আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কওমি মাদরাসা, হেফাজতে ইসলাম ও সিটি নির্বাচন

অজানাকে ভালোবাসী এই ছোট্ট শহরে যারা পায়ে হেঁটে চলেন তাদের দলে আমিও একজন। হাঁটতে গিয়ে অনেকের সাথেই আলাপ। বিভিন্ন বিষয়। রাজনীতি, অর্থনীতি, সরকারি দল, বিরোধী দল, হেফাজত, নির্বাচন। প্রায় প্রতিটি বিষয়ে হেঁটে চলা মানুষের সাথে আলাপ জমে।

আলাপ হয় অতিসাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সাথে। রিক্সা ড্রাইভার, টমটম ড্রাইভার, দিনমজুর। এদেশ যারা চালান এইসব অতিসাধারণ মানুষের আলাপচারিতায় যদিও তাদের কিছু আসে যায় না, কিন্তু নির্বাচনে তাদের ভাগ্য নির্ধারিত হয় এইসব মানুষের ভোটেই। যার ফলশ্র“তি হচ্ছে দেশের চারটি সিটি নির্বাচনে বর্তমান সরকারি দলের করুণ পরিণতি। নিলর্জ্জ পরাজয়।

এ বিষয়ে পরে আসছি। কথা হচ্ছে অতিসাধারণ মানুষের সাথে আলাপচারিতা। আর এই সব আলাপের অভিজ্ঞতা থেকেই বলি, গোটি কয়েক হেফাজতিদের ভোটে যদিও সরকারের পতন হয় না। কিন্তু গোটি কয়েক হেফাজতির বিরুদ্ধে রাতের অন্ধকারের অভিযানে একটি দেশের সাধারণ মানুষের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন হতে পারে। এ দেশের বেশিরভাগ মানুষের আবেগ-অনুভূতির জায়গা হচ্ছে ‘ধর্ম’।

তাই এই ধর্ম নিয়ে যথাসম্ভব বাড়াবাড়ি কারো পক্ষে করা উচিত নয়, এই সহজবোধ্য কথাটা অনেকেই বুঝতে চায় না অথবা বুঝার চেষ্টা করে না। ক্ষমতাসীনরা তো ক্ষমতার দাপটে আরো বেশি না-বুঝার চেষ্টা করে। তাই বিগত সাড়ে চার বছর যত না হয়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত তার চেয়ে বেশি হয়েছে ধর্ম নিয়ে। মোল্লা-মুনশিরা রাস্তায় নেমে এসেছেন ‘ধর্মযুদ্ধে’ অথবা ধর্মরক্ষার তাগিদে। বাউল কবি শাহ আবদুল করিমকে একবার বলা হয়েছিল, ইশ্বর সম্পর্কে বলতে।

তিনি ইশ্বর সম্পর্কে যুক্তি-তর্ক না করতে নিষেধ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ইশ্বর হলেন পেঁয়াজের মতো। পেঁয়াজের ভেতরে যেতে চাইলে যেমন কিছুই পাওয়া যাবে না তেমনি বেশি যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করতে গেলে ইশ্বর সম্পর্কে কিছুই পাওয়া যাবে না। ইশ্বরকে বিশ্বাস করতে হয় বিনা বাক্যব্যয়ে। বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলো চলে এদেশের অতিসাধারণ মানুষের অর্থায়নে।

মানুষ কখনই কোথাও অর্থায়ন করেন বিনা স্বার্থে। কিন্তু এই একটি জায়গা যেখানে কোন স্বার্থের সীমারেখা ছাড়াই মানুষ বিনিয়োগ করে থাকে। আর এটা হয় ধর্মীয় আবেগে অথবা ধর্মের প্রতি এ দেশের মানুষের জন্মগত একটি দুর্বলতা থেকেই। আমরা সেই ছোটবেলায় দেখে এসেছি, গ্রামের মসজিদ কিংবা মাদরাসায় বৎসরিক একটি দান নির্দিষ্ট করে রাখা হতো। এখান থেকে কোন নড়চড় হতো না সংসারে যতই অভাব-অনটন থাকুক না কেন।

এই জায়গা থেকে উঠে আসা সাধারণ মানুষের ভাষা সময়ের তালে খুব পরিবর্তন হয়েছে একথা বলা মুশকিল। কারণ সারা দেশের হাজার হাজার কওমী মাদরাসা যেখানে সরকারের কোন অর্থায়ন নেই সেগুলো চলছে কেমন করে। এই প্রশ্নের উত্তরেই আশা করি বেরিয়ে আসবে উপরোক্ত কথার মর্মার্থ। তাহলে বুঝতে হবে এ দেশের মানুষের ভেতরে এখনও ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি জমে আছে এইসব মাদরাসায়। যার জন্য গ্রাম থেকে শহর আর শহর থেকে গ্রাম চারিদিকে হাজার হাজার মাদরাসা চলছে চোখ বুঝে, নিশ্চিন্তে।

কওমি মাদরাসাগুলোতে যদি দেশের সাধারণ মানুষের এই অনুভূতি থেকে থাকে তাহলে কওমি মাদরাসাগুলোতে যে হেফাজতে ইসলামের জন্ম সেই হেফাজতের প্রতি দেশের সাধারণ মানুষের কী সহজাত দুর্বলতা থাকবে না? অতএব উপসংহারে একথাই বলা যায়, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়িই এ সরকারের লজ্জাজনক পরাজয়ের মূল কারণ। সাধু সাবধান। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.