اللهم هب لي الحجة البالغة والحكمة الموهوبة
بسم الله الرحمن الرحيم
হোসেন মোল্লা একজন বয়ষ্ক ব্যাক্তি। গ্রামে তার বয়ষের কেউ বেঁচে নেই। তিনি একজন ধার্মিক ও সৎ স্বভাবের লোক। গ্রামের সকলে তার সুনাম করে। তার উৎফুল্য চেহারা আর সুস্থ সবল শরীর দেখলে কেউ বিশ্বাসই করতে পারবেন না যে তিনি নব্বইএর ঘরে পা দিয়েছেন।
মানুষ তাকে দেখেই বিশ্ময় প্রকাশ করে। তিনি বলেন,
- সুস্থতা আল্লাহর নিয়ামত।
ইসলাম সম্পর্কে তিনি অগাধ জ্ঞান রাখেন। কেউ কোনো প্রশ্ন করলে তার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেন। এভাবে দিন-কাল ভালই কেটে যাচ্ছিল।
হঠাৎ তার পায়ের পাতার উপরিভাগে ভীষণ বেদনা শুরু হয়। বহুদিন পূর্বে সেখানে একটি ছোট টিউমার দেখা দিয়েছিল। গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে সেটা বৃদ্ধি পেয়ে এখন আপেলের আকৃতি ধারণ করেছে। ডাক্তাররা বহুবার অপারেশন করে ওটা কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছে কিন্তু তিনি তাতে রাজী হন নি। এখন এমন জালা-যন্ত্রনা শুরু হলো যে অপারেশন করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় দেখা যাচ্ছে না।
ছেলেরা তাকে একরকম বাধ্য করে একটি বেসরকারী ক্লিনিকে নিয়ে আসলো। একজন ডাক্তার কয়েকজন সহকারীসহ হোসেন মোল্লাহকে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত করছিল। নতুন লোক দেখলেই হোসেন মোল্লাহ তার সাথে আল্লাহ-রসুলের কথা বলার চেষ্টা করেন। হোসেন মোল্লা ডাক্তারকে বলেন,
- ব্যাটা, তুমি কি নামায পড়ো?
একটা সাদা হাত মোজা ডান হাতের ভিতর ঢুকাতে ঢুকাতে ডাক্তার বলে,
- চাচাজান, নামায কিসের জন্য পড়বো?
হোসেন মোল্লা এই ধরণের কথা শুনতে অভ্যস্ত নন। তিনি গ্রামে থাকেন, শহরের লোকেদের কতটা মতিভ্রম ঘটেছে সে বিষয়ে তার খবর না থাকারই কথা।
তিনি কয়েকবার তওবা ইস্তিগফার পড়ে নিয়ে বলেন,
- সে কি কথা বাপু। আল্লাহ তোমাকে সৃষ্টি করেছেন তুমি তার জন্য নামায পড়বা না?
ডাক্তার বিভিন্ন কাজে ব্যাস্ত ছিল বেশি কথা বলার সময় তার হাতে ছিল না। কথা সংক্ষিপ্ত করার জন্য বলল,
- আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করেছেন তা তো বুঝলাম কিন্তু আল্লাহকে কে সৃষ্টি করলো, তিনি কোত্থেকে আসলেন এ প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত তাকে মানতে পারবো না।
হোসেন মোল্লা বুদ্ধিমান লোক তিনি আর কথা বাড়ালেন না।
বেশ কিছুক্ষণ পর সফল অপারেশনের মাধ্যমে হোসেন মিয়ার পায়ের টিউমারটি সরিয়ে ফেলা হলো।
অবস্থা মোটামোটি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ক্লিনিকে অবস্থান করলেন। যখন মোটামোটি হাটাচলা করার মতো অবস্থা হলো তখন ছেলেরা তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে তিনি বললেন,
- ডাক্তারের সেলামী দিয়েছো?
বড় ছেলে বললো,
- আব্বা, সে চিন্তা আপনি কেনো করছেন?
হোসেন মোল্লা বললেন,
- সেলামীর টাকা আমার হাতে দাও। যাওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে আমিই কথা বলবো তোমরা চুপ থাকবা।
বৃদ্ধ পিতার কথার অবাধ্য হওয়ার অভ্যাস ছেলেদের নেই। তাছাড়া তিনি কঠিন কোনো আদেশ করেন নি।
ছেলেরা মাথা পেতে তার কথা মেনে নিল।
ডাক্তারের রুমে গিয়ে হোসেন মোল্লা বললেন,
- আমরা বাড়ি চলে যাবো।
কথাটি বলেই হোসেন মোল্লাহ ঘর থেকে বের হওয়ার মতো ভান করেন। ডাক্তারের পাশে সেসময় অন্য কেউ ছিল না তাই বাধ্য হয়ে নিজেই বলে,
- চাচা, আপনারা তো এখনও আমার সেলামী দেন নি।
হোসেন মিয়া ডাক্তারের দিকে ঘুরে বলেন,
- তোমার সেলামী কতো?
ডাক্তার মুখ কাচুমাচু করে বলে,
- মাত্র তিন হাজার টাকা।
হোসেন মোল্লা দৃঢ় কণ্ঠে বলেন,
- তুমি কিভাবে ডাক্তার হয়েছো আমাকে বিস্তারিত বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত তোমাকে আমি কোনো বিনিময় দেবো না।
কথা শুনে অন্য সবার সাথে সাথে ডাক্তারও ভীষণ অবাক হয়। এই বয়ষ্ক লোকটিকে তার সারা জীবনের অভিজ্ঞতা বুঝিয়ে বলার মতো সময় বা ধৈর্য কোনোটিই তার নেই। তাছাড়া তিনি বললেই যে বৃদ্ধ লোকটি বুঝে ফেলবেন সে সম্ভাবনাও শুণ্যের কোঠায়। ডাক্তারি বিদ্যার অ-আ, ক-খ সম্পর্কেও যিনি কিছুই জানেন না একজন ডাক্তার কিভাবে ডাক্তার হয় তা তাকে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলা অসম্ভব।
নিজের অপারগতা স্বীকার করে ডাক্তার বলে,
- আমি কিভাবে ডাক্তার হয়েছি তা আপনাকে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাছাড়া আমি কিভাবে ডাক্তার হয়েছি তা আপনার জানার কি দরকার? আমি যে আপনার চিকিৎসা করেছি সেলামী পাওয়ার জন্য এটাই কি যথেষ্ট নয়?
হোসেন মোল্লা এবার সফলতার হাসি হেসে বলেন,
- আল্লাহ যে আমাদের সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত করার জন্য এটাই কি যথেষ্ট নয়, তিনি কোথা থেকে আসলেন কিভাবে আসলেন সেটা জানার কি দরকার?
বলতে বলতে হাতের টাকা ডাক্তারের টেবিলে ছুড়ে ফেলেন বৃদ্ধ হোসেন মোল্লা।
এবার নাস্তিক ডাক্তারের বোধ উদয় হলো। যে নাস্তিকতার কারণে নিজের সেলামীর টাকা আক্কেল সেলামী দিতে বসেছিলেন সেই নাস্তিকতাকে বারংবার অভিসম্পাত করতে করতে টাকাটা পকেটে ভরে নিলেন।
মন্তব্যঃ
.................
আল্লাহকে মানার জন্য তার অবদানই যথেষ্ট তিনি কোথা থেকে আসলেন কিভাবে আসলেন এধরণের প্রশ্ন করা আমাদের জন্য শোভা পায় না।
কারণ প্রথমত আমাদের জ্ঞান অতি অল্প আল্লাহ সম্পর্কে চিন্তা করে কোনো সমাধানে পৌছানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত আল্লাহর ইবাদত করার জন্য আমাদের উপর তার অবদান সম্পর্কে জানাটাই যথেষ্ট তিনি কিভাবে বা কোত্থেকে আসলেন এ বিষয়ে জানার কোনো প্রয়োজন নেই।
এজন্য রসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন,
{تفكَّروا فى خلق الله ولا تفكروا فى الله{
< তোমরা আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করো আল্লাহকে নিয়ে চিন্তা করো না। >
[জামিউল আহাদীস]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।