আর্জেন্টিনা-নাইজেরিয়া ম্যাচের টিকিট, ফ্রিজ, টেলিভিশন, মুঠোফোন উপঢৌকন দিয়েও সুপার কাপে দর্শক মাঠে আনতে পারেনি আয়োজকরা। মাঠ বিমুখ দর্শকদের আজ শনিবার (৬ আগস্ট) বিকালে কোটি টাকার সুপার কাপের ফাইনাল দেখতে আসার ‘নিমন্ত্রন’ দিয়েছেন দেশের দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বি ক্লাব আবাহনী ও মোহামেডান! দুদলের কোচ অমলেশ সেন ও শফিকুল ইসলাম মানিক আগাম ঘোষণা দিয়েছেন ‘যুদ্ধংদেহি, তবে উপভোগ্য ম্যাচ উপহার দিবেন তারা। ’ কোচদের চোখে ফাইনালটা ‘ড্রিম’। তাই তো ‘দর্শকদের মন ভরাতে খেলবো’ বললেন দুই অধিনায়ক প্রাণতোষ ও হাসান আল মামুন। স্বাভাবিকভাবেই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিকাল সাড়ে ৩টায় বেশ জম্পেশ একটা ম্যাচ হবে।
কারণ, ম্যাচটা যে দুই ‘চিরশত্রæ’র, কোটিপতি ক্লাব হওয়ারও! তাই তো উত্তেজনা।
স্পেনের বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ, ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-লিভারপুল, ইতালির এসি মিলান-ইন্টার মিলান ও বাংলাদেশে মোহামেডান-আবাহনীর বৈরিতাটা যেন চিরন্তন সত্যে পরিণত হয়ে গেছে! এদের মুখোমুখি হওয়ার অর্থই- টান টান উত্তেজনা, আবেগ, ‘অন্য রকম’ কিছুর আবহ তৈরি হওয়া; মর্যাদার ম্যাচ বলে কথা! তাই তো দেশের ফুটবলামোদীরা বিভক্ত হয়ে যায় দুটি ভিন্ন ধারায়। আবার সেই মুহুর্ত এসেছে। অবশ্য ফুটবল পুরনো রুপে নেই বলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্মৃতিরোমন্থন করেন ফুটবলামোদীরা। বিষয়টা জানেন-বোঝেন-মানেন আবাহনী কোচ অমলেশ সেন।
তাই তো ফাইনালটাকে দেখছেন একটু অন্যভাবে, অনেক দিন পর দুদল কোন টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলছে। দর্শকরা এ ম্যাচের দিকে তাকিয়ে। আবাহনী চেষ্টা করবে ভালো একটা ম্যাচ উপহার দিতে। ’ সে জন্যই নাকি সুপার কাপের ফাইনালে আবাহনীকে চেয়েছিলেন সাদা-কালো কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক। আর আবাহনীর সাবেক ফুটবলার ও ম্যানেজার সত্যজিত দাস রুপু বললেন, ‘আবাহনী-মোহামেডানকে ছাড়া যে দেশের ফুটবল নিয়ে ভাবা যায় না সেটা আরেকবার প্রমানিত হলো।
’
কিন্তু ‘তারকাশূণ্য’ দুদল কতোটা ভালো ফুটবল নৈপূণ্য প্রদর্শন করতে পারবেন- সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে! তবে সাদা-কালোরা এগিয়ে। কারণ, ফেডারেশন কাপে শেষ চারে যেতে না পারা মোহামেডানের উত্থানপর্ব চলছে লিগের দ্বিতীয় পর্ব থেকে। আর ফেডারেশন কাপজয়ী আবাহনীর পারফরমেন্স ক্রমশ নামছে! মৌসুম শুরুতে মোহামেডানের উন্নতি ধরা পড়ে স্বাধীনতা কাপের সেমিফাইনাল দিয়ে। কোচ শফিকুল ইসলাম মানিকও বললেন, ‘উন্নতির গ্রাফটা দেখুন। চেষ্টার ত্রæটি ছিলো না বলে দল এখন অনেক পরিণত।
মৌসুমের শুরুতে গোল খেয়ে চাপে পড়ে গেলে বের হতে পারতাম না। এখন গোল খেলেও ফিরিয়ে দেয়ার শক্তি ও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। ’ অবশ্য সমস্যাটা কেটেছে নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার সানডে যোগ দেয়ার পর। লিগের প্রথম পর্বে ১১ ম্যাচে তাদের গোল ১০টি। দ্বিতীয় পর্বের সংখ্যাটা ১৬।
এর ১২টিই সানডের! তৌহিদ, ফ্রান্সিস, ভাসানিকে সুপার কাপের জন্য ধার নেয়ায় শক্তি নিঃসন্দেহে সমীহ করার। অবশ্য সানডেকে ঘিরে আবাহনীর কৌশল চোখে ধরা পড়লে বিকল্প পরিকল্পনা ঠিকই সাজিয়ে ফেলবেন মানিক। কোচ বললেন, মোহামেডান একক ফুটবলার কেন্দ্রিক না, খেলতে চায় এগারো জনের দল হিসাবে। ’
স্কোরিং সমস্যাটা প্রকট বলেই তো কোনো গোল না করেই সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠেছে আবাহনী! শেষ চারে দুবার পিছিয়ে পড়া দলকে রÿা করেছেন রবিন। আজ তিনিও তুরুপের তাস হয়ে উঠবেন আউডু ইব্রাহিমের মতো।
তবে রবিনকে নিয়ে শঙ্কা কাঁটছে না অভিজাত পাড়ার দলটির। ইনজুরি কাটিয়ে এখনও পুরোপুরো সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি তিনি। ইনজুরি সমস্যায় রয়েছেন গোলরÿক জিয়াউর রহমান। অথচ বেশ কিছু তারকা দল ত্যাগ করার পরও ফেডারেশন কাপে শক্তিমত্তার প্রমাণ দিয়েছিলো আবাহনী। শেখ জামাল ধানমÐিকে ৫-৩ গোলে হারিয়ে জিতে নেয় ট্রফি।
এরপর থেকেই শুরু অধঃপতন। ‘লিগের মাঝপথ থেকেই ইনজুরির কারণে আমাদের পারফরম্যান্স নিচের দিকে নামতে শুরু করে বলে স্বীকারও করেছেন কোচ অমলেশ সেন। সমস্যাটা মূলত গোল করতে না পারা। সেটাই আসলে আমাদের ভয়ের প্রধান জায়গা। ফিনিশিং ভালো হলে শিরোপা আমাদেরই হবে।
’ সুযোগ কাজে লাগানোর কথা বললেন মোহামেডান কোচও। শফিকুল ইসলাম মানিক বললেন, ট্রফিটা দুদলের জন্য উন্মুক্ত। ম্যাচে প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগানোর ওপর নির্ভর করবে ভাগ্য। শেখ জামালের বিপÿে সেমিফাইনালের পারফরমেন্স দেখাতে পারলে আমরা চ্যাম্পিয়ন হবো। সে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।
’
উত্থান-পতনের যোগ-বিয়োগ শেষে অবশ্য দুদলের ব্যবধান খুব বেশি না। তাই দুর্দান্ত এক ফাইনালের মঞ্চ প্রস্তুত। তাতে নির্ধারণ হবে ‘কোটিপতি ক্লাব‘। তবে ফুটবলাররা নতুন মৌসুমের দল বেছে নেয়ার পর সুপার কাপ কতোটা জমেছে তার বড় তথা শেষ পরীÿাটাও কিন্তু এই ফাইনাল। সেটা জিতে আবাহনী গতকালের শেখ কামাল স্বর্ণপদক দেয়ার উৎসবটা শেষ প্রান্ত থেকে ফের শুরু করে দিতে পারে।
আবার মোহামেডান মতিঝিল ক্লাব পাড়াটাকে বানাতে পারে উৎসবস্থল। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।