আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাস্তিকতার বিড়ম্বনা

اللهم هب لي الحجة البالغة والحكمة الموهوبة মনিরামপুর সরকারী কলেজ। প্রশস্ত ভূখণ্ডের এদিক সেদিক অগোছালভাবে নির্মাণ করা হয়েছে পৃথক পৃথক কয়েকটি বহুতল ভবন। প্রতিটি ভবনের আলাদা আলাদা নাম রয়েছে। একেবারে পশ্চিম দিকের ভবনটির নাম বিজ্ঞানভবন। সেই ভবনটির একটি ক্লাসে ছাত্রদের রসায়ন পড়াচ্ছিলেন আওলা স্যার।

তার প্রকৃত নাম মোঃ আওয়াল হোসেন। এতদিন পড়াশুনা করে যে কয়টি সনদপত্র হাসীল করেছেন তার সবকটিতে এই নামই লেখা আছে। কিন্তু তিনি এই নামটি বদলে দিয়েছেন। প্রথমত নামটির প্রথমে মোঃ ও শেষের হোসেন অংশটুকু তার পছন্দ নয় কারণ তিনি একজন নাস্তিক দ্বিতীয়ত আওয়াল শব্দটি আরবী আর একজন নাস্তিক হিসাবে আরবী শব্দ তার ভাল লাগার কথা নয়। এককথায় নানাবিধ কারণে তিনি নিজের নাম পরিবর্তন করে ‘‘আওলা’’ রেখেছেন।

এই নামে ডাকলেই তিনি খুশি হোন নিজেকে এই নামেই পরিচয় দেন। জনাব আওলা ছাত্রদের পড়ানোর সময় সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করেন। রসায়ন পড়ানোর ফাকে ফাকে বিভিন্ন বিষয়ে গল্প গুজব করে রস আনয়নের চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণ পাঠদানের পর তিনি ছাত্রদের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললেন, - তোমরা সবাই কি ‘‘আল্লাহ’’ তে বিশ্বাস করো? ছাত্ররা যে যার মতো সম্মতি জানায়। তারা সবাই মুসলিম, দুএকজন কেবল হিন্দু আর বৌদ্ধ।

- তোমাদের মধ্যে কে কে মুসলিম হাত তোলো। ক্লাসের প্রায় সবাই হাত তোলে। শুধু যে দু-তিন জন ভিন্নধর্মী ছেলে ছিল তারা হাত তোলে না। তারা উৎসুক দৃষ্টিতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। আওলা স্যার মাথাটা ডানে বামে ঝাকিয়ে নিয়ে বলে, - তোমাদের আমি একটি প্রশ্ন করি, আল্লাহ কি সব কিছু সৃষ্টি করতে পারেন? ছাত্ররা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।

কেউ কেউ অনুচ্চ আওয়াজে হ্যাঁবোধক উত্তর দেয়। যেনো সুযোগ পেয়ে গেছেন এমন ভঙ্গিতে আওলা স্যার বলে, - তাহলে তিনি কি এমন একটি পাহাড় তৈরী করতে পারেন যা তিনি নিজেও নড়াতে পারবেন না। যদি বলো না তাহলে তো তিনি সব কিছু তৈরী করতে পারেন এই কথা মিথ্যা হয়ে যায় অর্থাৎ আল্লাহ্ অক্ষম প্রমানিত হয়ে যায় আবার যদি হ্যা বলো তাহলেও তিনি অক্ষম প্রমানিত হন যেহেতু তিনি পাহাড়টি নড়াতে সক্ষম নন। তাহলে তোমরা এখন কি উত্তর দেবে? প্রশ্নটি করে আওলা স্যার ছাত্রদের মাথায় শেউলার জট পাকিয়ে দিল। তারা বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা-গবেষণা করেও এর কোনো সমাধান বের করতে সক্ষম হলো না।

কেউ কেউ বলল, - আমরা এর উত্তর জানিনা ঠিকই কিন্তু মসজিদের ইমাম সাহেব নিশ্চয় বলতে পারবেন। আমরা আগামী কাল এর উত্তর জেনে আসবো। ছুটির পর কয়েকজন উৎসুক ছাত্র এলাকার বরেণ্য একজন আলেমের সাথে পরামর্শ করলে তিনি বললেন, - শুধু উত্তর শুনিয়ে দিলে নাস্তিকদের বোঝানো যাবে না। তাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য একটি বিশেষ পদ্ধতির অনুসরণ করতে হবে। এর জন্য অবশ্য তোমাদের কলেজের অধ্যক্ষের সাহয্যের প্রয়োজন হবে।

জনাব মহাসীন হক ঐ কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি একজন ধার্মিক মুসলিম। তার সাথে মওলানা সাহেবের গভীর বন্ধুত্ব ছিল। তিনি সেদিনই কয়েকজন ছাত্রকে নিয়ে অধ্যক্ষের বাড়িতে গমণ করে তার সাথে পরামর্শ করলেন। কি করতে হবে তিনি তাদের ভালভাবে বুঝিয়ে দিলেন।

পরদিন কলেজে উপস্থিত হয়ে আওলা স্যার অপ্রীতিকর অবস্থার সম্মূখীন হলেন। বিজ্ঞানভবনের সব ছাত্ররা ক্লাসের বাইরে প্রতিবাদ মিছিল করছিল। তাদের হাতে কাগজ ও কাপড়ের ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের ব্যানার ছিল তাতে লেখা ছিল, ‘‘খুনির বিচার চাই, আওলা স্যারের বিচার চাই’’ ব্যানারে নিজের নাম দেখে অতিমাত্রায় সঙ্কিত হয়ে আওলা স্যার অধ্যক্ষের রুমে ঢুকে পড়লেন। কাঁপা গলায় বললেন, - স্যার, এখানে কি হচ্ছে? মহাসীন সাহেব তার দিকে তাকিয়ে ক্রোধ মিশ্রিত কন্ঠে বললেন, - তুমি খুনি। ছাত্ররা তোমার বিচার চাচ্ছে।

আওলা স্যারের মাথা এবার পুরো আওলিয়ে গেলো, - আমি কাকে খুন করেছি, কখন খুন করেছি? - তুমি গতকাল রাতে তোমার স্ত্রীকে খুন করেছো। আওলা স্যার কাঁদো কাঁদো হয়ে বলেন, - আপনি এ কি বলছেন? সকালে তার হাতের গরম ভাত খেয়ে আমি কলেজে আসছি সে তো সুস্থ শরীরে বিদ্যমান রয়েছে। তাকে আমি হত্যা করলাম কিভাবে? মহাসীন সাহেব ঝাঝালো আওয়াজে বলেন, - তুমি কি গত রাতে তোমার স্ত্রীর সাথে একই ঘরে ছিলে না? আওলা স্যার অবুঝের মতো হ্যা সূচক মাথা নাড়তে নাড়তে বিষয়টি কতদূর পর্যন্ত গড়ায় তা পর্যবেক্ষণ করে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে জনাব মহাসীন উঁচু কণ্ঠে বলেন, - তুমি কি ইচ্ছা করলেই তোমার স্ত্রীর মুখের উপর বালিশ চেপে ধরে বা অন্য কোনোভাবে তাকে হত্যা করতে পারতে না? আওলা স্যার এবারও সম্মতি জানান। মহাসীন সাহেব সত্য বলেছেন।

তিনি ইচ্ছা করলেই এটা করতে পারেন। টাকা পয়সা ওয়ালা একজন অলস মানুষ যতটা মোটা হতে পারে তিনি তেমন স্বাস্থের অধিকারী। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পাথরের মতো ভারি। দুই হাতের তালু হাতির কানের মতো প্রশস্ত অপরদিকে তার স্ত্রী রোগে শোকে আক্রান্ত জীর্ণ শীর্ণ একটা অবলা প্রাণী। বালিশের দরকার নেই শুধু নিজের হাত দুটি তার মুখের উপর মিনিট কয়েক ফেলে রাখলেই মশার মতো নিরবে তার মৃত্যু হবে।

কেউ কিছুই টের পাবে না। আওলা স্যারকে সম্মতি জানাতে দেখে মহাসীন সাহেব আবার বলেন, - যেহেতু তুমি ইচ্ছা করলেই তোমার স্ত্রীকে হত্যা করতে পারতে তাই তুমি একজন খুনি, তোমার কঠিন শাস্তি হবে। কঠিন শাস্তির কথা শুনে আওলা স্যারের বিশালায়তন দেহতে কম্পণ সৃষ্টি হয়। তিনি কাঁদো কাঁদো স্বরে বলেন, আমি ইচ্ছা করলেই খুন করতে পারি শুধু এই কারণে আমাকে শাস্তি দেওয়া হবে? আমি আদৌ খুন করেছি কিনা তা দেখা হবে না? এটা কেমন বিচার? মহাসীন সাহেব এবার হেসে ফেলেন। নিজের মাথাটি উপর হতে নিচে বারকয়েক ঝাকিয়ে নিয়ে বলেন, - এটাই তোমার প্রশ্নের উত্তর।

আল্লাহ ইচ্ছা করলেই এমন একটা পাহাড় তৈরী করতে পারেন যা তিনি নিজেই নাড়াতে সক্ষম নন এ থেকে তুমি দাবী করছো যে তিনি অক্ষম। তিনি আদৌ পাহাড়টি তৈরী করেছেন কিনা তা তুমি লক্ষ করছো না। শোনো, আল্লাহ ইচ্ছা করলে অনেক কিছুই করতে পারেন কিন্তু তিনি তা কখনও করবেন না যেহেতু তা তার মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যশীল নয়। যেমন জুলুম করা, ওয়াদা ভঙ্গ করা, নিজের ক্ষমতায় কাউকে শরীক করা, সন্তান গ্রহণ করা ইত্যাদি কাজ তিনি ইচ্ছা করলেই করতে পারেন কিন্তু তিনি তা করবেন না কারণ এগুলো তার সম্মান ও মর্যাদার সাথে খাপ খায় না। একইভাবে তিনি এমন একটি পাহাড় তৈরী করতে পারেন যা তিনি নাড়াতে সক্ষম নন কিন্তু তিনি নিজেকে অক্ষম প্রমাণ করে এমন কোনো কাজ করবেন না।

যেহেতু তিনি বর্তমানে এটা তৈরী করতে সক্ষম অতএব তিনি অক্ষম নন আবার যেহেতু এটা ভবিষ্যতে কখনই তৈরী করবেন না ফলে ভবিষ্যতেও তিনি অক্ষম হবেন না। তুমি কি তোমার উত্তর পেয়েছো? আওলা স্যার এবার মাথা ঝাকাতে ঝাকাতে চেয়ারে এলিয়ে পড়েন। তিনি বুঝতে পেরেছেন। অন্তত স্ত্রী হত্যার বিচার মাথা পেতে মেনে নেওয়ার চেয়ে নিজের ভুল স্বীকার করে নেওয়া তার জন্য বেশি উপকারী। যে সূত্রের কারণে আজ তিনি এই বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছেন তা পরিত্যাগ করতে তার নারাজ হওয়ার কথা নয়।

মন্তব্যঃ ........................... আসলে এখানে নাস্তিকরা যে যুক্তি পেশ করে তাতে একটি অসঙ্গতি রয়েছে। ঠিক কোন স্থানে অসঙ্গতি রয়েছে তা বুঝতে না পারার কারণে অনেকের মাথায় জট পেকে যায়। যুক্তিটির উপর থেকে নিচ পর্যন্ত তিনটি স্তর রয়েছে। ক . আল্লাহ সব কিছু করতে পারেন। খ . আল্লাহ এমন একটি পাহাড় তৈরী করতে পারেন যা তিনি নাড়াতে পারবেন না।

গ . তিনি অক্ষম যেহেতু তিনি পাহাড়টি নাড়াতে সক্ষম নন। উপরের গল্পের মাধ্যমে বোঝা গেছে যে, এখানে একটি স্তর বাদ গেছে। যুক্তির ক্রমধারা আসলে এমন হওয়া উচিত ছিল, ক . আল্লাহ সব কিছু করতে পারেন। খ . আল্লাহ এমন একটি পাহাড় তৈরী করতে পারেন যা তিনি নাড়াতে পারবেন না। গ . আল্লাহ এমন একটি পাহাড় সৃষ্টি করলেন।

ঘ . তিনি অক্ষম যেহেতু তিনি পাহাড়টি নাড়াতে সক্ষম নন। অর্থাৎ যখন পাহাড়টি আসলেই তৈরী করা হবে কেবল তখন আল্লাহ অক্ষম প্রমানিত হবেন কিন্তু যেহেতু তিনি এই ধরণের কাজ করবেন না তাই কখনই অক্ষম প্রমানিত হবেন না। শুধুমাত্র যুক্তির ভুল ব্যাবহারের কারণে এখানে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ বলেন, {لَوْ أَرَادَ اللَّهُ أَن يَتَّخِذَ وَلَدًا لَّاصْطَفَىٰ مِمَّا يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ سُبْحَانَهُ هُوَ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ} < আল্লাহ যদি সন্তান গ্রহণ করার ইচ্ছা করতেন, তবে তাঁর সৃষ্টির মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা বাছায় করতেন, তিনি পবিত্র। তিনি আল্লাহ, এক পরাক্রমশালী।

> [সূরা ঝুমার/4] অর্থাৎ তিনি ইচ্ছা করলেই সন্তান গ্রহণ করতে পারতেন কিন্তু তিনি এমন কাজ হতে পবিত্র। তিনি ইচ্ছা করলেই সন্তান গ্রহণ করতে পারেন এর উপর ভিত্তি করে বলা যাবে না যে তার সন্তান রয়েছে এবং তার শরীক রয়েছে। যদি তিনি সন্তান গ্রহণ করতেন তবে একথা বলা যেতো। সুবহানাল্লাহ! একইভাবে তিনি নিজেই নাড়াতে সক্ষম নন এমন বড় পাহাড় তৈরী করতে পারেন কেবল এর উপর ভিত্তি করে বলা যাবে না যে তিনি অক্ষম যতক্ষণ না তিনি এমন একটি পাহাড় তৈরী করেন। কিন্তু তিনি এমন পাহাড় তৈরী করবেন না যা তাকে অক্ষম প্রমাণ করবে ফলে তিনি এখনও অক্ষম নন ভবিষ্যতেও কখনও অক্ষম হবেন না।

সুবহানাল্লাহ!!!  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.