আমি জন্মের প্রয়োজনে ছোট হয়েছিলাম, এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি । ।
সকাল বেলায়ই মীরজাফরের বহুসাধের ঘুমখানা ভাঙ্গিল তাহার টিনের চালে ঢিলের আওয়াজে। কে রে কে রে করিয়া যদিও তাহার খেদিয়া যাওয়ার কথা তিনি তথাপি নীরব রইলেন। কেননা তিনি ভালো করিয়াই জানেন কে বা কাহারা এইসব কার্য সম্পাদন করিতেছে।
ইদানিং বেশকিছু উটকো পোলার আবির্ভাব হইয়াছে। তাহারা বেশ গোলযোগ করিয়া তাহার জমানো সাত পুরুষের ধান্ধায় তালা ঝুলাইতে চায়। এই কয়দিনের পুঁচকা কিছু পোলা কিই বা করিবার ক্ষমতা রাখে, এই ভাবিয়া তিনি বহু আয়েশ করিয়া তাহার নব্যতম বালিকা বধূটিকে জড়াইয়া পুনরায় যখনই চক্ষু মুদিয়া কানে কানে ফিসফিসাইলেন তুমি কত্ত সুন্দর গো! বালিকা বধূ ঘষেটি বেগমও মুচকি হাসিয়া যেই কিছু একটা কহিতে যাইতেছে এমনই সময় তাহাদের মাথার পার্শ্বস্হ জানালার কপাটে কেজি দুয়েক ওজনের একখানা জগদ্দল মাটির ঢেলা আছড়াইয়া পড়িতেই বালিকার মুখের কথা গলাপথে ভেতরেই নামিয়া গেল।
এইবার মীরজাফর চটিলেন। তাহার লেটেষ্ট বধূর প্রেমবাণী শুনিতে না পাইয়া তিনি রাগে কাঁপিতে কাঁপিতে রওনা হইলেন লর্ড ক্লাইভের বাড়ি অভিমুখে।
ঘটনা শুনিয়া ক্লাইভ বলিলেন এই পোলাগুলিকে ছোট করিয়া দেখা উচিত হইবে না। ইহারা লেটেষ্ট জামানার পোলা। ঢিল মারিতে মারিতে কোন সময় না ইট পাথরে হাত পাকাইয়া ফেলে! এরপর দেখিবা ককটেল বোমাও আসিয়া ঘরের চালে ল্যান্ড করিতেছে।
মীরজাফর আঁতকাইয়া ঢোক গিলিলেন তবে তাহা নিজের জন্য নাকি আপকামিং বধূর হতাশায় বোধগম্য হইল না।
ব্যাঙের মত বহুকষ্টে কন্ঠার হাড়খানি নাচাইয়া সে কহিল ক্লাইভ ভাইজান, তাইলে উপায়!
ক্লাইভের ঠোঁটের উত্তর বর্ডারে কিঞ্চিত হাসির আভাস টের পাওয়া গেল।
এ হাসি চিনা আছে মীরজাফরের। ইহা ইবলিশ কিসিমের হাসি আর এর মাজেজা হইল ক্লাইভ বাবাজি সমাধান পাইয়া গেছেন।
ক্লাইভ তাহার লিগ্যাল আনলিগ্যাল সমস্ত পুত্রদিগকে ডাকিয়া কহিলেন, যাও মীরজাফরের ছানাপোনাগুলাও সাথে কইরা রাস্তায় নাইমা পড়। রাস্তায় গরু ছাগল দেখলে পিটাইবা, পাখি দেখিলে ঢিল মারিবা, ওইসব নুতন ছোঁড়াগুলিকে দেখিলে একটু আস্তে দেখিয়া শুনিয়া আগাইবা, সৈন্য সামন্তরেও একটু দেইখা- একলা পাইলে কিলাইবা আর দলে থাকিলেই উল্টা দৌড়াইবা। পোলাগুলি কিচিরমিচির করিতে করিতে রওয়ানা হইল।
মীরজাফরও গালে একখানা পান পুরিয়া চিবাইতে চিবাইতে বাসা অভিমুখে।
ঘষেটি বেগম পথ চাহিয়া রহিয়াছে।
নবাব সিরাজ-উদ-দ্দৌলা।
তিনি বড়ই চিন্তিত তাহার রাজ্যপাট নিয়া। এতটাই চিন্তিত কিছুক্ষণ আগেই তিনি পানির গ্লাস ভাবিয়া দোয়াতের কালিতে চুমুক দিয়াছেন।
এখন তাহার মুখমন্ডলের অর্ধেকাংশ কালি বেষ্টিত। কিন্তু সেইদিকে তাহার ভ্রুক্ষেপের সময় নাই। তিনি এখন পায়চারি করিতে ব্যস্ত।
গোলাম হোসেন অদূরে দাঁড়াইয়া বহুক্ষণ হাতে ইশারা করিয়া নবাবের দৃষ্টি তাহার মুখমন্ডলের কালির প্রতি আকর্ষিত করিবার চেষ্টা করিতেছিলেন। কিন্তু নবাবের আজ তাহাও চোখে পড়িল না।
তিনি সক্রোশে কহিলেন ওই মীরজাফর আর ক্লাইভের এত সাহস। আমার রাজ্যে পোলাপাইন লেলাইয়া দিয়াছে! আমার গরু ছাগল পিটাইয়া, সৈন্য কিলাইয়া আমার সুশাসনে লালবাত্তি জ্বালাইছে!
কাঁপিতে কাঁপিতে তাঁর চোখ পড়ির গোলাম হোসেনের দিকে।
গোলাম হোসেন তখনও নিজ মুখে হাত বুলাইয়া নবাবকে ইশারা প্রদানে ব্যস্ত। নবাব দেখিয়া কহিলেন তুমিই বুঝিয়াছ গোলাম হোসেন, তবে মুখে নয় মাথায় হাত বুলাইতে হইবে।
গোলাম হোসেন আঁতকাইয়া কহিলেন কাহাদের মাথায় হুজুর? ওই পুঁচকা নয়া জামানার পোলাগুলির?
নবাব মুখ ঝামটাইয়া কহিলেন আরে ধুর, না।
মীরজাফরের।
গোলাম হোসেন উলটাইয়া পড়িতে পড়িতে কোনমতে সামলাইলেন। সভাসদেরাও চোখ উলটাইয়া চাহিয়া রহিলেন।
নবাব হাসিয়া কহিলেন, আরে মীরজাফররে বুকে না টানিলে সে ক্লাইভের সাথে মিশিয়া নবাব বিরোধী আন্দোলনে যাইবে। তখন তাহাদিগকে দমন করা শক্ত হইবে।
তার চাইতে মীরজাফরের মাথায় হাত বুলাইয়া তাহারে দিয়াই ক্লাইভের মাথা ভাঙ্গিব। অতঃপর মীরজাফরেরে সাইজ করা তো সময়ের ব্যাপার মাত্র।
ওরে কে কই আছিস ওই নয়া পোলাপাইন তিন চারটারে ঢিল সমেত ধইরা আন।
আর মীরজাফর সোনারে দাওয়াত দে আমার, আইজ রাতে ককটেল পার্টি !!
বিঃদ্রঃ
যদি কেউ মীরজাফরের স্হলে জামায়াত কিংবা হেফাজতী, ক্লাইভের স্হলে বিম্পি আর সিরাজ-উদ-দ্দৌলার স্হলে আম্মালীগ পড়েন তবে নিজ দায়িত্বে পড়িবেন।
কোনমতেই এইজন্য লেখক দায়ী নহে ।
।
। । সা। ত।
কা। হ। ন। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।