সজলকে চোখ মুছতে দেখে তুফান খেঁকিয়ে উঠে
-ঐ মাইয়া মানুষের মতো কান্বি না। তোর লেখাপড়ার দায়িত্ব কি আমরা নিছি ?
তাও সজল আপ্রাণ চেষ্টা করে
-ভাই, আমার ঢাকা শহরে থাকার মতো কোনও আত্মীয়-স্বজন নাই। আমি...আমি কোথায় যাব...
লিডার শান্ত চোখে সজলের দিকে তাকায়। কি যেনও ভাবে। তারপর যেনও “ঝিকে মেরে বউকে বোঝানো”র ছলে সকলের উদ্দেশ্যে বলা শুরু করে
-শোনো, আমাদের সামনে কান্নাকাটি করে তো আর লাভ নেই।
তোমার ‘প্রভোস্ট আব্বা’র সামনে গিয়ে কান্নাকাটি করে দেখতে পারো। সে তোমার হলে থাকার কোনও ব্যবস্থা করতে পারে কিনা।
শেষের লাইন শেষে ফিক করে হেসে দিবে। একটা ‘হেঁসহেঁসে’ শব্দ হয়। সাথে পাতি নেতারাও।
এবার যেনও আঙ্গুল উঁচিয়ে উত্তেজিত নেতা জনসভায় বক্তৃতাই শুরু করে দিলেন
-আমি তোমাদের হাজারবার বলেছি। আমরা যাকে হল থেকে বের করে দিবো স্বয়ং প্রভোস্টেরও ক্ষমতা নাই তাকে হলে রাখে। তিন বছর পূর্বে নগদ রক্ত দিয়ে এই হল কিনেছিলাম আমরা। সে সকল দিনতো আর দেখনি। তাই বোঝো না।
বিরোধীদল যখন ক্ষমতায় ছিল তখন প্রায় চোরের মতো জুনিয়রদের সাথে ১০২ নম্বর রুমে পরে থেকেছি টানা পাঁচ বছর। হল থেকে মাথা নিচু করে ক্যাম্পাসে গিয়েছি আর এসেছি। আমার এই যে...এই হাতটা দেখতে পাচ্ছ...এটা ভাঙা। রডটা মাথা বরাবর চালিয়েছিল। হাত দিয়ে ঠেকাতে গিয়ে এই অবস্থা।
মাথায় লাগলে কি হতো জানি না। তবে আমার এক রুমমেটের মাথায় লেগেছিল। গরীবের বাচ্চা দেখলেই বোঝা যায়। সা-রাদিন হাঁদারামের মতো পড়াশুনা করতো। একটা মানুষ কিভাবে এতো পড়ে আমি জানি না।
ডিপার্টমেন্টেও নাকি ভালো রেজাল্ট ছিল ছেলেটার। তারপর, রাস্তায় বিশ-ত্রিশটা গাড়ি ভাঙা হল। পুলিশ এলো...আবার চলেও গেলো। বৃদ্ধ মা টা রুমে এসে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করলো।
তারপর ? কি হল ?...বিচার হল ?...কিচ্ছু হবে না।
“কিচ্ছু হবে না !”—বৃদ্ধাঙ্গুলি নেড়ে সোজা জানিয়ে দিলো নেতা। ইটপাথরের দেয়ালটা গমগমিয়ে যেনও আবেগ জানান দিলো, কিন্তু ঐ গলায় একফোঁটা আবেগও নেই। সজল কোথায় যেনও পড়েছিলো—ঈশ্বর আর শয়তানকে নাকি সমস্ত আবেগের ঊর্ধ্বে যেতে হয়। নইলে সে আর ঈশ্বর বা শয়তান কোনটাই থাকতে পারে না।
হয়ে যায় মর্ত্যের মানুষ।
সটান সোজা হয়ে দাঁড়ালো নেতা। দাড়াতে দাড়াতে
-তাহলে ঐ কথাই থাকলো...আর হে শোনো সবাই, কাল সকালে হরতাল বিরোধী মিছিল আছে। পরীক্ষা বাদে সবাই যাবে। যে যাবে না তার আর হলে থাকার দরকার নাই।
বুঝছো ? তুফান ! সবাইকে জোড়ো করে আমাকে ফোন দিবি। এখন আমি যাই।
এখানে অজ্ঞাতদের জ্ঞাতার্থে একটা কথা জানিয়ে রাখতে চাই যে, আমরা টেলিভিশনে হরতাল বিরোধী মিছিল দেখি, অমক নেতার জেল মুক্তি, প্রত্যাবর্তন দিবস দেখি, জন্মদিন, মৃত্যুদিন পালন করতে দেখি এবং এরই সাথে দেশব্যাপী হাজার হাজার ছাত্রদের সভা-সমাবেশ-মিছিল করতে দেখি। দেশপ্রেম যদি একটি অনুভূতির নাম হয়, তবে এই সভা-সমাবেশ-মিটিং-মিছিল প্রভৃতি অনুৎপাদনশীল কর্মের কোনটাই সেই পবিত্র অনুভূতি থেকে উৎসারিত নয়। কারণ, জানামতে সেই অনুভূতি আজ থেকে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর আগেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
তাও যদি কেউ নিতান্তই গলার জোরে আশাবাদী হতে চান তবে তাদের জ্ঞাতার্থে এটুকুও বলে রাখতে চাই যে, সেই অনুভূতির মুখে রুমাল গুঁজে দিয়ে প্রতিনিয়ত তাকে violate করা হচ্ছে যেনও Sadist-কে সে দেখতে পায় কিন্তু কিছু বলতে না পারে।
নেতা এগিয়ে যায়। সাথে পাতি নেতারাও। বুলেট পেছন থেকে সাধারণ ছাত্রদের চলে যেতে ইশারা করবে।
কিছুদূর গিয়ে নেতা থমকে দাঁড়ায়।
কি যেনও মনে পড়বে
-শোনো, ওকে রুমে ডাকো। ভালোমতো quarry করো। যদি অন্যকিছু পাও তবে না পিটিয়ে হল থেকে বের করবে না।
একথা শুনে বদমাশের মতো হাসি খেলে যায় তুফানের মুখে। হাতের কব্জি মোচড়াতে মোচড়াতে
-সে কি আর বলতে ভাই......
এরপর নেতাকে বিদায় দিয়ে সজলের দিকে তাকিয়ে হুকুম জারি করে
-ঐ সজইল্ল্যা ২০৮.........রাত ১২ টার পর......
----------------------------------------------------------------------------------------------
বুলেটের মোবাইলটা অনেক ক্ষণ থেকেই ভায়াব্রেশন দিচ্ছিল।
কিন্তু নেতার মেজাজ বিগড়ে ছিল বলে সে গেষ্টরুমের বাইরে এসে কথা বলতে পারেনি। তাই গেষ্টরুম শেষ হওয়ায় সে হাফ্ ছেড়ে বাঁচে।
-হ্যালো জান্...
কোথায় সেই পলিটিকাল ফাপর, কোথায় সেই হুম্কি-ধমকি ! বুলেটের গলা বেয়ে মধু উপচে পড়ে যেনও।
-তুমি এতক্ষণ call টা pick করনি কেন ? আমি সেই কখন থেকে বসে আছি আমার ‘জান্টু-মন্টু’টার সাথে কথা বলবো বলে।
কপট অভিমানী সুরের অকপট প্রকাশ বুলেটের প্রিয়ার কণ্ঠে
-ইয়ে...মানে হয়েছিলো কি।
তুমি তো জানোই লিডার আমাকে ছাড়া হলটাকে ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারে না।
প্রেমিকার সামনে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটি কে না হতে চায়—তা সে যে সেক্টরই হোক না কেনো।
সাথে সাথেই যেনও ওপাশ থেকে অভিমান গড়িয়ে আসে
-এই...আমি আগে না তোমার লিডার আগে ?
-কেনো ? তুমি আগে। তুমি। নেতা আমাকে ছাড়া অচল, আর আমি তো জানি আমি আমার এই ‘টুনটুনি’টা ছাড়া কতটা অসহায়।
()
একটা হিন্দি মুভিতে ডায়ালগটা শুনেছিলো সে। সিচুয়েশন কমন পড়তেই বঙ্গানুবাদটা একটু মধু মিশিয়ে copy-paste করে দিলো।
-আচ্ছা যাও, ঠিক আছে। কিন্তু, জা-ন্ একটা ছোট্ট কাজ করে দিতে পারবা ?
-বলো...
-তুমি তো জানোই আমার ছোট ভাইটা এবার তোমাদের ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে। জানো ? ওর না ক্লাস শুরু হয়েছে গতকাল।
-হ্যা, শুনেছিলাম তো। খুব ভালো কথা...
-ও কিন্তু তোমার হলে এটাচ্মেন্ট পেয়েছে।
-আমার হলে ? বাহ্, দারুণ তো।
-শোনোই না। ও না উত্তরা থেকে যাওয়া আসা করে ক্লাস করতে পারবে না।
খুব টায়ার্ড হয়ে যায়। আর জানোই তো রাস্তায় যা জ্যাম !
-হুম্ তাই তো...তাই তো...
-জান্...তুমি ওকে হলে একটা সীট দিয়ে দিবে।
-ও নিয়ে তুমি চিন্তাই করো না। আমি এখানে আছি কি করতে ? তুমি ওকে পাঠিয়ে দিয়ো।
-এই শোনো...ও কিন্তু তোমাদের ঐ ঘিঞ্জি রুম...কি যেনও বলে না...ও হ্যা...ঐ গণরুম্...গণ রুমে কিন্তু আমার ভাই মোটেই থাকতে পারবে না।
-পা-গ-ল হয়েছো তুমি ? ও গণ রুমে থাকবে কেনো ? ওকে আমি সরাসরি সীটে উঠাবো। ও বুলেট ভাইয়ের স্পেশাল লোক ! ওকে তুমি শুধু পাঠাও।
-এই তো আমার লক্ষ্মী সোনামণি...উম্মাহ্...! আমি জানতাম তুমি পারবে। আমি তোমাকে নিয়ে কতো গর্ব করি আমার বান্ধবীদের সাথে !
-কি গল্প করো?...
বুলেটের বুকটা ভরে ওঠে আনন্দে। পিয়া তাকে নিয়ে গর্ব করে !! তাকে !!! পর-মুহূর্তে ভাবে, করবেই বা না কেন ? ক্যাম্পাসের কতো বড় নেতা সে...!!
-ও তুমি বুঝবে না।
মেয়েদের কতরকম গল্প থাকে...
‘বুঝবে না’ দিয়ে ওটা ওখানেই বন্ধ করে দেয় পিয়া। কারণ, মিথ্যা নিয়ে বেশিদূর এগোনো যায় না। পরবর্তী আবদারের জন্য কিছুটা প্রস্তুতিমূলক সময় নেয় পিয়া। বুলেট হ্যালো বলতেই টেনে টেনে আদুরে গলায় শুরু করে
-জা-ন্...আমার ছোট ভাইটা না আমার খুব আদরের। ওকে কিন্তু single bed দিতে হবে।
ও কখনো অন্যের সাথে শেয়ার করে থাকতে পারবে না কিন্তু...হুম্...
পিয়ার আদুরে গলায় বরাবরই ‘জান’ ডাকটা শুনেই অন্যরকম হয়ে যায় বুলেট। কপালের কোণ বেয়ে যেনও হাল্কা হাওয়া খেলে যায় বুলেটের। কিন্তু, ভাইকে single bed এ রাখার কথা শুনেই বাস্তবে আছড়ে পড়ে সে।
- single bed ? অ্যাঁ ? হ্যা...হ্যা...দ্..দ্.দেখি, চেষ্টা করবো...
-ও জান্...তোমার তো কতো ক্ষমতা। কতো কিছু করতে পারো তুমি।
এটুকু করে দাও না সোনামণি। please…please…please…….
বুলেট জানে সে এখন দাবী মেনে না নিলে এর পরিণাম কি হবে। এর আগে একবার এমনটা হয়েছিলো। প্রায় একমাস পিয়া কোনও ধরণের যোগাযোগই করেনি। পরে অবশ্য পিয়া নিজেই একদিন call করেছিলো।
সে কথা ভেবে বুলেট আতংকিত হয়ে পড়ে
- রাখবো...রাখবো। অবশ্যই ও single bed এ থাকবে। দরকার হলে আমি Floor এ থাকবো ! ঠিক আছে ?
একথা শুনে পিয়ার হাসি কলকলিয়ে ওঠে আর ওপাশে দাঁড়িয়ে বুলেট বুঝতে পারে কোন পরিস্থিতিতে মজনু লইলির কুকুরের পায়ে চুমু খেয়েছিল।
-হায় খোদা...আমার কি হবে!! আমার মজনুটা কি বলে দেখো। Floor এ থাকবে কেনো তুমি ? তুমিও single bed এ থাকবে আমার ভাইও থাকবে।
এটুকু বলে মিষ্টি হাসে পিয়া।
-আচ্ছা...
বুলেট মন্ত্রমুগ্ধের মতো মোবাইলটা কানে ধরে স্থির দাঁড়িয়ে থাকে।
কি একটা যেনও ভুলে গিয়েছিলো পিয়া। মনে পড়তেই
-আর হ্যা শোনো...আমার ভাই কিন্তু তোমাদের ঐ পলিটিক্স-টলিটিক্স করতে পারবে না। ওর না পড়াশুনার যা চাপ...
-আরে ও পলিটিক্স করবে কেনো ? ওর কি পলিটিক্স করার বয়স হয়েছে নাকি...
-এইতো আমার লক্ষীসোনামণির মতো কথা...
গলার আওয়াজ হঠাৎ নিচু করে তড়িঘড়িতে
-জান্, মা ডাকছে...পরে কথা হবে।
কেমন ? আর হ্যা কাল সোহ্রাওয়ার্দী চলে এসো...
বলেই সেই রহস্যময় হাসি।
বুলেট মায়ের গলা শুনতে পায় না। শুধু ‘পুত্পুত্’ দু’টো আওয়াজ শুনতে পায় সে। ভাত ছেটালে কাকের অভাব হয় না আবার ভাত খাওয়ানো হয়ে গেলে কাকও আর বিলম্ব করে না। কিন্তু মন্ত্রমুগ্ধ বুলেটের মাথায় এতোসব ঢোকার কথা নয় এমুহূর্তে।
“কাল সোহ্রাওয়ার্দী !”—এটুকু ভাবতেই মৃদু উত্তেজনা এসে ভর করে তাকে।
----------------------------------------------------------------------------------------------
এখন রাত ১০টা ৪৫। সজল ধীর পায়ে তার গণ রুমে ফিরে আসে। বন্ধুরা সবাই তাকে সান্ত্বনা দিতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। আরে ও কিছু না।
আমাকে কত বলল এরকম। রাতে গিয়ে দেখা করলেই হল। সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু স্বয়ং লিডার কি কখনো তাদের বের হয়ে যেতে বলেছে ? এই আশংকা প্রকাশ পেতেই সকল সান্ত্বনা কর্পূরের মতো উবে যায়। সদ্য গজিয়ে উঠা পাতি-নেতা সদৃশ এক ব্যাচ-মেট তো মুখের উপর জানিয়েই দিলো, “প্রোগ্রাম করবি না ঠিক মতো, তোকে তো হল থেকে বের করে দেয়াই উচিত”।
সজল হলের Reading Room ফিরে আসে। যাই হোক কাল পরীক্ষা। বই খুলে পড়তে বসে। কিন্তু, কোনও পড়াই যেনও মাথায় ঢুকে না। বইয়ের লাইনগুলো ঝাপসা হয়ে যায়।
সত্যিই তো, যদি তাকে হল থেকে বের করেই দেয় সে থাকবে কোথায় ? কে তাকে জায়গা দেবে ? মা বাড়ি থেকে যে কয়টা টাকা পাঠায় তা দিয়ে তো কোনোরকম তিন বেলা খাওয়ার খরচটাই চলে। তবে কি তাকে বাড়ী ফিরে যেতে হবে ? সেটা কি করে হয় ? এতো ত্যাগ...এতো কষ্ট স্বীকার করে তবেই না সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে। মাকেই বা সে কি বোঝাবে ?
সজল আর ভেবে পায় না। এসব ভেবে ভেবে একটা লাইনও তার পড়া হয় না। সারাদিন কি পড়েছে তাও মনে করার চেষ্টা করে।
নাহ্, সব গুলিয়ে ফেলছে সে। সজল বই রেখে উঠে দাড়ায়।
এসকল ঘটনার ঘনঘটার পর লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মানুষ মারা যায় অনায়াসে আর বিশ-ত্রিশটা গাড়ি তো কোনও ব্যাপারই না। কিন্তু, পড়াশুনার ন্যায় বুদ্ধি-বৃত্তিক সৃজনশীল কর্মটি কি করা চলে ?......
আর এখানেই একটা ‘গরীবের বাচ্চা’র সাথে ‘বড়লোকের বাচ্চা’র পার্থক্য নতুন করে রচিত হয়ে যায় !!
----------------------------------------------------------------------------------------------
রাত ১২ টার পর ২০৮ নম্বর রুমে সজলের সাথে পাতি নেতাদের ঠিক কি হয়েছিলো সজল সেটা কাউকেই কিছু বলেনি। শুধু ধীর পায়ে মাথা নিচু করে করিডোর বেয়ে হেঁটে চলেছিল।
করিডোরের উজ্জ্বল আলোয় গালের লালচে ভাবটা স্পষ্ট। হয়তোবা আঙ্গুলের ছাপও পড়েছে দুয়েকটা। রুমমেটরা বলে দিয়েছিলো ওরা যাই বলুক মাথা নিচু করে চুপ করে থাকতে। কিন্তু রুমমেটরা এটা বলেনি তাদের অশ্রাব্য গালিগালাজের পারদর্শিতার কথা। তাই হয়তোবা সবসময় মাথা নিচু করে চুপ করে থাকা হয়নি সজলের।
গালের লালচে ভাবটাও হয়তো তারই ফলশ্রুতি।
করিডোর পেরিয়ে যখন হলের খোলা মাঠটায় এসে দাঁড়ায় সজল, তখন আকাশ ভরা অসংখ্য তারার মেলা। বেশ গরম পড়েছে আজ। আনমনে কতক্ষণ স্তব্ধ হয়ে চেয়েছিল সেদিকে--তা সজলের খেয়াল ছিল না। হঠাৎ হালকা হাওয়া খেলে যেতেই একটা পরিচিত গন্ধ টের পায় সজল।
হ্যাঁ...সে-ই চিরচেনা গন্ধটা। সজলের মুখ অস্ফুটে বলে উঠে...মা! এতক্ষণ গলায় আটকে থাকা কান্নাটাকে সজল আর আটকে রাখতে পারে না.........
----------------------------------------------------------------------------------------------
সজলের মতো এমন অনেক ছেলেই আছে যাদের পাশে হল ব্যতীত ঢাকা শহরে থাকার মতো অর্থনৈতিক সচ্ছলতা থাকে না; মফস্বল কিংবা পাড়াগেঁয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আগমন হেতু হাজারো অচেনা মুখের ভিড়ে থাকেনা কোনও পরিচিত মুখ।
আর বিশ্ববিদ্যালয় হল প্রশাসন ?? এর কাজই তো কেবল সাধু ভাষায় নোটিশের পর নোটিশ টানিয়ে কেবল নিজের মুমূর্ষু অবস্থারই জানান দেয়া। “প্রাচ্যের অক্সফোর্ড”-এর মান বজায় রাখা এই রাণীক্ষাতে আক্রান্ত রোগীর কর্ম নয়।
এদের পাশে থাকে শুধু............ছাত্ররাজনীতির নামে গা ঘিনঘিনে...বমি উদ্রেককর এক সুবিশাল কৃষ্ণ গহ্বর ।
এই পরিবেশ তার জন্য তৈরি করে দু’টি পথ--------
এক, সেই বীভৎস কৃষ্ণগহ্বরে মা-বাবার দু’চোখের বহুদিনের লালিত স্বপ্নকে ভাসিয়ে দিয়ে অজানার পথে পাড়ি দেয়া।
অথবা, কৃষ্ণগহ্বরের প্রভাবে ক্ষয় হয়ে নিঃশেষিত প্রায় স্বপ্নগুলোর সাথে মিশে থাকা এক বিকৃত মানসিকতাকে আজীবন বয়ে বেড়ানো।
কিন্তু, নিতান্তই নবীন ছাত্রটি কি এতোসব তত্ব বুঝতে পারে ? সে শুধু অবাক হয়ে ভাবে......
“কোথাও কি কেউ নেই ?”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।