ত্রিমুখী প্রেম
এইচ.এস.সি পরীক্ষার পর ঢাকায় এসে ওঠলাম শুক্রাবাদ বন্ধু কবীরের রুমে। রুমে ওরা তিনজন থাকে। কবীর, হটপট আর পলাশ। আমার হাতে তখন অফুরন্ত অবসর। কিছু একটা করা দরকার।
আর পকেটও সংকোচিত হয়ে গড়ের মাঠ হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা কলেজের ইলিয়াস ভাই নিয়ে এলেন এক টিউশনীর প্রস্তাব। সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী, সপ্তাহে ৫ দিন পড়াতে হবে। প্রথম দু’মাস দুই হাজার টাকা করে দেবে। পরবর্তীতে পাঁচশ টাকা বাড়বে।
এক বাক্যে রাজী হয়ে হেলাম। এর আগে কোন মেয়েকে পড়াইনি। তাই কিছুটা সঙ্কোচ এবং ভয়ও ছিল। পড়াতে পারব কিনা কিংবা. . . . . . আমি আবার কোন মেয়ের সাথে সহজে কথা বলতে পারতাম না। এজন্য কলেজে বন্ধুদের কত বকা খেয়েছি তার ইয়ত্তা নেই।
ধানমন্ডির ১৪ নম্বর রোডের একটি বাসা। ইলিয়াস ভাই বিকেলে নিয়ে গেলেন। কলিং বেল বাজাতেই এক ভদ্র মহিলা দরজা খুলে দিলেন। সালাম দিলাম, কিন্তু ভদ্রমহিলা সালামের জবাব দিলেন না। আসলে এ ভদ্র মহিলাই যে আমার ছাত্রী সে কথা আমার কিংবা ইলিয়াস ভাই, কারো জানা ছিল না।
ছাত্রীর নাম তমা। ৭ম শ্রেনী পড়ুয়া এ বয়েসী এত মোটা মেয়ে আমি আগে আর কখনো দেখেনি। আসলে এ বয়সে যে কেউ এত মোটা হতে পারে তা আমার ধারনায় ছিল না। ইলিয়াস ভাই টিউশনীর কথা বললেন। তমা জানালো- তার আম্মু বাসায় নেই।
সে আমাদের ড্রয়িং রুমে বসিয়ে তার ফুপুকে ডেকে নিয়ে এলো। তমার ফুপুর নাম অনিতা। ভিকারুন্নিসায় উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছে। স্লিম ফিগারের অনিতা যথেষ্ঠ স্মার্ট এবং সুন্দরীও বটে। অনিতার সাথে পরিচিত হলাম এবং পরদিন থেকে পড়ানোর কথা বলে হালকা চা নাস্তার পর বিদায় নিলাম।
পরদিন পড়াতে গেলাম। অনিতা দরজা খুলে দিল। সেদিনই তমার মায়ের সাথে পরিচিত হলাম। ভদ্রমহিলার খুবই অমায়িক ব্যবহার এবং স্মার্ট ও সুন্দরী। নাম মিতালী।
ভাবী বলে ডাকতাম।
তমা ছাত্রী হিসেবে মাঝারি মানের। পড়ানো ভালই চলছিল। ইতিমধ্যে লক্ষ করলাম অনিতা প্রতিদিনই দরজা খুলে দেয়। অনেকটা আমার কলিং বেলের অপেক্ষায় বসে থাকার মতো।
ইতিমধ্যে এসে গেল বন্ধু দিবস ( ফ্রেন্ডশীপ ডে)। এইদিন আমি অনিতার কাছ থেকে পেলাম অসাধারন একটি এসএমএস এবং চমৎকার একটি গিফট। আস্তে আস্তে আমিও অনিতার প্রতি কিছুটা দূর্বল হয়ে পড়লাম। মোবাইলে নিয়মিত আমাদের মেসেজ আদান-প্রদান চলতো। মোবাইল মেসেজেই আমাদের যোগাযোগ সীমাবদ্ধ ছিল।
পড়ানোর ফাঁকে তমা একদিন জিজ্ঞেস করলো,
-স্যার, কাউকে কথা দিয়ে কথা না রাখলে কি পাপ হয়?
-হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন? আমার পাল্টা প্রশ্ন।
- স্যার, আমার বন্ধু তন্ময় আমাকে ভালোবাসে। আমিও তাকে কথা দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন মনে হয় তার কথা রাখতে পারবো না। তমার সরল স্বীকারোক্তি।
-কেন রাখতে পারবে না? আমি জিজ্ঞেস করি।
- স্যার, আসলে আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তাই তন্ময়কে ভুলে যেতে চাই। আমার মনে হয় এখনই বিষয়টি তন্ময়কে জানিয়ে দেওয়া উচিত। নয়তো সেও কষ্ট পাবে।
- তমা, তুমি এসব কি বলছো?
- স্যার, আমি ঠিকই বলছি। অনেক ভাবলাম, মনের সাথে যুদ্ধ করলাম। তারপরই সিদ্ধান্ত নিয়ে আজ আপনাকে বললাম। আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না স্যার, প্লিজ।
-তমা, দেখো।
তুমি এখনো অনেক ছোট। ভালোবাসা কি সেটাই হয়তো তুমি ভালোভাবে জানো না। তাই তুমি বাস্তবতার চেয়ে আবেগকেই বেশী প্রাধান্য দিচ্ছ। এখন তোমার পড়াশোনার সময়। পড়াশোনায় মনোযোগী হও।
আর মন থেকে এসব চিন্তা দূর করো। আরো বড় হও। তখন এসব বিষয় নিয়ে ভাবার অনেক সময় পাবে।
ঐ সপ্তাহে আর পড়াতে গেলাম না। অনিতা তখন গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেছে।
তমার এক চাচা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। তমার দাদাও গ্রামে থাকেন।
একদিন মিতা ভাবী ফোন করলেন, লিমন, আসো না কেন? তমার যে পরীক্ষার দেরী নেই।
পরদিন পড়াতে গেলাম এবং যথারীতি পড়াতে লাগলাম। তমা আমার সাথে পড়াশোনার বিষয় ছাড়া অন্য কোন কথা বলতো না।
শুধু এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো। খুবই পাতলা কাপড়ের জামা পড়ে আমার কাছে পড়তে আসতো। ইচ্ছে করেই বুকের উড়না ফেলে রাখতো। নিচু হয়ে এমনভাবে বসতো যেন তার দিকে তাকালেই পুরো বুক দেখা যেতো। এসব বিষয় নিয়ে আমি তাকে আর কিছুই বলতাম না।
এদিকে তমার দাদুর চোখের চিকিৎসা এবং ঘুরে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে তমার দাদু, তমার বাবা, তমা, অনিতা, তমার চাচা-চাচী গেল মাদ্রাজে। চিকিৎসা শেষে পুরো ইন্ডিয়া ঘুরবে। মিতা ভাবী যান নি তিন বছর বযসী ছোট বাচ্চাটির জন্য।
আমার তখন পড়ানো নেই। তমাদের বাসায়ও যাই না।
এর মধ্যে ভাবীর ফোন পেলাম। মিতা ভাবী বললেন, লিমন, আগামীকাল আমার জন্মদিন। সবাই দেশের বাইরে থাকায় বড় কোন আয়োজন থাকছে না। তুমি অবশ্যই আসবে।
সন্ধ্যায় গেলাম।
ভাবীর কয়েকজন আত্মীয় এসেছেন। প্রায় সবাই ভাবীর বাবার বাড়ীর। ঢাকায় তাদের বেশী আত্মীয় স্বজন নেই। অনুষ্ঠান শেষে ১১ টার দিকে চলে আসতে চাইলাম। ভাবী বাধা দিলেন- এত রাতে যাওয়ার দরকার নেই।
আজ এখানেই থেকে যাও।
সব মেহমান চলে যাবার পর আমি শুয়ে পড়ি। বাসায় একরুমে আমি, অন্য রুমে ভাবী। চোখে মাত্র ঘুম এসেছে, এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। ভাবী এসেছেন।
দরজা খোলার পর দেখি- মিতা ভাবী এমন পোষাকে যাকে অর্ধ উলঙ্গই বলা চলে। পুরো বুক খোলা পাতলা নাইটি পরে আমার সামনে হাজির। আমাকে অনেকটা ঠেলে ঘরে প্রবেশ করলেন।
এর পরের ঘটনা অতি সংক্ষিপ্ত। তবে পাঠকদের এটা জানানো দরকার।
সেদিন রাত্রে আমি সেখান থেকে পালিয়ে এসেছি।
আর কখনো যাইনি কিংবা যোগাযোগ রাখিনি। আমার শখের চার হাজার টাকা দামের সিমটাও বন্ধ করে রেখেছি। তবে এ লেখার সূত্রে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি অনিতার কাছে।
মো. শহীদুল কায়সার লিমন
বড়নল, ভিটিপাড়া ( বরমী), শ্রীপুর, গাজীপুর-১৭৪৩
মোবাইল- ০১৯১১৭৫৮৫৩৩, ০১৭১১১০৮৬৮৪
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।