আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরাপুরি কপি পেস্ট , আমার কুনো দোষ নাই : 'আওয়ামী লীগ ম্যাচ ফিক্সিং করেছে'

যে হারে কারেন্ট যাইতেসে তাল পাখা দিয়ে বাতাস করতে করতে দেশের কারেন্ট এর উপর যেমন চাপ কমতাসে হাতের ভালই ব্যায়াম হইতাসে, সারাদিন না থাকলে হয়ত পানি আনতে নিচে যাইতে হইতে পারে, হেভি ইন্সট্রুমেন্ট আর লাগবনা যারা ব্যায়াম করে মগবাজারের গলির মোড়ে মমিন মিয়ার চায়ের দোকান কদিন ধরে গমগম করে। এখানে 'দেশে-বিদেশের' তাবৎ বিশ্লেষকরা জড়ো হন আর চায়ের কাপে টর্নোডো তোলেন। দেশের টিভি চ্যানেলগুলোর টকশোর চেয়ে ঢের বেশি যুক্তিপূর্ণ আর উপভোগ্য এসব আড্ডা। আমি টকশো বাদ দিতে পারি, মমিন মিয়ারে না, না মানে- তার চায়ের দোকানের আড্ডা না। কারণ, 'টকশোর টিয়েরা' যে ভবিষ্যদ্বানী বা বিশ্লেষণ করেন তার ৯৯ ভাগই ফলে না।

অথচ তৃণমূল আর মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের আড্ডার বিশ্লেষণগুলো শতভাগই ফলে যায়। শুধু এ কারণেই না, তাদের আলোচনায় গ্রামের মানুষের কথা, তাদের বঞ্চনার কথা উঠে আসে। নিজেকে তাদের মানুষই মনে হয়। আমি একেবারে ডুবে যাই, মজে যাই তাদের আড্ডায়। চার সিটির নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা ডুবে যাওয়ার পর মিডিয়ায় টানা কয়েকদিন শীর্ষসংবাদ সাপ্লাই দিয়ে চলেছে খবরটা।

এ নিয়ে মমিন মিয়ার দোকানও জমে উঠেছে। মেইন রাস্তার পাশে টোলঘরের মতন একটা ছাপরা ঘরেই বালক মমিনের ‘রাজকীয়’ দোকানটা। ওপাশ দিয়ে গেলে ওই দোকানের আড্ডা চুম্বকের মতো টানে। যেদিন ও দিকটা মাড়াই, বাধ্য হতে হয় আড্ডায় বসতে। সেদিনও বসতে হলো ... নির্বাচনের ঠিক দুদিন পর।

ইতোমধ্যে মুষলধারে আড্ডা শুরু হয়ে গেছে ... : টেস্ট ম্যাচে জিততেই হবে। আওয়ামী লীগ এবারও টেস্ট স্ট্যাটাস পেতে চায়। তাই ওয়ানডে ম্যাচে বিএনপিকে ছাড় দিল তারা। ইচ্ছে করে হেরে গেল আওয়ামী লীগ। দেখলেন ভাই, তেলেসমাতিরে ভাই স-অ-ব তেলেসমাতি।

ম্যাচ ফিক্সিং আর কাকে বলে। : ভাই আপনি তো দেখি আচ্ছা একটা লোক। জিতলেও দোষ। আবার এখন হেরে গেছে তাতেও দোষ খুঁজতেছেন। আজিব তো... আপনাদের কারণেই দেশের উন্নতি হয় না... (ফোড়ন কেটে আরেকজন) : এভাবে হেরে গেলে দোষতো মানুষ খুঁজবই।

এর আগে এই দেশে দেখছেন ক্ষমতাসীনরা এরকম সিটি নির্বাচন ওয়াকওভার দিয়ে দেয়? এ দ্যাশে কোনো কিছুকেই সন্দেহের বাইরে রাখতে পারেন না। দেখেন না, একটার পর একটা চাঞ্চল্যকর শিরোনাম চাপা পড়ে যাচ্ছে। একটা বড় ঘটনা আইসা আরেকটারে চাপা দিচ্ছে...। সুরঞ্জিত বাবুর গাড়িতে পাওয়া গেল টাকার বস্তা, এখনো তারে মন্ত্রীর পদ থেকে বাদ দেয় নাই। পত্রিকা খুললেই তার কথা বেশি পাওয়া যায়।

মন্ত্রীর নামের আগে লেখা থাকে ‘দপ্তরবিহীন মন্ত্রী’। আচ্ছা, এই লোকটার কি লাজ-শরম কিছু নাই নাকি! অর্থমন্ত্রীর কথা ভুলে গেছেন? তিনি নিজেই কিন্তু শেয়ারবাজারে লোকজনকে বিনিয়োগের উদাত্ত আহ্বাণ জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, একটা দেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের ভূমিকা অনেক। বিনিয়োগ করুন। এর কয়েক মাস পরই ধস নামে বাজারে।

তিনি তখন বলেন, ওটা নাকি ফাটকা বাজার। এভাবে ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীকে হাতে ভিক্ষার থালা ধরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে তার অবদান কম নয়। সেই কেলেঙ্কারি নিয়ে যে তদন্ত হয়েছিল তার প্রতিবেদনের সুপারিশও এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। আপনারা কি কেউ জানেন সেই প্রতিবেদন এখন কোন গোরস্তানে আছে? (বাধা দিয়ে আরেকজন) : ভাই, অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগে কাউকে শাস্তি দেয়ার বিধান কি আছে? অযথা মন্ত্রীদেরকে এভাবে দোষারোপ করবেন না। : না না না।

মন্ত্রীদেরকে দোষ দেই না ভাই। দোষ তো আমাদের কপালের। আর হ্যাঁ, যেখানে প্রধানমন্ত্রী নিজে সুরঞ্জিত বাকে বাদ দিচ্ছেন না, সেখানে তিনি কি করবেন? তিনি তো আর বলেন নাই যে, তাকে মন্ত্রী সভায় রাখতে হবে। শুধু সুরঞ্জিত বাবু, মুহিত সাহেবকে দোষ দেন ক্যান, সৈয়দ আবুল হোসেনের কথা বলেন। তিনি নাকি দেশপ্রেমিক মানুষ।

আবুল হোসেন দেশপ্রেমিক হলে দেশে আর মন্দ মানুষের অস্তিত্ব থাকার কথা না। ড. ইউনূস যেমন বলেছেন, ৩০ বছর পর দারিদ্র খুঁজতে যাদুঘরে যেতে হবে। এখন আমাদের দেশে দেশপ্রেমিকের ছড়াছড়ি; দেশের শত্রু বা দেশবিরাগী পাইতে গেলে যাদুঘরে যাইতে হবে। (কথা শেষ হওয়ার আগেই কয়েকজনের অট্টহাসি। ) (প্রসঙ্গ সিটি নির্বাচন থেকে অন্যদিকে যাচ্ছে দেখে সঞ্চালকের দায়িত্বে থাকা পণ্ডিত-মতোন মাঝবয়েসি লোকটা এবার মুখ খোলেন।

) : সরকার আর নির্বাচন কমিশন এতো সুন্দর একটা নির্বাচন উপহার দিল, গালে উঠল না ভাই। আফসোস আপনাদের জন্য। খালি অবিশ্বাস আর অবিশ্বাস। ইনশাআল্লাহ, এই নির্বাচন কমিশন দিয়েই সিটি নির্বাচনের মতো ফরমালিনমুক্ত নির্বাচন হবে। দেশে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন থাকলে তত্ত্বাবধায়কের দরকার কি? (আড্ডার এক কোনায় ঝিম মেরেছিলেন একজন।

এবার তিনি শুরু করেন। ) : নির্বাচন ফরমালিনমুক্ত হবে কিনা তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেন না। কারণ সব সম্ভবের দেশ এটা। কবি যথার্থই বলে গেছেন, এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি... দেখেন, সিটি নির্বাচনের পরপরই অসংখ্য নেতা-নেত্রী কিন্তু চিকিৎসার জন্য ছুটে গেল সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক-সৌদি আরব। আমাদের দেশে কি তাহলে ভাল চিকিৎসাব্যবস্থা নাই? না থাকলে সে জন্য ওই নেতারাই কিন্তু দায়ী।

তাদের লুটপাটের কারণেই আজ চিকিৎসাখাতও পক্ষাঘাতগ্রস্ত। আমাদের এই নেতাদের দেখলে আমার সেই খাবার হোটেলের ম্যানেজারের গল্প মনে পড়ে। খাবারে দুর্গন্ধ পেয়ে এক কাস্টমার হোটেলবয়কে ডেকে ঝাড়ি দিয়ে বলল, তোর ম্যানেজারকে ডাক। বয় তখন মুখ কাচুমাচু মুখ করে বলল, উনিতো পাশের হোটেলে খেতে গেছেন। : ভাই, ঝেড়ে কাশেন।

আপনার কথাটা ক্লিয়ার না। কি বলতে চান বলে ফেলুন; ডাক ডাক গুড়গুড় করবেন না। : নির্বাচনে বিরোধী জোট কেন জিতলো কয়েকদিন ধরে মিডিয়ায় তার পোস্টমর্টেম চলছে। 'চোর গেলে বুদ্ধি বাড়ে'র মতো অবস্থা। এই মিডিয়া কই ছিল নির্বাচনের আগে? সরকারি দলের ভরাডুবি হতে যাচ্ছে এমন ভবিষ্যদ্বানী করার মতো প্রথম শ্রেনীর কোনো মিডিয়া কিন্তু ছিল না।

এখন 'পরাজয়ের ১০টি কারণ' 'পরাজয়ের ২০ কারণ' মার্কা নিউজ করছে তারা। কি সুন্দর বিশ্লেষণ! : ভাই ঠিক বলছেন, তবে আপনার কি মনে হয়, সরকারি দলের ভরাডুবির পেছনে বড় কারণ সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণের ব্যর্থতা। : একটা মজার কথা বলে নিই। পৃথিবীর সব দেশে প্রার্থীকে জেতানোর জন্য ভোটাররা ভোট দেন। একমাত্র ব্যতিক্রম আমাদের দেশ।

এখানে কাকে হারাতে হবে সেইটা বিবেচ্য হয়ে উঠে নির্বাচনে। অর্থাৎ আমরা কাউকে জেতানোর জন্য ভোট দেই না, বরং হারানোর জন্য ভোট দেই। আর সরকারের ব্যর্থতার প্রভাবতো আছেই। এ ছাড়া বিরোধীদের বিজয়ের পেছনে বড় প্রভাবকের কাজ করেছে অখ্যাত থেকে হঠাৎ 'বিখ্যাত' আর আলোচিত হয়ে উঠা হেফাজত। হেফাজত কেমন সংগঠন সে বিতর্কে যাব না।

সেটা এখানে বিবেচ্য না। এই হেফাজত কিন্তু আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংকের একাংশ ছিল। অথচ তাদের সাথেই সরকার সম্প্রতি দফায় দফায় প্রতারণা করেছে। অরাজনৈতিক দাবি করা এই কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সুবিশাল কম্যুনিটি এতোদিন আওয়ামী লীগের পাশেই ছিল। সরকারের মন্ত্রীরা অন্তরালে দফায় দফায় দেন-দরবার করেছেন।

হেফাজত যতদিন সরকারের পক্ষে ছিল ততোদিন কিন্তু এরা ভাল ছিল। আর যখন এরা সরকারকে সাফ না করে দিল তখনই হয়ে গেল জঙ্গি, সন্ত্রাসী। এখন তাদের কাছে টেনেছে বিরোধী জোট। রাজনীতির মধ্যে পলিটিক্স কিন্তু এভাবেই হয়। আরেকটা বড় ফ্যাক্টর : গত নির্বাচনের সময় দেশের ১ কোটি ৮০ লাখ তরুন ভোটার লীগের জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল।

তারা এবার বিভক্ত। তাই এবার তাদের ফলাফলে প্রভাবকের মধ্যে আনা যায় না। তাদের সামনে মুলা ঝুলানো হয়েছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের। কিন্তু দৃশ্যত কোনোটাই এ সাড়ে চার বছরে হয়নি। দেশের রাস্তাঘাটের কাজ শুরু করা যায়নি ছাত্রলীগ-যুবলীগের টেন্ডারবাজি আর গোলাগুলি শুরু হবে-এই আতংকে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের কাজ কি আর হলো? একটি শাসকদলের অঙ্গসংগঠনের জন্য জাতীর এত বড় ক্ষতি। অকল্পনীয়। : ঠিক বলছেন ভাই। যুক্তি আছে আপনার কথায়। চার নেতার মধ্যে ডাকসাইটে নেতা হলেন কামরান।

তিনি নিজের কেন্দ্রেই জিততে পারেননি। খুলনাকে বলা হয় প্রধানমন্ত্রীর এলাকা সেখানে ১৪ দলের প্রার্থী হেরেছে সর্বোচ্চ ভোটের ব্যবধানে। এসব কিন্তু বিএনপি প্রার্থীদের বিজয়ী করানো নয়, বরং নির্বাচন হয়েছে সরকারের স্বেচ্ছাচারীতা, হঠকারিতা, একগুয়েমির জবাব দিতে। কে জিতলো সেটা ভোটারদের বিবেচ্য ছিল না। ছিল আওয়ামী লীগকে হারাতে হবে।

: আপনাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে দেশে সব সময়ই আওয়ামী লীগেরই ক্ষমতায় থাকার কথা। তাদের ভুল শোধরানোর আহবাণ এখন পত্রপত্রিকা জুড়ে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, মন্ত্রীরা একটু ভালো মতো সততা নিয়ে কাজ করলে সারা জীবন আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় থাকবে, থাকতে পারবে, থাকতে হবে। এতো মানুষ যে ভোট দিয়ে জিতিয়ে দিলো একটা দলকে, তারা কি সবাই বিভ্রান্ত হয়ে এই কাজ করেছে? আমি বলবো এটা সংসদীয় গণতন্ত্রের মোড়কে ব্যক্তির যে স্বৈরতন্ত্র চলছে তার প্রতি কষে একটা ঠাস করে চড়। আজকের এই স্বৈরতন্ত্র ছড়িয়ে পড়েছে সব জেলায়, উপজেলায়, পাড়া-মহল্লায়, অফিসে, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিসহ সর্বত্র।

এটা সেই পাপের ফসল। এসব স্থানে সেই স্বৈরতন্ত্রের ধারাবাহিকতায়, দম্ভ আর আচরণে কত মানুষের কত অসহ্য যন্ত্রণা তৈরি হয় প্রতি মুহুর্তে সেটা কি আমরা খোঁজ নিয়েছি কখনো? ক’জন জানেন, মানেন। বিজয়ের রাতে শুধু রাজশাহীতেই দেখা গেল কত মানুষের উল্লাস-উদযাপন। তারাও তো এদেশের মানুষ। কষ্টে থাকা মানুষ পরিবর্তন চায়, মনে রাখবেন।

এভাবে তারা বিএনপিকে বাদ দিয়ে একবার আওয়ামী লীগ, লীগকে বাদ দিয়ে বিএনপিকে ভোট দিয়ে চলেছে। কি পেয়েছে আমার দেশের মানুষ? রাস্তায় নিরাপত্তা নেই, বেডরুমেও ঢুকে যায় ঘাতক, রাস্তায় কুপিয়ে খুন করা হয় নীরিহ পথচারীকে। খুনের রহস্য উদঘাটনে একেরপর এক নাটক মঞ্চস্থ হয়। জজ মিয়া থেকে ডিএনএ-রহস্য উন্মোচন হয় না। মিডিয়াগুলো এ ব্যাপারে ফলোআপ খবর লেখার সাহস পায় না।

নাগরিক নিরাপত্তা রাষ্ট্র না দিলে কে দেবে? : ভাই আমরা এই চক্র থেকে বের হতে পারি না। আমাদের দুর্ভাগ্য প্রতিটি নির্বাচনে 'মন্দের ভালোকে' ভোট দিতে হয়। ভালো লোক পাই না। ভালো লোকরা রাজনীতিতে আসতে চায় না। যে দুবৃত্তায়নের দেয়াল তৈরি করা হয়েছে সেই দেয়াল ভেঙে অন্যদের সেখানে ‘প্রবেশ নিষেধ।

‘ আর ঢুকতে পারলেও ভালরা সেখানে টিকবেন কি করে? জাতির মেরুদন্ডেও ফরমালিন ঢালছে এ দেশের অসাধু রাজনৈতিক মহল। ফরমালিনমুক্ত সৎ মানুষরা তাই দাম পান না। কিছু কিছু মহল তৃতীয় শক্তি, চতুর্থ শক্তি বলে চিল্লাচিল্লি করছে। এরা সুযোগের অভাবে ‘ভাল’ মানুষ। এদেরকে মানুষ বিশ্বাস করে না।

হুদাহুদি এরা রাজনীতির মাঠে হাকডাক করে। বিরক্তিকর। : আপনার অনেক কথার সাথেই আমি একমত। গত ২২ বছরের ইতিহাসকে আমি দেখি জনতার প্রতিশোধের ইতিহাস হিসেবে। অনেকে র, সিআইএ বা আই এস আই দেখেন চোখে।

আমি দেখি বাংলাদেশের মানুষ প্রতিটি ইলেকশানে প্রতিশোধ নিয়েছে। এই প্রতিশোধ নেয়ার সময়, সে তার ভাল মন্দ চিন্তা করে নাই। যখন সুযোগ পাইছে মানুষ প্রতিশোধ নিয়ে দেখিয়ে দিছে। ১৯৮৬ তে হাসিনা এরশাদের সাথে ইলেকশানে গিয়েছিল, জোট ভেঙ্গে। অথচ তার আগের দিন শেখ হাসিনা ডিক্লেয়ার করেছিলেন, স্বৈরাচারের সাথে যে ইলেকশান করবে, সে হবে জাতীয় বেইমান।

আমি মনে করি, ১৯৯০ সালে শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়ার থেকে আলাদা করার মত তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু, শেখ হাসিনার ওই সিদ্ধান্ত মানুষকে একটা সমুচিত জবাব দেয়, তিনি মিথ্যা কথা বলেন। এবং খালেদা জিয়া দেখতে ভাল এবং নরম গলায় কথা বলতেন সেই সময়। এই ব্যাক্তিগত ইমেজ, ১৯৯০ সালে নির্বাচনে ভাগ্য গড়ে দেয়। এই নির্বাচনে প্রতিশোধটা গুরত্বপুর্ণ ছিল না যদিও।

কিন্তু, ১৯৯৬ এর ইলেকশান ছিল ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এর বিএনপির দুঃশাসনের প্রতিশোধ। বিএনপির পাঁচ বছর ছিল দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীরনের প্রথম ধাপ। ব্যাপক চাঁদাবাজি ছিল পাড়ায় পাড়ায়। রাস্তা ঘাট হয়নি, স্কুল, কলেজ কিচ্ছু হয়নি। কোন, ভিশান এম্বিশান ছিল না, সরকার বা জনগণের।

যে স্বপ্ন নিয়ে, মানুষ স্বৈরাচার থেকে মুক্তি চাইছে, তার পথে বিএনপির প্রথম ৫ বছরে কিছুই আগায়নি। ফলে, ১৯৯৬ এ মানুষ প্রথম প্রতিশোধটা নেয়। ২০০১ মানুষ আবার প্রতিশোধ নেয়, আওয়ামী লীগের উপর। কারণ, আওয়ামী লীগের আমলে দেশের প্রান্তে প্রান্তে বৃদ্ধি পায় হত্যা, খুন, চাঁদাবাজি। কিন্তু, আওয়ামী লীগ কোনো রাখডাক না করেই এই হত্যার দায়ে অভিযুক্তদের পক্ষে দাঁড়ায় নির্লজ্জের মতো।

দুর্নীতি ছিল বহতা নদীর মতো। ২০০৭ তো ছিল তত্ত্বাবধায়ক। ফলে, মানুষের হাতে কিছু ছিল না। কিন্তু, ২০০৯ এ মানুষ প্রতিশোধ নেয় তারেক জিয়ার উপর। তারেক জিয়া ‘মিঃ টেন পার্সেন্ট’ এর ভুমিকা নেয়া, হাওয়া ভবন এর দুর্নীতি এবং প্রশাসনের পরতে পরতে দুর্নীতির বিস্তার।

এখন ২০১৩, মানুষ আওয়ামী লীগের ওপর প্রতিশোধের স্ট্রিমরোলার চালানো শুরু করছে। কারণ, আওয়ামী লীগ এর এই আমল ছিল, বাংলাদেশের বিগত ২২ বছরের সবচেয়ে অদক্ষ, সবচেয়ে খুললাম খুললা দুর্নীতির আমল, যার সাথে যোগ হয় সরকারের ডিভাইড এন্ড রুল পলিটিক্স। আওয়ামী লীগ এর ক্যাডাররা সারা দেশের পাড়ায় পাড়ায় কি যে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে, খাল, বিল, রোড, ব্রিজ, টেন্ডার, সেতু সব কিছু যেভাবে খুবলে খাচ্ছে তাতে মানুষ আওয়ামী লীগকে কোন মতেই ছাড় দিবে না। এই প্রতিশোধের ধারাবাহিকতায় সিটি করপরেশান নির্বাচনে আজ আওয়ামী লীগ শোচনীয় পরাজয়। : ভাই যা বললেন।

অসম্ভব যুক্তি। দ্বিমত করার কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। ... আপনি টিভি টকশোতে যান না কেন? : হাসালেন ভাই। আমাকে টিভিগুলো ডাকবে কেন? আমার কি বুদ্ধিজীবীর বিশাল সাইনবোর্ড আছে নাকি? আরেকটা কথা, সেদিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এই টকশো নিয়ে কি বলেছেন জানেন? তিনি বলেছেন, ‘এটা টকশো না, টাকা শো। টিভিতে বসে রসিয়ে রসিয়ে যারা দেশ উদ্ধার নিয়ে কথা বলেন, ধর্ষন বন্ধ করতে বলেন, তাঁরা নিজেরাই অনেকে পর্নোগ্রাফির সঙ্গে যুক্ত।

' আমি অতো অ্যাগ্রেসিভলি বলতে চাই না। টকশোর সিংহভাগ বিশিষ্টজন বিশেষ মহলের পে করা, তাদের হয়েই তারা টিয়ে পাখীর মতো কথা বলেন। এদের কথা কেউ বিশ্বাস করে না। যেটা বলছিলাম, প্রতিশোধের রাজনীতি। এখানেই আমাদের হতাশাটা।

এই প্রতিশোধের রাজনীতিতে আমরা আজ এক দিনের বাদশাহ, আর ৪ বছর ৩৬৪ দিনের গোলাম। কিন্তু, এইটা তো কোন সলিউওশান হইতে পারে না? আলটিমেটলি তো আমরা জনগণই নিজেকে নিজের সাথে প্রতারণা করছি। আমরা কেন এক দিন আমাদের রাইট এক্সারসাইজ করতাছি, বাকি ৪ বছর ৩৬৪ দিন আমাদের দাবী আদায় সচকিত হচ্ছি না। এই সচেতনতা না আসা পর্যন্ত দেশের কুসংস্কৃতির রাজনীতির পরিবর্তন হবে না। এই সিটি কর্পোরেশানের রায় এ, আমার তাই কোন বিকার নেই।

কি হবে? সেই একই দুর্নীতির দুঃশাসন। এবং আওয়ামী আমলে যা হারাইছে, সব পুষিয়ে নিতে তাদের আওয়ামী লিগ এর এই আমল থেকে আরও বেশি দুর্নীতি করতে হবে। চলছে চলবে। খুললাম খুললা দুর্নীতি। : এর থেকে মুক্তি কি? এভাবে আর কত বছর একজন ভাল শাসক- এক জন মাহাথির এর অপেক্ষায়, আমরা পালাক্রমে এক দুর্নীতিবাজ থেকে আরেক দুর্নীতিবাজ এর খপ্পরে ক্যাঙ্গারুর মত লাফিয়ে যেতে থাকব, কাকের মত চোখ বন্ধ করে।

এখন চাই একজন দেশপ্রেমীক শ্বৈরশাসক। [আড্ডা শেষ হয়ে আসে। পেটে ‘৫ কাপ’ চা পড়েছে। এ যেন ৫ বছরের জমে থাকা হতাশা হঠানোর অহেতুক চেষ্টা। আমি বের হয়ে আসি।

পেছনে পড়ে থাকে মমিনের কয়েকটা ভাঙা চেয়ার-টেবিল আর টুল। ফুটপাত ধরে হাঁটি, মমিন মিয়ার চায়ের আড্ডাটা আমার সাথে হাঁটতে থাকে। কানে বাজতে থাকে আড্ডার কয়েকটা লাইন, ''একজন দেশপ্রেমিক শ্বৈরশাসক চাই। '' ''একজন মাহাথির চাই। '' ''একজন ভাল রাজনীতিক চাই''...] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.