চলে যাবো বহুদুর..। “ভাই কই যাবেন? ভাড়া দেন জলদি”।
কথাটা শুনেই বুঝি হুশ ফিরল আমার। তাকিয়ে নিজের ল্যাপটপের ব্যাগটা কে আর একটু জোড়ে আকড়ে ধরে বললাম “জিয়াকলনি, কত?”ভাড়াটা দিয়েই জানালার বাইরে তাকালাম। আগারগাও ক্রস করছি।
হটাৎ হাসিই পেল। এতদিন যে বড় বড় বুলি ঝেরে এসেছি আজ তার একটা পরিক্ষাই দিয়ে আসলাম। মাত্র ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ড এর ঘটনা, কিন্তু একটু এদিক সেদিক হলেই দেউলিয়া হতে চলেছিলাম। কাঁধের ল্যাপটপ, পকেটে ২০০০০ টাকা আর দুই-দুইটা মোবাইল; নিঃস্ব হওয়ার চরম পর্যায়ে পৌঁছাতে আমার মত মানুসের এর চাইতে বেশি কিছু লাগত না।
আজ রাজশাহী থেকে ৪টার বাসে উঠেছিলাম যে ১০টা-১১টার মধ্যে ঢাকা পৌঁছে যাব।
পথের বিশাল ভিড় ঠেলে বাসটা যখন কল্যাণপুর থামল; যাচ্ছলে! ১টা বেজে গেল। ছোট ব্যাগটা এক কাধে নিয়ে পথে নামলাম। চারপাশ তাকিয়ে দেখি আজ যেন ঢাকায় কারফিউ লেগেছে। অন্য দিন যখন ফ্রেন্ড দের এখানে নামাতে আসি খুব ভিড় থাকে কিন্তু আজ সব ফাঁকা! একটা চায়ের দোকান দেখে বরাবরের মত পা বাড়ালাম। আমাদের ফ্রেন্ড দের একটা নীতি আছে।
কোথাও গিয়ে চা না খেলে মনেই হয় না ঐ খানে এসেছিলাম, যতক্ষণ না ঐ এলাকার এক কাপ চা না খেলাম। চা খেতে খেতে ভাবছিলাম যে সেই চীনদেশের মত দুরের জিয়া কলোনি এখন কিভাবে যাব। একা থাকলে সমস্যা ছিল না, কিন্তু ৩ টি ইলেক্ট্রনিক্স আছে যে সাথে আবার পকেটের মানিব্যাগটার কথাও তো ফেলনা না। এমনিতেই চা দোকানের মামা কিভাবে যেন তাকাচ্ছিল। ভয় বললে তো ইজ্জত চলে যাবে তাই বলি কেমন যেন লাগছিল আমার।
মানে মানে সরে এলাম ওখান থেকে।
“হ্যা...লো, কি হইসে বল ব্যাতা?”
নাম বলা যাবে না ভাই, কিন্তু বক্তার গলা শুনেই আর আমার ওকে বলতে ইচ্ছা করল না যে একটু কষ্ট করে এসে আমাকে নিয়ে যা। মেজাজ টাই গেল খারাপ হয়ে। অন্যরা আমাকে ঘুম থেকে তুলে কল্যাণপুর-যাত্রাবাড়ী বাইক নিয়ে অযাচিত ভ্রমন করিয়ে আনে রাত বিরাতে আর আমি কাওরে পাইতাছিনা। দুই নাম্বার সিগারেট টা অর্ধেক থাকতেই নিচে ফেলে সমস্ত রাগ ঐ টার উপর দিয়েই চালালাম দে দারসে।
ক্যামনে যাই ক্যামনে যাই!!! নাহ সিএনজি নিব না। ছিনতাইকারী তার শ্বশুরবাড়ি নিয়ে চলে যাবে। কোন বাস ও নাই যে যাব। শেষে এক রিকশা দেখে এগিয়ে গেলাম।
“মামা, ফার্মগেট যাবেননি?”
“১২০ টাকা।
হনেক দূর তো মামা”
“তাইলে সব চেয়ে কাছে কই যাবেন?”
“শ্যামলি, ১০ টাকা”
চলেন বলেই উঠে বসলাম।
নাহ কিছুতেই আজ ছিনতাইকারীর পাল্লায় পরা যাবে না। আগে শ্যামলি যাই। তারপর কিছু একটা উপায় ভাবা যাবে। হিসাব করে দেখলাম সবমিলে লাখ টাকা আমার সাথে।
রাগ হচ্ছে খুব। আর সময় জায়গা পেলাম না! এখানে আটকে আছি, রুমে পৌঁছান তো অনেক দূর। আহ!রুম, ব্যাগে তো আম্মু পোলাও মাংস দিসে কখন যে খাব। ব্যাগটা কাধে নিয়ে নিলাম। কোন কিছু হলে এই ব্যাগও হারান যাবে না।
ধুর ছাই এইরকম অনেক টাইম গেসে কখন কিছুই হয়নি ঠিকই চলে যাব। আর কিছু হলেও দুই একটা বাড়ি না মেরে কাউকে কিছু দিব না। আজ যা হয় হোক আমার। প্রেস্টিজের ব্যাপার। যাহ্ বেশি ভাবছি।
তাই আর কিছু হবে না আজ মনে হয়।
শ্যামলি নেমে প্রেস্টিজ উধাও। এখানে তো আরও ফাঁকা কেও নাই। ল্যাপটপ এর ব্যাগ ও ক্রস করে কাধে নিলাম। দুই হাত ফাঁকা রাখা ভাল।
আহ! আমি প্রস্তুত। ভাবতে ভাবতে কখন ওভার ব্রিজের নিচের ছায়াতে এসছি জানিনা, হঠাৎ কে যেন ধাক্কা দিল দেয়ালের দিকে।
ওহ! পিঠে কিসের সাথে যেন বাড়ি লাগলো। সামনে তাকায় দেখি ৩ জন লোক। কি যে হইছিল আমার বিএমএ র বক্সিং এর সব চাইতে প্রথমে শিখানো দুই ঘুষি চালিয়েছিলাম কাছের দুই জনের মুখে।
একটু ফাক পেয়ে দে দৌড়। কখন একটা বাস এসে ছিল আল্লাহ মালুম কিন্তু চলে যাচ্ছে তো! চলন্ত বাস এই উঠার জন্য লাফ দিলাম। ধরতে পারিনি ভাল মত কিন্তু বাসের ঐ চ্যাংড়া পোলা টা যাকে পরে আমার সাক্ষাৎ সুপারম্যান মনে হইছিল সে ঠিক ই ধরে ফেলেছিল।
সিটে বসে শ্বাস ফেললাম। চেক করে দেখলাম সবই আছে আমার সাথে।
হাতের লোম খাড়া হয়ে আছে তখনো। আল্লাহকে ধন্যবাদ। পাশে বসা লোকটা জিজ্ঞেস করল,
“কি হইসে ভাই, ঠিক আছেন তো?”
“ছিনতাইকারী ভাই, বেচে গেছি”। বলেই একটা হাসি দিয়ে চুপ করে গেলাম। অন্য সময় হলে ঠিকি নিজের বীর গাঁথা শোনাতে বসে যেতাম।
কিন্তু তখন ইচ্ছা করল না। লোকটাও অদ্ভুত আর কিছু বলেনি যে আমি একটু উৎসাহ পাব।
পরে অনেকজনকে বলেছি ঘটনাটা, কারন ভালমতই পৌঁছাতে পেরেছিলাম সেদিন। অনেকে বিশ্বাস করেছে হয়ত কিন্তু বেশিরভাগ ই মনে হয়েছে করেনি। আমার কিছু যায় আসে না অবশ্য।
কিন্তু মাঝে মাঝে মনে পড়ে। আর মনে পড়লেই একটা প্রশ্ন থেকে যায়- ঐ তৃতীয় লোকটা কি করছিল?... লোকটা কি আদৌ ছিল? নাকি ছায়া দেখেছিলাম? নাকি ছিল ঠিকই কিন্তু বুঝে উঠতে পারেনি যে কি করবে?.........।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।