দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। বিশ্বব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত আশাহত করেছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে। একই সাথে সারা দেশই কষ্ট পেয়েছে। এরকম একটি অবকাঠামো দেশের অর্থনীতিতে কতটা অবদান রাখে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্বব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের ফলে জাপান বা এশিয়ান ডেভেলেপমেন্ট ব্যাংকের প্রতিশ্রুতিও বন্ধ হয়ে যাবে।
কারণ এটি ছিল একটি সিন্ডিকেট ফিনান্সিং ।
বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে অনেক দিন আগেই কিন্তু সরকার তার তোয়াক্কা করেন নাই। সরকারের একগুয়েমির জবাব এসেছে অত্যন্ত কঠিনভাবে। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীর প্রতিষ্ঠান এর দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিল এমন অভিযোগ বিশ্বব্যাংক করেছে এবং কানাডার তদন্তে তা বের হয়ে এসেছে। সরকার বলছে যে ঘটনা ঘটেনি সে ঘটনায় দুর্নীতি হয়েছে তা বলা যাবে না।
এই কথাটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। খুন করার আগে খুনের পরিকল্পনা যেমন অপরাধ, ডাকাতি করার আগে ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়া যেমন অপরাধ তেমনি ঘুষ খাওয়ার আগে তার পরিকল্পনাও অপরাধ। যদি প্রমাণ পাওয়া যায়-- এ রকম একটি পরিকল্পনা হয়েছে তাহলে নি:সন্দেহে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়। মূলত সরকারের কাছের লোকজন এর সাথে জড়িত থাকায় বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে।
যোগাযোগমন্ত্রী বলেছেন পদ্মাসেতু নির্মিত হবে যথাসময়ে।
ভিত্তিপ্রস্তুর হয়তো স্থাপিত হবে। টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার হবে কিন্তু মানুষের আস্থা আর বিশ্বাস কি ফেরত আসবে?
সরকারের আত্মম্ভরী আচরণ পুরো দেশকে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
বর্তমান বাজার অর্থনীতিতে একটি দেশ কখনো একা চলতে পারে না। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানকে অবজ্ঞা করার সাথে সাথে অর্থনীতির ক্ষেত্রে বন্ধুর সংখ্যা আরো কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার সাথে কুটনৈতিক জ্ঞান প্রয়োগ করার প্রয়োজন ছিল যা সরকার করতে পারে নাই।
ধরে নেই বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ মিথ্যা। তাহলে আমাদের হাতে কি প্রমাণ ছিল যাতে তাকে মিথ্যা বলে ধরে নেওয়া যায়? তাহলে সেই মিথ্যাকে আমরা প্রমাণ করে বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত যে অন্যায্য সেটি বলা যেত। বিশ্বব্যাংকের সাথে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলার জন্য win-win কোনো ফর্মুলা কি বের করা যেতো না? এত উপদেষ্টা, এত বাগা বাঘা কূটনীতিক বা রাজনীতিক তারা কি করেন? বিশ্বব্যাংকও কিন্তু এই চেষ্টা করেনি, তারা হয়তো এই বিনিয়োগ বন্ধ করার কোনো অজুহাত খুজছিল আর আমরা তাদের অনুযোগ অভিযো অবজ্ঞা করে তার পথ করে দিয়েছি। আসলে এর মধ্য দিয়ে দেশকে পরাজিত করা হয়েছে।
সরকারের আত্মম্ভরী এই আচরণ অগ্রহণযোগ্য।
হতে পারে সরকার ধোয়া তুলসী পাতা কিন্তু সেটি কি প্রমাণ করা গেলো? সাধারণ মানুষ কি ভাবলো? তারা ভাবলো সরকারের অহংকারে পদ্মা সেতু পিছিয়ে গেলো। দক্ষিণাঞ্চলের ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষের বিড়ম্বনা বাড়লো। ২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার রূপকল্প কল্পলোকে যাওয়ার উপক্রম হলো।
তারপরও হয়তো পদ্মা সেতু নির্মান হবে। হয়তো বিকল্প পথও পাওয়া যাবে।
এর মধ্য দিয়েও কিন্তু দূরত্ব বাড়বে, কমবে না। এখন সেই কোল্ড ওয়ারের যুগ নেই। বিশ্ব এখন এক মোড়ল দ্বারা শাসিত। অন্য কোনো পরাশক্তি পাশে থাকলে অপর পরাশক্তিকে অবজ্ঞা করা যায়। কিন্তু বর্তমান যুগে প্রতিকূলতাকে জয় করে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার মত উপযুক্ততা ও সৃজনশীলতা থাকা খুবই প্রয়োজন।
সরকারের এই ব্যর্থতায় কেউ কেউ খুশী। কিন্তু এটা মনে রাখা দরকার এর মাশুল সকলকেই দিতে হবে। যে ব্যর্থতার জন্য আজ এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে ভবিষ্যতে তার চেয়ে কম মাত্রার ব্যর্থতার জন্য অধিক মূল্য দিতে হবে। আর সেজন্য সকল রাজনৈতিক দলেরই ক্ষমতায় যাওয়ার পরিবর্তে নিজেদের সৃজনশীল যোগ্যতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
আর তা না হলে এই দেশ নিয়ে যে স্বপ্ন তা দিবাস্বপ্নে পরিণত হবে আর দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার "পরি" উড়ে যাবে থাকবে শুধুই মিছেই "কল্পনা"।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।