আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একগুচ্ছ প্রত্যাশার ফুল

বাংলাদেশ নিয়ে ভাবনা, প্রত্যাশা ও সম্ভাবনার সংগ্রহমালা

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন: রাএে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা সূর্য নাহি ফেরে, শুধু ব্যর্থ হয় তারা\ কিন্তু রবি ঠাকুর কি জানতেন আমাদের এই বাংলায় প্রখরিত সূর্যের প্রত্যাশা কখনও বাস্তবতার পূর্বাকাশে উদিত হয় না? প্রচন্ডভাবে ব্যর্থ আমরা, কারণ সূর্যের বাস্তবতা কেবল বাস করে আমাদের স্বপ্নে যা এ জীবনে আর ধরা দেয় না। না হলে, স্বাধীনতার পঁয়এিশ বছর পরে এখনও কেন অশ্রু ঝরছে অবহেলিত ও প্রতারিত গণমানুষের যারা শুধু স্বপ্নকে লালন করে জীবন পাড়ি দিচ্ছে। সাফল্যের সূর্য তাদের জন্য একখন্ড স্বপ্ন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থমকে আছে একখানা লাল সবুজের পতাকায়। এধরণের বিড়ম্বিত বাস্তবতা থেকে মুক্তির জন্য গণমানুষ উদগ্রীব।

যারা ক্ষুধার দাসত্ব থেকে মুক্তির পাশাপাশি নাগরিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য, স্বস্তি, সন্তুস্টির নিরবচ্ছিন্ন নিশ্চয়তা চায়। দারিদ্রমুক্ত, বৈষম্যহীন ও গণমূখী এক সমাজের স্বপ্ন তাদের ভাবনা ও স্বপ্নকে আচ্ছন্ন করে রাখে। তাই, আড্ডার ভাবনায় উদ্দীপ্ত হোক একগুচ্ছ প্রত্যাশার ফুল। বাংলাদেশ খুব অদম্য। কোন কালেই আমরা থমকে যাইনি।

প্রচন্ডভাবে আমরা বারবার জেগে উঠেছি। এখানেই বাংলাদেশের সাফল্য। জেগে উঠার এই চিরন্তন ও অদম্য শক্তি হচ্ছে আমাদের সম্ভাবনার গ্র্যাভিটি। ইংরেজীতে যাকে রেজিলিয়েন্সী বলে। তাই, শত ব্যর্থতার গ্লানি ঘুচাতে আবার আমরা নতুন করে স্বপ্নগুলো সাজাতে থাকি।

আজ দেশ পার হচ্ছে এক ক্রান্তিকাল। রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে এখন আবার নেতারা সমস্বরে গণতন্ত্রের জন্য গণসংগীত গাইতে শুরু করছেন। কি বিচিএ!!! রাজনীতির দুবর্ৃওায়ন কতোটা গভীর ও ব্যাপক তার জন্য কোন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের দরকার হয় না। সাধারণ মানুষের চোখে দিনের আলোর মতো স্পস্ট হয়ে উঠছে। মানুষ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে জনগণের জনপ্রিয় ম্যান্ডেট নিয়ে জোটবদ্ধ শক্তি দেশকে কি বিশালভাবে ঠকিয়েছে।

সেবক হয়েছে ভক্ষক। কারও কারও আকস্মিক ও অবিশ্বাস্য শ্রেণীগত উওরণ বেশ উপভোগ্য বলে মনে হচ্ছে। জনগণের সম্পওি কুক্ষিগত করার অসুস্থ ধারাবাহিকতা গত পাঁচ বছরে অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। তাই চলমান শুদ্ধি অভিযান কতোটা গভীর ও ব্যাপক হবে তা জনগণ খুব মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। আমরা আবারও প্রতারিত হতে চাই না।

আমাদের প্রত্যাশার ফুলগুলোকে আবারও ঝরে দিতে পারি না। রাজনীতির সাময়িক উত্থান-পতনের কাছে আমরা আমাদের প্রত্যাশাকে বন্ধক রাখতে চাই না। দেশের প্রতি আমাদের অখন্ড ভালবাসা ও মমত্ববোধকে গোষ্ঠীগত ও রাজনৈতিক বৃও থেকে বের করে আনতে হবে। দেশ কারও ব্যক্তিগত সম্পওি নয়। গণতন্ত্র কারও সাজানো আর পাতানো খেলার পণ্য নয়।

আমরা আবার গেয়ে উঠতে চাই: "সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে। সার্থক জনম, মা গো, তোমায় ভালবেসে..." \ দেশকে ভালবাসার জন্য দরকার স্বচ্ছতা, আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা। তাই খুব দরকার হঠকারী রাজনীতির স্থায়ী অবসান। বিনাশ চাই সেসব অপশক্তির যারা বিভক্তি ও জুজুর ভয় দেখিয়ে শাসন করতে চায়। বিজয়ের পতাকায় যারা কালিমা লেপে দিয়েছে দেশের মানুষ তাদেরকে স্থায়ীভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।

যারা রাজনীতির দুর্বৃওায়ন করেছে তারা আজ হতাশ। তারা আজ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় উদগ্রীব। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অপমানিত করেছে তারা পায়ের নীচে মাটি হারাচ্ছে। অর্থ দিয়ে পণ্য কেনা যায়। গণমানুষের স্বাধীন মনন ও আত্মাকে নয়।

একবার মানুষকে ঠকানো যায়, কিন্তু বারবার নয়। জনগণ এখন অনেক সচেতন। তাদেরকে আবার বোকা বানানো যাবে না। তাই, একগুচ্ছ প্রত্যাশার ফুল ফুটাতে দরকার সমবেত উদ্যম, উদ্যোগ আর উপলদ্ধি। এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আজ বললো, "অন্ধকারে একটু আশার আলো কি দেখাবেন? আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ শুধু বইয়ের পাতা আর ছবির পর্দায় দেখেছি তাদের মাঝে কি আরেকবার চেতনার প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবেন"।

আমরা সত্যি অভাগা। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ার আগেই তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তাই আমার সাথে যোগ দিন প্রত্যাশার ফুলের পরিচর্চায়। তাকে জিঁইয়ে রাখতে। প্রত্যাশাকে বিকশিত করতে আর সূর্যের মতো সত্য করতে।

তাই, এখন থেকে অসম্ভব সম্ভাবনার বাণী শুনবেন। সাফল্যের কথা শুনবেন। একটি সূর্য সকালের অপেক্ষায় শুরু হোক আমাদের সমবেত পদচারিতা। আমাদের কন্ঠে প্রতিধ্বনিত হোক দেশ গড়ার নতুন সুর: গাব তোমার সুরে দাও সে বীণাযন্ত্র, শুনব তোমার বাণী দাও সে অমর মন্ত্র। করব তোমার সেবা দাও সে পরম শক্তি, চাইব তোমার মুখে দাও সে অচল ভক্তি\ সইব তোমার আঘাত দাও সে বিপুল ধৈর্য, বইব তোমার ধ্বজা দাও সে অটল স্থৈর্য\ নেব সকল বিশ্ব দাও সে প্রবল প্রাণ, করব আমায় নি:স্ব দাও সে প্রেমের দান\ যাব তোমার সাথে দাও সে দখিন হস্ত, লড়ব তোমার রণে দাও সে তোমার অস্ত্র\ জাগব তোমার সত্যে দাও সেই আহবান।

ছাড়ব সুখের দাস্য, দাও দাও কল্যাণ\ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।