চোখে যা দেখি, কানে যা শুনি, তা নিয়ে কথা বলবোই ! ২০১২ সালের ২৩ জুন হচ্ছে ২৫৫তম ঐতিহাসিক পলাশী ট্রাজেডি দিবস এবং একই বছর নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলার ২৫৫তম শাহাদাতবর্ষ। পলাশীর এই ঘটনা যুদ্ধ না-বলে এক ট্রাজেডি বা বিপর্যয় বলাই অধিকতর যুক্তিসঙ্গত। কেননা যুদ্ধ করে জয় পরাজয় এক কথা। কিন্তু যুদ্ধ না-করে যে পরাজয় বরণ করতে হয় তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। অনেকে একে যুদ্ধ না-বলে ‘ষড়যন্ত্রের কালো থাবা’ বলে থাকেন।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন ইতিহাসের নিন্দনীয় প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে যুদ্ধের প্রহসন হয়েছিলো পলাশীর আম্রকাননে। সেদিন দেশপ্রেমিক নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা পরাজিত হন এবং বাংলার শেষ স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়। একদল লোভী, ষড়যন্ত্রকারী, স্বার্থান্বেষী, দেশদ্রোহী হিন্দু-মুসলিম মিলিত মানুষরা দেশপ্রেমিক নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলার মত লোককে পরাজিত ও নিহত করে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টা করেছিল। তাই পলাশীর ট্রাজেডি না দেখলে হয়তবা পৃথিবীর মানুষ কখনোই জানত না। পলাশীর ঘটনা একটি সাধারণ ঘটনাই নয়।
এর ভেতরে লুকিয়ে আছে বাংলা সহ এ অঞ্চলের মানুষের ২০০ বছরের পরাধীনতার শিকল। নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা সততা, দক্ষতা আর দেশাত্মবোধ নিয়ে ১৪ মাস ১৪ দিন বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা শাসন করেন। মাতামহ আলীবর্দী খাঁ শত্রুদের দমন এবং প্রজাদের কল্যাণে তাকে নিয়োজিত করেন এবং সব অন্যায়-অবিচার দূর করার উপদেশ দেন। মাতামহের মৃত্যুশয্যায় সিরাজ পবিত্র কুরআন স্পর্শ করে শপথ করেন দেশ, মাটি ও মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবেন। সিরাজকে পরিবারের ভেতরে-বাইরের শত্রুদের ব্যাপক মোকাবেলা করতে হয়।
নবাব পদে সিরাজের মনোনয়নে ঘসেটি বেগম, রাজবল্লভ, মীরজাফর ও শওকত জং তার প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে। মুর্শিদাবাদের শাসক শ্রেণী ও প্রভাবশালী মহল প্রথম দিকের নবাবদের সময় ধনসম্পদ কুক্ষিগত করার কাজে নিয়োজিত ছিল, সিরাজ শাসন ক্ষমতায় আরোহণের সাথে সাথে এ গোষ্ঠী আশঙ্কা করে যে, তরুণ নবাব বিপজ্জনক হতে পারে। সিরাজের সিংহাসন লাভ ইংরেজদের জন্য ছিল হুমকিস্বরূপ। কেননা পূর্ববর্তী নবাবদের মতো সিরাজ তাদের অধিকারের অপব্যবহার মেনে নিতে অস্বীকার করেন। চক্রান্তকারীরা ইংরেজদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে মুসলিম জাতিসত্তার কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বের পরিবর্তে সাময়িক কায়েমি ও স্বার্থান্বেষী মহলের ক্ষমতা লাভের চেষ্টা কিভাবে কোটি কোটি মানুষের গলায় গোলামীর জিঞ্জির পরিয়ে দিয়েছে পলাশীর ঘটনাবলী আমাদের তাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
কিন্তু ইতিহাসের চরম ট্রাজেডি হচ্ছে কেউ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। সচেতন দেশপ্রেমিকদেরকে তাই আজ পলাশীর পরিণতিকে সামনে রেখে দেশবাসীকে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে সোচ্চার করাতে হবে এবং আরেকটি পলাশীর চক্রান্ত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। উচ্চাভিলাষী মীর জাফর ও বর্ণ হিন্দুদের ষড়যন্ত্রের পলাশী প্রান্তে বাংলার স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয়। তাই ঘষেটি বেগম, মীরজাফর ও জগৎশেঠদের দোসরদের কোনভাবে বিশ্বাস করার প্রয়োজন নাই। এটাই পলাশী দিবসের শিক্ষা।
পলাশী যুদ্ধে ইংরেজদের জয় হয়েছিল ষড়যন্ত্রের শক্তিতে এবং আভ্যন্তরীণ বিশ্বাসঘাতকতায়। নবাবের হত্যার মধ্য দিয়ে ২০০ বছর ব্রিটিশ গোলামির জিঞ্জিরে আবদ্ধ হয় এই উপমহাদেশ। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান যোদ্ধা শোকে-সঙ্কটে-লড়াই-সংগ্রামের প্রতীক। পলাশীর যুদ্ধে পর ধীরে ধীরে সমগ্র উপমহাদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। সিরাজ-উদ্-দৌলার ত্রুটি ছিল তিনি সব প্রতিদ্বন্দ্বীকে একই সাথে মোকাবেলা করতে চেয়েছিলেন।
মুসলিম শাসকরা যতদিন সংস্কৃতির ব্যাপারে সচেতন ছিলেন ততদিন চারদিক থেকে সমৃদ্ধি এসেছে। কিন্তু যখন তারা শুধু সামরিক ও রাজনৈতিক যোগ্যতার ওপর বেশি নির্ভর করেছেন, তখন তাদের ভৌগোলিক স্বাধীনতাও বিপন্ন হয়েছে। সম্রাট আকবর ‘দীন-ই-ইলাহি’ নামে এক অদ্ভুত জগাখিচুড়ি ধর্ম প্রচার করেন। ফলে উপমহাদেশে মুসলিম শাসনের পতনের সূচনা হয়। ১৭০৭ সাল থেকেই ভারতবর্ষে মুসলিম শাসন দুর্বল হতে থাকে।
জনকল্যাণের পরিবর্তে আরাম-আয়েশে আগ্রহী হয়ে ওঠার ফলে জনগণের সাথে শাসকদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শত্রুর ব্যাপারে জনগণ সচেতন ছিলেন না। এ কারণে পলাশীর ঘটনার আগে রাষ্ট্রের শক্তি ও সংহতি দুর্বল হয়ে পড়ে। ব্রিটিশ বণিকরা ছিল মুসলিমবিদ্বেষী। আর ব্যবসায়ের আড়ালে এ দেশে তাদের দোসর খুঁজতে থাকে।
মুসলমানের দুশমনরাই তাদের নির্ভরযোগ্য বন্ধু হয়ে ওঠে। মুসলিম শাসন ধ্বংস করার জন্য এ দেশের ভেতর একটি শক্তি সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। তারা ছিল চক্রান্তকারী, কিন্তু সাহস কম ছিল। ইংরেজ বণিকরা তাদের সে অভাব পূরণ করে। ১৬৭০ সালে ইংরেজ কোম্পানির জব চার্নক প্রথম কলকাতায় এসে নোঙর করেন।
এর পর থেকেই এ দেশে ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে তাদের স্বার্থের সখ্য জোরদার হতে থাকে। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন বৃহস্পতিবার দুই পক্ষ পলাশীর প্রান্তরে মুখোমুখি হয়। নবাবের বাহিনী নিয়ে কাঠের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকলেন ইয়ার লতিফ, রায় দুর্লভ, মীরজাফর ও মীর মদন। মোহলাল সহ দেশপ্রেমিক সৈন্যরা নবাবের পক্ষে যুদ্ধ শুরু করলেন। তাদের হামলায় ইংরেজ বাহিনীর অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে।
কিন্তু মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় সে দিন একতরফাভাবে পলাশীতে জয়ী হয়ে ক্লাইভ বিজয়ীর বেশে মুর্শিদাবাদে প্রবেশ করেন। সে দিন প্রত্যেকে যদি একটি করেও ঢিল ক্লাইভের দিকে নিক্ষেপ করত তবে সেখানেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাংলা দখলের স্বপ্নসাধ ধুলোয় মিশে যেত। ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে তথাকথিত যুদ্ধের পর সিরাজ-উদ্-দৌলা শিশুকন্যা জোহরাকে নিয়ে গোপনে নৌকাযোগে মুর্শিদাবাদ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। পথিমধ্যে রাত যাপনের জন্য রাজমহলের এক মসজিদে আশ্রয় নিলে এর মোতওয়াল্লি দানেশ ফকির বিশ্বাসঘাতকতা করে নবাবকে শত্রুপক্ষের হাতে তুলে দেন। মালদহের ফৌজদার এবং মীরজাফরের ভাই দাউদ খান নবাবকে সপরিবারে বন্দী করে মীরজাফরের জামাতা মীর কাসেমের হেফাজতে মুর্শিদাবাদ পাঠিয়ে দেন।
কুখ্যাত মিরনের আদেশে আলীবর্দী খাঁর পালিত নিমকহারাম মোহাম্মদী বেগ জাফরগঞ্জ প্রসাদে নির্জন কক্ষে ২ জুলাই গভীর রাতে নৃশংসভাবে সিরাজকে হত্যা করে। ষড়যন্ত্রকারীরা বিজয় মিছিল শেষে লাশ বাজারের এক ময়লার স্তূপের নিক্ষেপ করে। এ অবস্থায় মাত্র একজন মানুষ সন্ধ্যার পর গিয়ে হাজির হলেন মীরজাফরের দরবারে, তার নাম মীর্জা জয়নুল আবেদীন তিনি মীরজাফরের কাছে সিরাজের লাশ দাফনের অনুমতি চাইলেন। মীরজাফর, ক্লাইভ, জগৎশেঠ, ইয়ার লতিফ ও রাজবল্লভের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলেন, জয়নুল আবেদীনকে সিরাজের লাশ দাফনের জন্য দেওয়া যাবে, তবে তাকে মুর্শিদাবাদ শহরের বাইরে নিয়ে দাফন করতে হবে। মীর্জা জয়নুল সিরাজের খন্ড-বিখন্ড লাশ ভাগীরথী নদীর ওপারে নিয়ে যান।
ভাগীরথী নদীর পানি দিয়ে সিরাজকে গোসল করান। তারপর খোশবাগে নবাব আলীবর্দী খাঁর সমাধিসৌধের বারান্দায় তাকে দাফন করেন। সেই থেকে এ দেশের জনগণের ভাগ্যের বিপর্যয় ঘটে। ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের অবসান হয়। পলাশী যুদ্ধের ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের মতামত : ঐতিহাসিক মেলেসন পলাশীর প্রান্তরে সংঘর্ষকে ‘যুদ্ধ’ বলতে নারাজ।
তার মতে, ‘নবাবের পক্ষে ছিল ৫০ হাজার সৈন্য আর ইংরেজদের পক্ষে মাত্র ৩ হাজার সৈন্য। কিন্তু প্রাসাদ ষড়যন্ত্রকারী ও কুচক্রী মীর জাফর, রায় দুর্লভ ও খাদেম হোসেনের অধীনে নবাব বাহিনীর একটি বিরাট অংশ পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কার্যত কোনো অংশগ্রহণ করেনি। এই কুচক্রীদের চক্রান্তে যুদ্ধের প্রহসন হয়েছিল। ’ অপর ঐতিহাসিক ড. রমেশ চন্দ্র বলেন, ‘নবাব ষড়যন্ত্রকারীদের গোপন ষড়যন্ত্রের কথা জানার পর যদি মীর জাফরকে বন্দী করতেন, তবে অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারী ভয় পেয়ে যেতো এবং ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলে পলাশীর যুদ্ধ হতো না। ’ অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ হবিবুল্লাহ এর মতে, ‘For, in retrospect, Polassey symbolized ultimately a far greater catastrophe for the Muslim than it did for the Hindu.’ ইতিহাসবিদ মোবাশ্বের আলী তার ‘বাংলাদেশের সন্ধানে’ গ্রন্থে লিখেছেন ‘নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা প্রায় লক্ষ সেনা নিয়ে ক্লাইভের স্বল্প সংখ্যক সেনার কাছে পরাজিত হয় মীর জাফরের মুনাফেকিতে।
’ অতি ঘৃণ্য মীর জাফরের কুষ্ঠ রোগে মৃত্যু হয়। কিন্তু বাংলার ট্রাজেডি এই যে, মীরজাফরেরা বারবার গোর থেকে উঠে আসে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মীরজাফর ও ঘষেটি বেগম প্রচন্ড ক্ষমতালোভী ও জাতীয়তা বিরোধী ছিলেন। ধারাবাহিকতা রক্ষায় তাদের উত্তরসূরীও একই আচরণ অব্যাহত রেখেছে। তারা এ দেশকে প্রতিবেশী দেশের ‘কলোনী’ বা অঙ্গরাজ্য বানাবার স্বপ্নে বিভোর।
আর সে কারণেই বিনা শুল্কে ট্রানজিট প্রদানের জীবন মরণ প্রচেষ্টা। পলাশীর যুদ্ধ ও নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা : পলাশীর যুদ্ধে দেশি বেনিয়া ও হিন্দুদের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলার পরাজয় ও হত্যার মধ্য দিয়ে মীরজাফরের নেতৃত্বে একটি পুতুল সরকার গঠিত হয়। ইংরেজ ঐতিহাসিকদের সূত্রে প্রাপ্ত বিভিন্ন বিবরণ এবং পাঠ্য পুস্তকের মাধ্যমেও পলাশীতে নবাবের পতনের জন্য বেশ কিছু কারণকে দায়ী করা হয়। যাতে নবাবের বিভিন্ন দুর্বলতা ও ব্যক্তিগত চরিত্রের উপর আক্রমণ করা হয়েছে। এগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে ইংরেজ ষড়যন্ত্রকারী ও তাদের দোসরদের অপকর্মকে আড়াল করার অপচেষ্টা মাত্র।
নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা কখনও ইংরেজদের উপর আক্রমণ পরিচালনা করেননি। তিনি ইংরেজদের সাথে করা চুক্তি মেনে চলেছিলেন ১৭৫৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। অল্প বয়স্ক নবাব ক্ষমতা লাভ করে আত্মীয়দের বিরোধিতা ও শত্রুতা মোকাবেলা করে হয়তবা সহজেই সাফল্য লাভ করতে পারতেন। কিন্তু তার আস্থাভাজন কিছু লোকের বিশ্বাসঘাতকতায় তা সম্ভব হয়নি। ব্যক্তিগত অদূরদর্শিতা বা চারিত্রিক ত্রুটির জন্য সিরাজ-উদ্-দৌলা ব্যর্থ হননি।
ব্যর্থতার কারণ ছিল তাঁর প্রশাসনের লোকদের বৈরিতা ও বিশ্বাসঘাতকতা, প্রভাবশালী বাঙালিদের স্বার্থপরতা, মোঘল সম্রাজ্যের অংশ হিসেবে বাংলার দুর্বলতর অবিচ্ছেদ্যতা, বাংলার অবিকশিত নৌবাহিনী, ষড়যন্ত্র আর কূট-কৌশলের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠাকারী ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদের ঘৃণ্য পরিকল্পনা। সিরাজ-উদ্-দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে ইউরোপের কাছে এশিয়ার পরাজয় ঘটে। নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলার পতন বাঙালি ও বাংলাদেশীদের জীবন ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। বয়সে তরুণ হলেও নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলার চিন্তা ছিল নিখুঁত ও নির্ভুল। সিরাজ-উদ্-দৌলা বুঝতে পেরেছিলেন, বিদেশি ইংরেজরাই একদিন এদেশের স্বাধীনতা ও সম্পদ কেড়ে নিতে পারে।
তিনি যাদেরকে বিশ্বাস করেছিলেন, তারাই ইংরেজদের সাথে চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে তার বিপক্ষে চলে যায়। পরাজিত হয়ে নবাব শেষ মুহূর্তে ঘাতকের কাছে প্রাণভিক্ষা নয়; ওজু করে দু রাকাত সালাত আদায়ের সুযোগ দানের অনুরোধ করেছিলেন। তা রক্ষা করা হয়নি। স্বদেশ ও স্বজাতির বিরুদ্ধে এ রকম নাফরমানির নজির অন্য কোন জাতির ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সিরাজ-উদ্-দৌলা দেশের জন্য জীবন দিয়ে আজও বেঁচে আছেন মানুষের হৃদয়জুড়ে।
তার আদর্শ থেকে জন্ম নিয়েছেন শত শত বীরযোদ্ধা, ফকির মজনুশাহ, হাজী শরীয়তউল্লাহ, তিতুমীর ও হাবিলদার রজব আলীর মতো মুজাহিদরা। নিষ্ঠুর শোষণ-নিপীড়ন ও নির্মম গণহত্যার মাধ্যমে ব্রিটিশরা মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত। বিশ্ব ইতিহাসে এ অপরাধের কোনও বিচার এখনও হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ইহুদি হত্যাকন্ড, ভিয়েতনামের মাইলাই হত্যাকান্ড, বসনিয়ার মুসলিম গণহত্যার দায়ে যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতে পারে; তাহলে উপমহাদেশে লাখ লাখ গণহত্যা এবং বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সম্পদ পাচারের দায়ে অপরাধী ঘাতকদের বিচার হবে না কেন? স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা হয়ত সফলতা লাভ করতে পারেন নি, কিন্তু তিনি স্বদেশকে তুলে দেননি সাম্রাজ্যবাদের হাতে। পরাজয়ের পর তিনি হয়ত নিজের শেষ রক্ষা করার জন্য আপোষ করতে পারতেন; তিনি তার জন্য বিন্দুমাত্র চেষ্টাও করেন নি।
শহীদ নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা প্রতিটি দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্য প্রেরণা এক অমীয় উৎস। মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন তার শাহাদাতকে কবুল করুন। আমীন
সূত্র : প্রথম আলো, সিলেটের ডাক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।