আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াতে ইসলামের প্রসবলাভকালীন সময়ের ও কিছু পরের অল্পস্বল্প কথা

শান্তির জন্য সংগ্রামী শুরু থেকেই এই দলের সংগঠক ছিলেন ও নেতা ছিলেন মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী। এই মওদুদী তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুর আগে উরদু মাসিক 'তরজুমাতুল কোরআন' নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করতেন। এই মাসিকের মাধ্যমেই তিনি তার মতাদরশ প্রকাশ ও প্রচার করতেন। আল্লাহর রাজত্ব প্রতিস্টার আদরশিক দিকগুলো নিজের মতো ব্যাখ্যা করে প্রকাশ করতেন। তিনি লিখতেন বংশ, জন্মভুমি, ভাষা ও বরণ এসবের ভিত্তিতে তৈরি জাতীয়তা মানব জাতির জন্যে এক বিরাট ও ভয়াবহ বিপদের কথা এবং এই সবই হচ্ছে অশান্তি, বিশ্রিংখলা, নিরাপত্তাহীনতা ও হানাহানির চির উতস।

এগুলোই হলো খোদার সবচেয়ে বড় অভিশাপ ও শত্রু এবং এগুলো শয়তানের সারথক হাতিয়ার, যার দ্বারা শয়তান তার আদি দুশমন ইসলামকে নিপাত করে। ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগ ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব বা পাকিস্থান প্রস্তাব গ্রহন করার পরে মাওলানা মওদুদী তার 'তরজুমাতুল কোরআন' পত্রিকার অফিসে তার সঙ্গে সুসম্পরকিত ও সমমনাদের একটি মিটিং ডাকেন। সেই মিটিং এ ৭৫ জন উপস্থিত ছিলেন। এই মিটিং ই সম্মেলনে পরিনত হয়ে ৪ দিনব্যাপি স্থায়ী অধিবেশন শেষে মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীকে আমীর নিরবাচন করে ১৬ সদস্যবিশিস্ট মজলিশ-ই-শুরা নামক কেন্দীয় কমিটি গঠিত হয়। দলের আমীরকে প্রায় সরবময় ক্ষমতার অধিকারী করে গঠনতন্ত্রও গ্রিহীত হয়।

জন্মলাভের শুরু থেকেই ধরমীয় উন্মাদনা স্রিস্টিকারী এই দলটি গঠিত হয় ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট ব্রিটিশ ভারত আমলে। নাম ছিল জামায়াতে ইসলাম হিন্দ। প্রতিস্টার পর থেকেই মাওলানা মওদুদী মুসলিম লীগ, কংগ্রেস ও এইসব দলের নেতাদের চরম বিরুদ্ধাচরন এবং পাকিস্থান আন্দোলনের বিরুদ্ধে পত্রিকা ও দলীয়ভাবে মাঠে নামেন। মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী ব্যাপক বিলাসী জীবন যাপন করতেন। সেজন্য ১৯৪২ সালের মজলিশ-ই-শুরার বঠকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করা হয় ও পদত্যাগের তুমুল দাবি উঠে।

কিন্তু এই বৈঠকে কোনোরকমে দলীয় আমীরের পদটি রক্ষা করতে সক্ষম হন। ১৯৪২ সালের অক্টোবরে মাওলানা মওদুদী দলের ভিতরে তার একক আধিপত্য বজায় রাখার লক্ষ্যে দলের কেন্দ্রীয় অফিস লাহোর থেকে সরিয়ে ইস্ট পাঞ্জাবে নিয়ে যান। ১৯৪৭ সালের ১৭ এপ্রিল দলের পাঠানকোট বৈঠকে সেক্রেটারী জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত করা হয় মিয়া তোফায়েল মোহাম্মদকে। এই বৈঠকেই দলের সদস্যদের আরবী ভাষায় কথা বলার অভ্যাস তৈরির স্বিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৪৫ সালের ১৯ থেকে ২১ এপ্রিলে পাঠানকোটে দলের প্রথম রোকন সম্মেলন অনুস্টিত হয়।

তখন দলের রোকনের সংখ্যা ৭৫০ জন এবং আঞ্চলিক শাখা কমিটি ছিল ৩৭টি। এই রোকন সম্মেলনেও অতি বিলাসী জীবন যাপনের কারনে মাওলানা মওদুদীর তীব্র সমালোচনা ও বিরোধীতা করা হয়, কিন্তু আগেরবারের মতোই পদ টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হন অতি ধুরন্ধর মাওলানা মওদুদী। এবং এই মাওলানা মওদুদীর বিরোধীতা করায় ৬টি আঞ্চলিক শাখা কমিটি ও ৪০০ জনের সদস্যপদ বাতিল করা হয়। ১৯৪৬ সালে এলাহাবাদে অনুস্টিত হয় দ্বিতীয় রোকন সম্মেলন এবং ১৯৪৭ সালের ৯ ও ১০ মে তারিখে পাঠানকোটে অনুস্টিত হয় নিখিল ভারত জামায়াতে ইসলামের রোকন সম্মেলন। এই সম্মেলনে মাওলানা মওদুদী ধরমনিরপেক্ষতা, মুসলিম জাতীয়তাবাদ ও গনতন্ত্রের বিরুদ্ধে উত্তেজনাকর ভাষন দেন এবং রুখে দাড়ানোর কথা বলেন।

এই বক্তব্য প্রদানের পরে তার দলেরই কিছু উদারপন্থীরা তার প্রাননাশের চেস্টা চালিয়েছিল বলে প্রচার করা হয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট পাকিস্থান ও ভারত স্বাধীনতা লাভ করলে মাওলানা মওদুদী পাকিস্থান চলে যান। সেসময়ে জামায়াতের সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র ৫৩৩ জন। ভারত থেকে মাওলানা মওদুদীর সঙ্গে পাকিস্থান চলে যান মাত্র ৩০৬জন সদস্য। ১৯৪৮ সালের মারচ মাস থেকে পাকিস্থানে জামায়াতে ইসলাম পাকিস্থান যাত্রা শুরু করে।

এখানে শুধু জামায়াতে ইসলামের প্রসবলাভ ও তারপরের কছুদিনের কথা লেখা হয়েছে। জন্মকালীন সময়ের কথা লেখার উদ্দেশ্যেই অন্যান্য অনেক প্রাসঙ্গিক বিষয় লেখায় স্থান পাওয়ার অধিকার রাখলেও আরেকদিন সেবিষয়ে লেখার ইচ্ছে রইল। পবিত্র ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা এবং অনেক বুজুরগ আলেমগন মাওলানা মওদুদীর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারির বিষয়গুলোও অত্যান্ত গুরুত্বপুরন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.