ইমরোজ
নাস্তিকতার কোন সংজ্ঞা পাওয়া দুস্কর। কারণ যারা নিজেদেরকে নাস্তিক বলে দাবী করেন তারা নিজেরাও অনেক কন্ট্রোভার্সিয়াল। চিরায়ত নাস্তিকের দেখা আমি কখনই পাই নাই। আর কিছু লেখকের বই পড়ে কিছু ধারণা জন্মে, কিন্তু তা আদৌ সমৃদ্ধ না।
আমাদের ক্লাস নাইন টেনের বাংলা ২য় পত্র বইতে নাস্তিকতার একটা ছোট্ট সংজ্ঞা দেওয়া আছে।
আল্লাহর অস্তিত্বে যার বিশ্বাস আছে তাকে বলা হয় আস্তিক, আর আল্লাহর অস্তিত্বে যার বিশ্বাস নাই সে হলো নাস্তিক। কিন্তু এই সংজ্ঞা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহর অস্তিত্বে না বলে বলা উচিত ছিলো সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে যার বিশ্বাস আছে। নাস্তিক যারা তারা সৃষ্টিকর্তাকে মানেন না। বা সেটাই হওয়া উচিত।
তাহলে কিসের উপর তাদের বিশ্বাস আছে? পৃথিবীর সৃষ্টির শুরু এবং শেষ কীভাবে হলো? সেটা আবেগ তাড়িত হয়ে একজন নাস্তিকের বিচার করা উচিত না। নাস্তিকের বিশ্বাস হলো প্রকৃতিতে। প্রকৃতির প্রয়োজনে মানুষের সৃষ্টি। প্রকৃতির প্রয়োজনেই আবার সব কিছুই শেষ হয়ে যাবে। যেমনটি হয়েছিলো ডাইনোসরের যুগে।
বিজ্ঞান আর ধর্মকে এক পথে চালানো দুস্কর। বিজ্ঞান তার ব্যাখ্যার জন্য অনেক কিছুকেই এভিডেন্স হিসেবে নেয়। তার অনেকটাই ধর্ম তাড়িত নয়। তাতে বিজ্ঞানের কিছু যায় আসে না সে খুজে বেড়ায় ধর্মীয় পুস্তকের আড়ালে সত্যটা কী? এখন স্বভাবতই প্রশ্ন জাগবে মৃত্যু কী? এটার খুব সহজ ব্যাখ্যা আমার ভাষায় তা হলো, একটা গাড়ি যখন রাস্তায় চলে তখন তাকে জীবন্ত মনে হয়। আবার গাড়িটির স্টার্ট বন্ধ করে দিলে সে ঘুমিয়ে পড়ে।
যখন কোন ফ্যাটাল এক্সিডেন্ট হয় তখন গাড়িটি একেবারেই বিকল হয়ে যায়। মানুষ প্রকৃতির সৃষ্ট তেমনি একটি যন্ত্র। মানুষের হার্ট চলা বন্ধ হয়ে গেলে তা একেবারেই একটা নিথর শরীর ছাড়া আর কিছুই না। এই চিন্তা চেতনা সবই কল্পনা। এই কল্পনা শক্তি আছে বলেই মানুষের হাতেই ধর্মের সৃষ্টি।
নাস্তিক সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করে না। হাজার পুস্তকেই লেখা থাকুক আর হাজারটা ঘটনাই ঘটুক।
ধর্ম চিরকাল একটা সামাজিক বিপ্লব। আর শিব নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের মতে যেকোন বিপ্লবই মানুষের মনে অন্ধত্ব সৃষ্টি করে। সেটা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবই হোক, হিটলারের সশস্ত্র বিপ্লবই হোক অথবা ইসলামিক বিপ্লবই হোক।
পক্ষান্তরে নাস্তিকতা কোন বিপ্লব নয়। এটা একটা একক, ব্যাক্তিগত ধারণা যার অস্তিত্ব শুধু নিজের ভেতরেই থাকে। কখনও দেখবেন না নাস্তিকরা আন্দোলন করা শুরু করেছে। নাস্তিকতার কোন স্বার্থকতা থাকলে সেটা হলো এটি মানুষকে ধর্মের বাইরে চিন্তা করতে শিখায়। ধর্মকে অতিক্রম করে অন্য সত্যের পেছনে ছুটতে শিখায়।
আমার জীবনে যে সকল আধা নাস্তিকের সাথে দেখা হয়েছে, সকলেই বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মাঝে লটকে আছেন। কেউ পুরো বামও না পুরো ডানও না। ব্যাপারটা এমনই যে ধরুন এমন নাস্তিকও আছে (স্বঘোষিত) যে বিপদে পড়লে নিজের বিশ্বাস বিসর্জন দিয়ে বিধাতাকে ডাকা শুরু করে। যা আসলে তার অবস্থানকেই প্রশ্নবিধ্য করে। বিজ্ঞানকে বিশ্বাস করলেও অনেক আস্তিকের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করে দেয় ধর্মীয় চিন্তা চেতনা।
সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সে বিশ্বাস করতে পারে না কিছু সত্য। যেমন ডারউইনের মতবাদের কথাই ধরুণ। আমেরিকায় এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে সে দেশের ৯০% মানুষই এই মতবাদের বিরোধি। তার একটাই কারণ তাদের ধর্ম প্রথম মানুষ হিসেবে আদমকে চিহ্নিত করে।
নাস্তিকতার আড়ালে থাকা মানুষটি খারাপ না ভাল সেই প্রশ্ন আসতে পারে।
সেখানে আমার একটা কথাই বলার আছে, যে ধার্মিক সেও কুকর্ম করে। ভাল খারাপ থাকার ব্যাপারটা নিজের ভেতর থেকে আসে। যে খারাপ সে ধার্মিক হলেও খারাপ। এর উদাহরণ আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় কারাগারেই বর্তমান। নাস্তিক হলেই যে সে মানুষের ক্ষতি করবে সে ধারণা একেবারেই ভুল।
তবে হ্যা সে প্রচলিত প্রথা বিরোধি এক নীরব সংগ্রামি।
নাস্তিকদের চোখে ধর্ম একটা পন্থা। যে পন্থা অবলম্বন করে মানুষ বাঁচতে চায়। ধর্ম এককটা সেখানো নীতি। সেই নীতিকে ধরে সে সৎ থাকার চেষ্টা করে।
ধর্মের উৎপত্তি শুধু এইজন্যেই। কেননা কল্পনায় শূন্যতা মানুষের মনে ব্যাথার সৃষ্টি করে। পরে কী হবে ধর্ম সেই সংক্রান্ত একটি ভবিষ্যত বানী। এর উপর ভিত্তি করে বেঁচে থাকতেই মানুষ সাচ্ছন্দ বোধ করে। দিনে দোয়া করা, পুজা করা সব কিছুই তার মনে একটা অলীক আশা এবং বিশ্বাসের জন্ম দেয় যে না আমি ভাল পথেই এগুচ্ছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।