই আগাসিকে হারিয়ে। আমার সাবেক প্রিয় খেলোয়াড়কে হারানোয় আমি কীভাবে সাম্প্রাসকে সমর্থন দেই! যতোই সে চৌদ্দ বার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতুক, যতই সে একবারও ক্লে কোর্টের রাজা না হোক (ফ্রেঞ্চ ওপেন)। সমস্যা হয়ে গেলো।
ঠিক এই সময়েই ২০০৩ সালে ঘাসের কোর্টের নতুন রাজা দেখা দিলো- সুইস রজার ফেদেরার। সেই থেকে আমি ফেদেরারের সমর্থক। তার শিরোপায় যেমন খুশি হয়েছি, তেমনি পরাজয়ে মনও খারাপ হয়েছে। ২০০৮-এ এই উইম্বলডনের ফাইনালেই সেই মহাকাব্যিক ম্যাচ শেষে রাফায়েল নাদালের কাছে হেরে ফেদেরার যেমন কেঁদেছে, ঠিক তেমনি কেঁদেছি আমিও। আবার এই ২০০৯-এর উইম্বলডনেই এন্ডি রডিককে ফাইনালে হারিয়ে রেকর্ড ১৫ বার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ে আনন্দে উদ্বেল হয়েছি।
খুশিতে আত্নহারা হয়েছি সেই বছরেই ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যাম পূরণে। আজ আবার শিহরিত হয়েছি ২০১২ এর উইম্বলডনের শিরোপা জেতায়, অভিনন্দন জানাচ্ছি র্যাং। কিং-এ পুনরায় ১ নম্বরে উঠায়।
রজার ফেদেরার- বিজয়ের মুহূর্তে (উইম্বলডন, ২০১২)
অসাধারণ খেলেছে এন্ডি মারে। একটি পুরো জাতির স্বপ্ন পূরনের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে খেলা, তাও আবার সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় রজার ফেদেরারের বিরুদ্ধে! ম্যাচ শেষে মারের কান্না যেনো এই খেলাটারই জয় ঘোষণা করছে।
তাই ফেদেরারের সমর্থক হলেও, এন্ডি মারেকেও অভিনন্দন। আসলে অভিনন্দন টেনিসকেই।
এ যেনো টেনিসেরই জয় (রজার ফেদেরার এবং এন্ডি মারে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।