আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্যবসায় সাংবাদিকতার কেন্দ্রে শেয়ারবাজার

গল্প লিখতে ভালোবাসি

সকালে একসঙ্গে পুরো পত্রিকা পাওয়া যায় না। হকারের হাত থেকে পত্রিকা দরজার নিচ দিয়ে মেঝেতে পড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা ভাগ হয়ে যায়Ñবলছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মিনহাজ সাহেব। কথা হচ্ছিল রমনা পার্কের বেঞ্চিতে বসে। সকালের দৌড়ঝাঁপ শেষে তিনি বেঞ্চিতে বসে ক্লান্তি দূর করছিলেন আর আমি হাঁপাচ্ছিলাম। জানালেন, ছোট ছেলে দখলে নেন খেলার পাতা, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়-য়া মেয়েটি সাপ্লিমেন্ট আর বড় ছেলের বউ বাণিজ্যপাতা।

ঘুম ভেঙে তার স্বামী একনজর শেয়ারের খোঁজ নেন। তাই মিনহাজ সাহেব নিজের পোর্টফোলিও বুঝতে আনকোরা পাতাটি পান না। তাতে অবশ্য দুঃখ নেই তার, আনন্দই হয়। তরুণ বয়সে ছেলে ব্যবসা চিনেছে বলে এই আনন্দ। পার্ক থেকে ফেরার সময় অবশ্য শেয়ারবাজারবিষয়ক একটি পত্রিকা তিনি বগলদাবা করেই বাসায় ফেরেন।

টেলিভিশনের চ্যানেল পরিবর্তন নিয়েও একধরনের মানসিক টানাপোড়েন আছে মেয়ে ও ছেলের বউয়ের মধ্যে। ছেলের বউ ১১টা বাজতেই দেখতে চান ইটিভি। স্বামীর মতো তিনিও বুঝতে চান শেয়ার ব্যবসা। মেয়ের ক্লাস না থাকলে দেখতে চান অন্য চ্যানেল। ছোট ছেলের পছন্দ খেলার চ্যানেল।

বুঝলেন সাংবাদিক সাব, শেয়ারের ব্যবসা এখন মানুষের ঘরে ঢুকে গেছে। এই উপসংহার শুধু মিনহাজ সাহেবের একার নয়। দেশের অনেক পরিবার এখন শেয়ারবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই সংবাদের উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারের গুরুত্ব প্রতিদিনই বাড়ছে। আর ব্যবসায় সাংবাদিকতাও নতুন মাত্রা পাচ্ছে দিন-দিন।

গত কয়েক বছরে বেড়ে এখন পুঁজিবাজারে বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৩০ লাখ। আলোচনার জন্য ধরে নিই, এর অর্ধেক দ্বৈত। অর্থাৎ একই ব্যক্তির একাধিক নামে অ্যাকাউন্ট। তার পরও অন্তত ১৫ লাখ মানুষ শেয়ারবাজারে অ্যাকটিভ। তার অর্ধেক যদি সুপার-অ্যাকটিভ হয়, সে সংখ্যাও কম নয়, সাড়ে সাত লাখ।

টেলিভিশনের জন্য এই দর্শকের সংখ্যা খারাপ নয়। তার অর্ধেক যদি প্রতিদিন ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে লেনদেন করতে যায়, তবে সে সংখ্যাও কম নয়, সাড়ে তিন লাখেরও বেশি মানুষ। একটি পত্রিকার সার্কুলেশনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে এই পাঠকসংখ্যা। সুতরাং পাঠক বা দর্শক টানতে শেয়ারবাজারের সংবাদ কোনো হিসেবেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটা ঠিক যে রাজনীতি, অপরাধ, আইন ও সা¤প্রতিক নানা ঘটনা সংবাদ হিসেবে জনপ্রিয়।

সেসব ঘটনা আবার প্রভাব ফেলে শেয়ারবাজারের লেনদেনের ওপর। সে ক্ষেত্রে বাজার-পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে আগ্রহীরা দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন থাকেন। তাহলে কি শেয়ারবাজারের পাঠক বা দর্শকের সঙ্গে পার্থক্য থাকছে না অন্য দর্শক বা পাঠকের? পার্থক্য থাকছেই। শেয়ারবাজার বিষয়ে ইটিভির জনপ্রিয় প্রোগ্রামই এর প্রমাণ দেয়। চাকরির পাশাপাশি যারা বিনিয়োগ করে রেখেছেন শেয়ারবাজারে, তারা প্রতিদিনের বাজার-পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পারছেন সেই অনুষ্ঠান থেকে।

অনেকে তথ্য পেতে ব্যবহার করছেন ইন্টারনেট। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর জানার আগ্রহ, তার বিনিয়োগ করা কোম্পানির শেয়ার বাড়ল কি কমলো। এরপরই বিনিয়োগকারীর চাহিদা আরও বাড়ে, তিনি জানতে চান, তার শেয়ার কেন বাড়ছে না বা কবে বাড়বে বা কতটুকু বাড়বে। এ কাজটি করা সাংবাদিকের দায়িত্ব বলে মনে করি না। সাংবাদিক নির্মোহভাবে ঘটনার বর্ণনা করে যাবেন।

বিশেষণ করে কোন শেয়ার ক্রয়-উপযোগী বা বিক্রয়-উপযোগী হয়েছে, তা নির্ধারণ করা সাংবাদিকের কাজ নয়। তার পরও কোনো একটি সেক্টরের দাম বাড়তে থাকলে সে বিষয়ে অবশ্যই প্রতিবেদন হতে পারে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, বাজারের নিয়ন্ত্রণ যেন সাংবাদিকের হাতে চলে না আসে। কারণ বাজার তথ্যনির্ভর। অনেক বিনিয়োগকারী অঙ্কের হিসাব না জেনেই বিনিয়োগ করে বসে আছেন বাজারে।

গুজবে গা ভাসানো ছাড়া এখন আর তেমন কিছু তাদের করার নেই। সেই সব গুজবে বাজারে দাম তরতর করে বাড়তে এবং তরতর করে নামতেও দেখা গেছে। সেসব অবশ্যই সাংবাদিকেরা তুলে ধরেন তাদের প্রতিবেদনে। পুঁজিবাজারের প্রতিদিনের লেনদেনের হিসাবের সঙ্গে বিশেষজ্ঞ ব্যাখ্যাও এখন পত্রিকার পাতায় দেখা যায়, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য উপকারী। বাজার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছেÑএ কথা অনেকবার সাংবাদিকেরা বলেছেন।

একই সঙ্গে বলা হয়েছে, ’৯৬-এর মহা ধসের মতো ঘটনা এখন ঘটার আশঙ্কা নেই। সে ক্ষেত্রে বাজারের ঊর্ধ্বগতিতে মুনাফা পকেটে পুরে যারা খুশি হন, তারা বাজার পতনে দোষ কাদের ঘাড়ে দেবেন, সেটা কৌতূহলোদ্দীপক প্রশ্ন। সাংবাদিকেরা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সংবাদ সম্মেলন থেকে সংগ্রহ করে এরই মধ্যে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন একটি কথা, তা হলো, বিনিয়োগে লাভ-লোকসানের সম্ভাবনা ও ঝুঁকি সমান সমান। ব্যবসায় সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার সাম্প্রতিক সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে দেশের আর্থিক খাতের শৃঙ্খলার বিষয়টি জড়িয়ে পড়েছে।

এর সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়েছে ব্যাংক ও অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বাজারে মনোযোগ আছে অর্থমন্ত্রীর, মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির। সরকারি প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে আনতে প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিয়েছেন, এটি বাজারের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মনোযোগ ধরে নেওয়া যায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) নানা উদ্যোগ, কোম্পানির লেনদেন বন্ধ করা বা চালু করাসহ নানা বিষয় এরই মধ্যে সংবাদ হয়েছে। এসব ঘটনাই ব্যবসায় সাংবাদিকতার উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারের গুরুত্বকে যথাযথভাবে বর্ণনা করে।

পুঁজিবাজারে ব্যাংক ও অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ, তা সংশোধন করতে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চেষ্টার সংবাদমূল্য ব্যবসায় সাংবাদিকতার জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে, দর্শক বা পাঠক বিচারে ব্যবসায় সাংবাদিকতা হিসেবে পুঁজিবাজার অবহেলা করার কোনো বিষয় নয়। আবার বিষয় হিসেবেও তা গুরুত্বও হারাচ্ছে না। তবে বাজারের সংবাদ শুধু যে ব্যবসায় প্রতিবেদক সংগ্রহ করছেন, তাও নয়। সংসদ প্রতিবেদক এনে দিচ্ছেন বাজার সম্পর্কে সংসদীয় কমিটির ব্রিফিং।

অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের পাশাপাশি সচিবালয় প্রতিবেদকেরাও বাজার সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীর মতামত এনে দিচ্ছেন। আগেই বলা হয়েছে, পত্রিকার পাতায় প্রতিদিনের বাজারের সূচক ও লেনদেনের তথ্য দেওয়া ছাড়াও বিশেষজ্ঞ মতামত দেওয়া হয়। এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও সপ্তাহের বাজারের একটি বিশ্লেষণ বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ কাড়ে। কোনো কোনো চ্যানেল এরই মধ্যে অর্থনীতির আলাদা সংবাদ প্রচার করে ব্যবসায়-সম্পৃক্ত মানুষের মনোযোগ কেড়েছেন। সেখানে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে পুঁজিবাজার।

ধারণা করা হচ্ছে, সে গুরুত্ব সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে। @আনোয়ার সাদী মিডিয়াওয়াচে প্রকাশিত Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.