শুচি সৈয়দ । । । । ।
। । । । ।
। । । । ।
। । । । ।
। । । । ।
। । । । ।
। । । । ।
। । । । ।
। । । ।
‘সন্ত্রাসীর কোনও দল নাই’ এই উক্তি শুনতে শুনতে ত্যক্ত-বিরক্ত সবাই।
কারণ, আমরা দেখছি বরং উল্টো সন্ত্রাসীরই দল আছে কিংবা দলগুলোরই সন্ত্রাসী আছে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পত্রিকাšতরে যখন বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের ধরা হলেই দেখা যায় তারা কোনও না কোনও দল করে। ’ তখন সে বক্তব্যে উল্লেখ থাকে না যে, সে দল যেমন ক্ষমতাসীন হতে পারে হতে পারে তেমন ক্ষমতাচ্যুত। এ তো গেল প্রধানমন্ত্রী তথা একটি দলের সভাপতির স্বীকারোক্তি। যাদেরকে নিয়ে এই স্বীকারোক্তি তাদের জবানিটা কি? তাদের জবানি আরও পরিষ্কার, তারা জানিয়ে দিয়েছে কোনও রাখঢাক ছাড়াইÑ ‘যে যে দলই করি না কেন ব্যবসায় তো একটাই।
’ নগর ভবনে জড়ো হওয়া সন্ত্রাসীদের ভাষ্য এটি। ‘ব্যবসায়’টি কি? স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে হ্যাঁ, তার উত্তরটিও চমৎকারÑ সন্ত্রাস। সন্ত্রাস এখন আমাদের সমাজে ‘ব্যবসায়’-এ পরিণত হয়েছে! আর দলগুলো পরিণত হয়েছে এই ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তথা দোকান-এ। আর আমরা জনগণ, অসহায় উলুখাগড়া মানুষ পরিণত হয়েছি সেই দোকানিদের পণ্যে। টোকাই মিজান আর টোকাই নাই, টোকাই স্রষ্টা শিল্পী রফিকুন্নবী লজ্জা পাবেন নাÑ কারণ টোকাই মিজান আপনার লজ্জা অপনোদন করে দিয়েছে, সে পরিণত হয়েছে টাকাই মিজান-এ।
জনাšিতকে বলে রাখি, শিল্পী আপনাকেও কিন্তু পণ্যে পরিণত হতে হবে টাকাই মিজানের ‘ব্যবসায়’-এ। টোকাইকে নিয়ে আপনি যেমন ব্যবসা করেছেন, টোকাই মিজানও তেমনই ব্যবসা করবে আপনাকে নিয়ে। অচিরেই হয়তো স্বীয় তুলিতে স্বীয় রক্তে আপনাকে আঁকতে হবে অšিতম ছবি। কেননা, সমাজ এখন টাকাই মিজানদের। টোকাই বলে তাকে আর অবহেলা করার স্পর্ধা করবেন না।
টোকাই মিজান, কাঙালী জাকির সবাই মিলে-মিশে আÍীয় হেন বিরাজ করছে এই দেশে। এরা সহোদর, পরস্পরের যেরকম সহোদর দলগুলো বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াত। পার্থক্য শুধু সময় নির্বাচনে। পুরোনো প্রবাদে বলা হত, ইংল্যাণ্ডের রানীর রাজ্যে সূর্য অ¯ত যায় না। বর্তমানকালের প্রবাদ বচনে বলা যায়, সূর্য অ¯ত যায় না সন্ত্রাসীদের গোটা জীবনে সে কথাই জানিয়েছিলেন মিরপুরের এস এ খালেক।
বলেছিলেন খুব সরল স্বীকারোক্তিতে ‘আমি তো দল পাল্টাই না, সরকারই পাল্টে যায়। আমি সবসময়ই সরকারি দলে। ’ এরাও তাই। সরকারি কিংবা বেসরকারি এরা সবসময়ই ক্ষমতায় এবং ক্ষমতার বৃত্তের ভেতর থাকে বৃত্তের বাইরে কেবল আমরা উলুখাগড়া জনগণ।
সে স্বীকারোক্তিই করেছেন কর্নেল অলি আহমদ।
বলেছেন, দিনে বিএনপি রাতে আওয়ামী লীগ করলে আন্দোলন হবে না।
হ্যাঁ, তফাৎটা কি? স্বামীকে প্রশ্ন করে বেকুব হওয়া বিজ্ঞাপনের গৃহিণীর মতো আমরাও বেকুব বটে। তবে না, লবণের তফাৎ বুঝে স্ব¯িতর হাসি হাসা আমাদের পক্ষে মোটেই সম্ভব নয়। বরং আমাদের অবস্থা ছিইল্লা-কাইটা-লবণ লাগাবার লবণের মতোই করুণ-অসহায়!
কুমিল্লার নয়টি হিন্দু পরিবারকে বসতভিটে থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নিয়েছে স্থানীয় যুবদলের সন্ত্রাসীরা আর দখল নিয়েছে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি।
বাড়িটি যেনতেন লোকের নয়, রীতিমতো একজন বনেদি এবং বিখ্যাত মানুষের। প্রতিবেশী দেশের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তীর বাড়িÑ দেশভাগের সময় তারা ত্রিপুরা চলে যাওয়ার পর তাদের বাড়িটাতে তারই জ্ঞাতি-গোষ্ঠী বসবাস করছিলেন। তারা গত ৬০ বছর ধরে ওই বাড়িটিতেই দখলীস্বত্বসহ বসবাস করে আসছিলেন। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই সন্ত্রাসীরা তাদের ভিটেছাড়া করে দিল। লুটপাট করে দখল নিয়ে নিল সে বাড়ি।
উচ্ছেদ ঠেকাতে বাড়িটির বাসিন্দারা পুলিশি সাহায্য চেয়েও পাননি। পুলিশ ‘আশ্চর্যজনক নীরবতা’ পালন করেছে। এই ‘আশ্চর্যজনক নীরবতা’ সৈয়দ মুজতবা আলীর পণ্ডিত স্যারের সাহেবের তিনঠেঙে কুকুর আর পণ্ডিতের বেতনের সমীকরণ টানা প্রশ্নের উত্তরের সেই ‘হিরন্ময় নীরবতা’ কিনা জানি না, তবে এই ‘নীরবতা’ যে পুলিশের জন্য লাভজনক এবং আমাদের জন্য ‘লজ্জাজনক’ নীরবতা তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এই গ্লানিময় নীরবতা, কাপুরুষতা, ক্লীবতার কোনও জবাব আছে কি?
পত্রিকার পাতা খুললেই প্রতিদিন দেখছি ‘সিরাজগঞ্জের পল্লীতে একাত্তরের বধ্যভূমি’, ‘নাটোরে ছাতনী বধ্যভূমিতে শেষ পর্যšত স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্র¯তর স্থাপিত হলো’ ইত্যাদি। কিন্তু আমরা বর্তমানের যে বধ্যভূমিতে উপনীত, প্রতিদিন যে খড়গের নিচে কালযাপন করছি সে বধ্যভূমিতে সৌধ রচিত হবে কবে?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রথিতযশা লেখক, অধ্যাপক।
তাকে চিঠি লেখা হয়েছে হত্যার হুমকি দিয়ে আজরাইলের জবানিতে। হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি লেখা হয়েছে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে। হত্যার হুমকিদাতারা বলেছে, প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় জ্বালিয়ে দেয়া হবেÑ যদি তাদের দাবি না মানা হয়। স্বাধীনতা-উত্তর অরাজক রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিবাদে দেশ ছেড়েছিলেন অভিমানী প্রতিভাবান তরুণ জাফর ইকবাল সেদিনের সেই তরুণ আজ প্রাজ্ঞ অধ্যাপক। আজ দেশপ্রেমিক এই অধ্যাপক যখন বিদেশের লোভনীয় চাকরি, সুস্থির জীবন ছেড়ে দেশের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে উদ্যোগী তখন আজরাইল হয়ে তাকে মুখ ভেঙাচ্ছে প্রতিক্রিয়াশীল অন্ধকার।
প্রিয় অধ্যাপক, আপনার জানা নেই দেশ আজ ভরে গেছে টোকাই মিজান, কাঙালী জাকির, মুরগি মিলন আর এরশাদ শিকদারের মতো হাজারও সন্ত্রাসী আর অপরাধীতে।
তাই আমরা যতই শুনি না কেনÑ সন্ত্রাসীর কোনও দল নেই, তা ঠিক নয়। সন্ত্রাসীর দল আছে, আপা আছে, ম্যাডাম আছে, স্যার আছে, ভাই আছে, জজ আছে, ব্যারিস্টার আছে। সন্ত্রাসের ব্যবসা আছে। আর আছে ‘পণ্য’ এই আমরা উলুখাগড়া জনগণ।
। দৈনিক যুগাšতর। ২০০০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।