‘সামাজিক দায়বদ্ধতা ও নৈতিকতা মেনে সারাজীবন ব্যবসা করেছি। তরুণ প্রজন্মেরও উচিত, একইভাবে ব্যবসায় এগিয়ে আসা। সেটি হলে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের সীমানা ছাড়িয়ে ব্যবসা করতে পারবে। ’
ব্যবসায় নোবেল-খ্যাত বিজনেস ফর পিস পুরস্কার-২০১২ পাওয়ার পর প্রথম আলো কার্যালয়ে দেওয়া এক সংবর্ধনায় এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করলেন লতিফুর রহমান।
লতিফুর রহমান সাহেব বিজনেস ফর পিস পুরস্কার পেয়েছেন অতএব তাকে অভিনন্দন।
সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং নৈতিকতা মেনে ব্যবসায় করার জন্য তিনি তরুণদের আহবান জানান। এপ্রসঙ্গে আমি আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ করতে চাই।
নৈতিকতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা একটি আপেক্ষিক বিষয়। একটি বিষয়। একজনের কাছে নৈতিক মনে হলেও আরেকজনের কাছে নয়।
যেমন ব্যবসায়ে মুনাফা অর্জন করাটা অনৈতিক নয় কিন্তু সামাজিক দায়বদ্ধতা মানতে গেলে ব্যবসায়ে মুনাফা অর্জন করাটাই কঠিন। এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাটা অত্যন্ত সৃজনশীল (বা ব্যবসায়িক বিচক্ষণতাপূর্ণ) কাজ।
নৈতিকতার সংজ্ঞা কি? সমাজ যাকে ভাল মনে করে, প্রচলিত আইন যাকে সঠিক মনে করে সেটাই নৈতিক। কিন্তু প্রচলিত সমাজ সমসময়ই কি সঠিক কাজটি করে বা আইনও কি সবসময় জনগণের কল্যাণের বিষয়টি দেখে?
তাহলে নৈতিকতা মানে কি?
বাংলাদেশে যখন অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলো তখন অধিকাংশ মানুষ এর পক্ষে গেলো। প্রচলিত আইনের বিরুদ্ধে এই আন্দোলকে নিশ্চয়ই কেউ অনৈতিক বলবেন না।
আবার যারা সেই সময়ের আইন মেনে নিজেদের পাকিস্তানের আনুগত্য প্রকাশ করলেন সেটিকেও নৈতিক বলা যাবে না। তাহলে আইন না মানাটাও অনৈতিক না হতে পারে। সেই অর্থে নৈতিকতা বিষয়টি প্রকৃতই আপেক্ষিক।
সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টিও তেমন।
ব্যবসায়ের মূল উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন।
আইন মেনে প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করবে এটাই স্বাভাবিক।
এখন সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে গেলে মুনাফা ত্যাগ করতে হয়। আবার মুনাফা বাড়াতে গেলে জনকল্যাণ চলে না। কেউ কেউ বলবেন, সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে প্রতিষ্ঠান আরো বিকশিত হয়। তাহলে সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সুনাম সৃষ্টির প্রচেষ্টাটি মূলত মুনাফা বৃদ্ধির পরোক্ষ প্রক্রিয়া।
এটাকে কি সামাজিক দায়বদ্ধতা বলবো না ব্যবসায়ের নতুন কৌশল বলবো?
আমার এই প্রশ্নগুলোই লতিফুর রহমানের কাছে। আমরা আসলে নৈতিকতার সংজ্ঞা দিতে পারবো না এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা বলে যেটি প্রকাশ করি সেটাকে আপাত দৃষ্টিতে ভাল মনে হলেও মুনাফা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া ছাড়া কিছু না।
তাহলে কি ব্যবসায়ীদের সামাজিক দায়বদ্ধতা নেই?
আমার মতে নেই। সঠিক ট্যাক্স দেওয়া, সঠিক মজুরি দেওয়া, সঠিক মানের পণ্য বা সেবা দেওয়া এটাই ব্যবসায়ের স্বাভাবিক নিয়ম। যারা এর ব্যতিক্রম করে তারা আসলে ব্যবসায় না করে প্রতারণা করে।
আর সঠিকভাবে তা পরিচালনা করাটাই ব্যবসা। একটি নিয়মিত কাজ। এই কাজ করা হলে তিনি সঠিক কাজটি সঠিকভাবে করছেন। এটার জন্য তার কোনো আলাদা কৃতিত্ব নেই। তবে আমাদের সমাজে এই ধরণের ব্যবসায়ীর সংখ্যা কম বলে আমরা লতিফুর রহামানের মতো ব্যবসায়ীদের সম্মান করি।
কিন্তু এর মধ্যে বিশেষ কোনো কৃতিত্ব নেই। একজন ব্যবসায়ীর যা করা দরকার তিনি তাই করছেন এবং এ জন্যেই তাকে অভিনন্দন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।