কান্না ভেজা চোখে প্রাপ্তি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে । আকাশটাকে তার বড্ড স্বার্থপর মনে হয় !কেমন নিজের মতো করে সেজেছে !আজকের আকাশটা একটু বেশীনীল মনে হয় তার । তার কষ্ট গুলো চুষে নিয়ে কি এমন নীল হয়ে গেছে?মনটা কিছুটা শান্ত হয়ে আসে।
ফাহিমের সাথে পরিচয় পর্বটা অনেকটা কাকতালীয় বলতে হয় ,সেদিন প্রচন্ড বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট চারিদিক থই থই করছিলো পানিতে,পরীক্ষা ছিলো বলেই বাধ্যহয়ে বেরুতে হয়েছিল প্রাপ্তিকে । এদিকে সময় ও খুব একটা নেই,অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়,একটা রিক্সাও রাজি হচ্ছেনা যেতে ।
ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজেই ছিঁড়ে ফেলতে । ওফ !আজকের পরীক্ষাটা না দিতে পারলে ও শেষ!পুরো একবছর পিছিয়ে যাবে সে ।
অস্থির হয়ে যখন রাস্তায় দৌঁড়াদৌঁড়ি করছিলো তখন ই ফাহিম রিক্সা থেকে নেমে যায় ওর সামনে,একই ভার্সিটিতে পড়ে দুজন কিন্তু কখনো কথা হয়নি ,নামটাই জানে শুধু । ফাহিমকে নামতে দেখে প্রাপ্তি কিছু সংকুচিত হয়ে যায় লজ্জায় । ফাহিম বলে উঠে কি ব্যাপার আপনাদের না আজ পরীক্ষা?এখনো যাননি ?সময়তো আর বেশি নেই।
হ্যাঁ ভাইয়া ,রিক্সা পাচ্ছিনা । কেউ যেতে রাজি হচ্ছেনা । কি যে করি ।
আচ্ছা আমি দেখছি ,বলে ফাহিম ও কয়েকটা রিক্সা দেখে । শেষে বিরক্ত হয়ে ফিরে আসে ।
বলে প্রাপ্তি এক কাজ করেন আমার রিক্সাটা নিয়ে চলে যান । সময় আর বেশি নেই ,দেরি করাটা ঠিক হবেনা ।
কিন্তু ভাইয়া আপনি কিভাবে যাবেন?
আরে যানতো আপনি ,আমার তাড়া নেই,হেঁটেও চলে যেতে পারবো ।
প্রাপ্তি রিক্সায় উঠে পিছন ফিরেদেখে ফাহিম ভিজে ভিজে হাঁটছে ফুটপাত ধরে । সেই থেকে অদ্ভুত একটা ভাললাগা কাজ করে প্রাপ্তিরভেতর ।
অল্পদিনেই খুব ভালো বন্ধুহয়ে যায় ওরা ।
সেই ভাললাগাটা ডালপালা গজিয়ে কখন যে ভালবাসার বৃক্ষে পরিণত হয়ে গেছে তা দুজনের কেউ টের পায়নি । যখন হুঁশ ফিরে এলো বুঝতে পারলো দুজন দুজনকে ছাড়া অচল । ফাহিমের ব্যক্তিত্ব প্রাপ্তিকে মুগ্ধ করতো খুব । নিজে ছিলো খুব গোছালো ফাহিম ঠিক তাই ছিলো ।
ফাহিম প্রাপ্তি সম্পর্কে সব জেন নিয়েছিল বলে ওর পছন্দমত চলতে খুব একটা সমস্যা হতোনা । এমনকি প্রাপ্তি পছন্দ করতোনা বলে ওর সামনে সিগারেট ও খেতোনা ও ।
সব যখন চলছিলো স্বপ্নের মত ,ঠিক তখনি প্রাপ্তির বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লাগলেন ওর মা । বাবা নেই বলে মাকেই সব সামলাতে হয় । প্রাপ্তি বুঝতে পারছিলো কি করবে ও ।
ফাহিম ততদিনে ভালো একটা চাকরি জুটিয়ে নিয়েছে । তাও কিছুটা ভয় কাজ করছিলো মনে ।
ফাহিমকে বলতেই ও কিভাবে জানি ওর মাকে রাজি করিয়ে প্রাপ্তির মায়ের কাছে পাঠায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে । প্রাপ্তির মা জানতেই পারেননি যে ওদের মধ্যে সম্পর্ক আছে । ফাহিমের মায়ের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে ফাহিমের বায়োডাটা দেখে বিয়েতে আপত্তি করেননি তিনি ।
প্রত্যয়ের ডাকে আর আলতো ছোঁয়ায় সম্বিত ফিরে পায় প্রাপ্তি । আজকের সকালটা খুব বাজে ভাবে শুরু হয়েছিল প্রাপ্তির । ফাহিম ইদানিং একটু বেশী রাগারাগি করে ওর সাথে ,ওকি বুঝেনা এই সময় মেয়েরা কতটা অসহায় বোধ করে?একটুবেশীই অভিমানি হয়? আবারো মা হতেচলেছে ও । তিন বছরের প্রত্যয়,ননদ.শ্ব াশুড়িকে নিয়েই ওর সংসার । শুরুটা ভালই হয়েছিল,ফাহিমের উপচে পড়া ভালবাসায় কোন ঘাটতি ছিলনা ।
মা বাবা সবাই কে ছেড়ে নতুন সংসারে মানিয়ে নিতে তাই খুব একটা বেগ পেতে হয়নি ।
কিছুদিন পরেই ফাহিমের মুখোশ খসেপড়ে ।
ইদানিং ওর প্রতি কোন খেয়ালই নেই ওর । অথচ ওরা দুজন স্বপ্ন দেখতো দুটি ফুটফুটে দেব শিশুর । ছেলে হলে প্রত্যয় মেয়ে হলে প্রত্যাশা।
সেই প্রত্যয় আজ আধো আধো কথায় মাতিয়ে রাখে সবাইকে । এখন প্রত্যাশার জন্যই অপেক্ষা !
ওর শরীরটা বেশ কিছুদিন খুব একটা ভাল যাচ্ছিলনা .কিন্তু ফাহিমের সেদিকে কোন খেয়াল ই নেই .অনেক রাত করে বাড়ি ফেরাটা ওর রুটিন হয়ে গেছে যেন .পার্টি থেকে মাঝে মাঝে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে ফিরে । কিছু বললে গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করেনা । ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ওর সময় হয়ে উঠেনা ।
অথচ বন্ধুদের সাথে আড্ডার জন্য প্রচুর সময় থাকে তার হাতে ।
এই নিয়ে প্রাপ্তি রাতে কথা উঠালে উল্টো ওর সাথে রাগারাগি করে বলে"আমাদের মা দাদিরা কোন ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল শুনি?সারাদিন ডাক্তার ডাক্তার কর কেন ?
কিচ্ছু না বলে সারারাত কেঁদেছিলও.ওকি ভুল করলো ফাহিমকেভালবেসে ?কে জানতো ছেলেরা বিয়েরআগে একরুপে থাকে আর বিয়ে হয়ে গেলে স্বরুপে ফিরে আসে । অথচ কতটা ব্যাকুল হয়ে ভালবাসতো তাকে,তাকে পাওয়ার জন্য ফাহিমের সাধনা দেখে বন্ধুরা হাসতো খুব । আজ সেই ফাহিম তাকে পেয়ে অবহেলা করছে !!
কিছুতেই এটা মন থেকে তাড়াতে পারেনা ,শারিরীক অসুস্থতার সাথেমানসিক ভাবেও ভেঙ্গে পড়ে প্রাপ্তি ।
ফাহিম সকালে কিছু মুখে না দিয়ে.ওর কোন খোঁজ না নিয়েই বেরিয়ে যায় । সেই থেকে ও শুধু কাঁদছে ।
সারাদিন কিছু খায়ওনি.গোসল ও করেনি । মনটা একটু শান্ত হলে ও গোসল করতে যায় ।
হঠাত্ মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করে উঠে । প্রবল ক্লান্তি আর ক্ষুধারতাড়নায় হোক কিংবা শারিরীক অসুস্থতায় হোক চোখে আঁধার দেখে,কিছুতেই নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা টলতে টলতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় সে .কতক্ষণ এভাবে ছিল মনে নাই তার ।
যখন জ্ঞান ফিরে নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিস্কার করে.চোখ না খুলতেই কেমন যেন অসস্তি লাগে অনুভব করে তার প্রত্যাশা তাকে ছেড়ে চলে গেছে! তার আর প্রত্যাশার জন্য অপেক্ষাকরতে হবেনা !দুর আকাশের ছোট্ট তারাটি হয়ে তাকে যেন ডাকছে বার বার "চলে এসো মা.মায়াহীন পৃথিবীটা তোমার জন্য নয় !
প্রাপ্তি একটি বার চোখ মেলে প্রত্যয় কে খুঁজে .চলে যায় প্রত্যাশার কাছে !একটি বারের জন্য ও তার মনে হয়না ছোট্ট প্রত্যয় কার বুকে মাথা গুঁজে ঘুমাবে ?
আকাশটা কি প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার জন্যই এমন রঙ্গিন সাজে সেজেছিল ? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।