মনে প্রাণে ঘৃণা করি রাজাকার। পাকিস্তানের দালালি করার শখ থাকলে এখানে ল্যাদাতে না আসার জন্য বলা হচ্ছে।
দেশে এই মুহূর্তে গরম খবরের কোন অভাব নেই। বেশ কয়েকটি অঞ্চলে দুর্ভাগ্যজনক বন্যা পরিস্থিতি, বিশ্ব ব্যাঙ্ক-পদ্মা সেতু, চট্টগ্রাম নার্সিং ইন্সিটিউটে হিজাব প্রসঙ্গ! আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে। এতো সব মশলার ভিতরে ‘বাঁশ’ করা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার!
আজ সারাদিন ধরে ব্লগে আর ফেসবুকে দেখলাম একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের লোকজন চট্টগ্রামের নার্সিং ইন্সিটিউটের ঘটনাটা নিয়ে বেশ জল ঘোলা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
নানারকম ছবি টবি দিয়ে ধুন্দুমার কাণ্ড! কিন্তু মজার ব্যাপার হল এই খবরটা এক রাজাকার দলীয় পত্রিকা ‘নয়া দিগন্ত’ আর তাদের আত্মীয়সম ‘আমার দেশ’ ছাড়া আর কোন মিডিয়াতে তেমন করে আসতে দেখলাম না। ইনকিলাব আর সংগ্রাম পত্রিকা দুটো খুঁজে দেখার মত রুচি হয়নি বলে তাদের কথা বলতে পারছিনা।
যারা এইসব নানা ছবি দিয়ে এই ব্যাপারটা নিয়ে একটা ক্যাঁচাল তৈরির চেষ্টায় রত আছেন তারা কি খেয়াল করেছেন যে বাত্তির নিচেই অন্ধকার? আপনাদের এই ছবিগুলোই বলে দিচ্ছে ‘ডাল মে কুচ কালা হ্যাঁয়!’
আমি এখানে কিছু ছবি একত্রিত করেছি একটি ছবিতে।
ছবিটি দেখুন বড় করে
লক্ষ্য করুন- এখানে প্রতিটি মেয়ের হিজাব সাদা রঙের ঠিকই কিন্তু তাঁর মাঝেও সাদা নকশা আছে। প্রত্যকের বেলায় একই নকশা! সব হিজাবের ফেব্রিক, সুতার কাজ, ডিজাইন এক! এটা কি কাকতালীয় নাকি গো. আ. (গো আজম) তালীয়? যা প্রমাণ করে এই গেঞ্জাম তৈরি করার আগে আগে একই জায়গা থেকে অর্ডার দিয়ে বানিয়ে কেউ এগুলো একযোগে সবাইকে সাপ্লাই দিয়েছে।
এরা হিজাব করার জন্য আন্দোলন করছে অথচ তাদের মুখমণ্ডল আবৃত হলেও বাহুযুগল অনাবৃত। একজন নারী যদি তার মুখমণ্ডল অনাবৃত করে রাখে তাতে পর্দা করার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় না, বরং তা হয় তখনই যখন সে তার শরীরের অন্যান্য অংশ অনাবৃত রাখে।
প্রথম ছবিতে দেখা যাচ্ছে নামাজ ঘরের সামনে কিছু মেয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ছবির জন্য ক্যামেরাম্যানের সামনে পোজ দিচ্ছে। সেই ঘরের দরজায় একটি তালা লাগানো। ঘরটি যে নামাজ পড়ার জায়গা সেটা অন্য কিছু দেখে বোঝার উপায় নেই কেবলমাত্র চৌকাঠের উপর রাখা একটি ছোট বোর্ড বা নাম ফলক ছাড়া।
এই বোর্ডটি কোন পেরেক দিয়ে দেয়ালের সাথে লাগানো নেই, চৌকাঠের উপর কোনমতে হেলান দিয়ে রাখা আছে, যা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় যে এটা ছবি তোলার আগমুহূর্তে অথবা পরিকল্পিত এই আন্দোলন নামের বিশৃঙ্খলা তৈরির প্রাক্কালে ওখানে রাখা হয়েছে।
এই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে তারা শ্রেণীকক্ষেও নিনজা সেজে থাকবে নতুবা কোন ক্লাসে অংশ নিবেনা। আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে নার্সিং ইন্সটিটিউটে যারা পাঠদান করেন তারা নিজেরাও নারী। তাহলে এই সকল শিক্ষার্থীদের কেন মুখ ঢেকে ক্লাস করতে হবে তা আমার বোধগম্য নয়। আচ্ছা তাও নাহয় মেনে নিলাম যে এটা তাদের মনের খায়েশ কিন্তু আমার ভুরু তো তখনই আবার কুঁচকে যায় যখন তারা কুখ্যাত এক রাজাকারের টেলিভিশন চ্যানেল ‘দিগন্ত টিভি’র পুরুষ সাংবাদিকদের সামনে রোজার ঈদের চান রাতের আনন্দ সহকারে সাক্ষাৎকার দিতে আরম্ভ করে!
লেখার এ পর্যায়ে আসা যাক এই তথাকথিত হিজাব প্রসঙ্গে।
একবার কল্পনার চোখে দেখুন তো দৃশ্যটা কেমন দেখায়- একটা শ্রেণীকক্ষে গোটা পঞ্চাশেক ছাত্রী সবাই মুখে কাপড় বাঁধা, কেবল চোখদুটো দেখা যাচ্ছে এবং তারা সবাই মিলে আপনার দিকে তাকিয়ে আছে আর আপনি তাদের ক্লাস নেয়ার চেষ্টা করছেন! একদল মানুষ যদি এভাবে আপনার সামনে বসে থাকে তবে আপনি কিভাবে তাদের আইডেন্টিটি সম্পর্কে নিশ্চিত হবেন? কিভাবে পড়াবেন?
হ্যাঁ ভাই ও বোনেরা আমার! এইবার এসেছে আপনাদের সেই মোক্ষম সুযোগ! এবার নিশ্চয়ই আপনারা আমাকে কাফের, মুরতাদ বলে গালাগালি শুরু করে দিবেন? একটু ধীরে ভাই সাহেব-ভগ্নি সাহেবা। গালাগাল শুরু করার আগে আমাকে একটিবার দেখান তো আমাদের ইসলাম ধর্মের কোথায় বলা আছে যে নারীদের মুখমণ্ডল আবৃত করে রাখতেই হবে? তারা কেবল তাদের চোখদুটো খুলে রাখবে – কোথায় বলা আছে এমন কথা? তাও কিনা আবার বাহুর দুই তৃতীয়াংশ নগ্ন রেখে?
এই ঘটনাটি নিয়ে ভার্চুয়াল সমাজে যারা এলাহি কাণ্ড বাঁধাবার পাঁয়তারায় লিপ্ত এদের মাঝে যারা কিছু না বুঝেই কেবল নিজ ধর্মের প্রতি অনুরাগ বশত এই কাজ করছেন তাদের ধর্মানুভুতির প্রতি আমি স্রদ্ধা জানালেও নির্বুদ্ধিতার প্রতি তীব্র নিন্দা জানাই। আর যারা সব জেনে বুঝে, ইচ্ছে করেই এমনটা করছেন তাদেরকে বলছি- আপনাদের মত গোয়ার গোবিন্দ, অসুস্থ মস্তিষ্কের ধান্দাবাজ, ভণ্ডগুলোর জন্যেই আজকে সারা বিশ্বে বিভিন্ন প্রজাতির মানুষজন একমাত্র পরিপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠ ধর্ম “ইসলাম” এর প্রতি এতো বাজে ধারনা পোষণ করে, এতো অপবাদ দেয়ার সুযোগ পায়। অবশ্যই অনেক উগ্র বিধর্মীরা আছে যারা যেচে পড়ে ইসলামের অপমান করার চেষ্টায় লিপ্ত, তাদেরকে ডিফেন্ড করছি না তবে এই কথা অনস্বীকার্য যে ইসলামের অপমান তাদের চেয়ে আপনাদের মত ধর্ম ব্যাবসায়িরা অনেক বেশি করছেন প্রতিনিয়ত। আপনাদের লজ্জা হয়না? পরকালের কোন ভয় হয় না? এটা কি করে ভুলে যান যে আল্লাহ্ অন্তর্যামী, তাঁর দৃষ্টিকে ফাঁকি দিয়ে কিছুই করার ক্ষমতা কোন সৃষ্টিকুলের নেই? তাই সময় থাকতে সাবধান হয়ে যান, কারন আপনারা ইসলাম নিয়ে হাজার ফন্দি ফিকির করলেও ইসলামের কোন ক্ষতি করতে পারবেন তো না-ই শেষ প্রহরে নিজেরাই ধ্বংস হয়ে যাবেন।
ইহকালে তো ডুববেনই সেই সাথে পরকালটাও হারাবেন! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।