তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা গ্রাম থেকে এসেছেন একজন কবি। কাজী নজরুল ইসলামের সাথে দেখা করতে চাইছেন তিনি। কাজী নজরুল তাকে ডেকে নিলেন। পাশে বসালেন। এক কাপ চা খাওয়ালেন।
এতবড় একজন কবির কাছে এমন বিনয়ী ব্যবহার পেয়ে গলে গেলেন গ্রাম্য অতিথি। কিন্তু এবার তিনি তার আসার উদ্দেশ্য খুলে বললেন। কাজী নজরুল তার কথা শুনে কাশি দিতে গিয়েও যেন থেমে গেলেন।
গ্রামের কবি বলে চলেছেন, কবি সাহেব! আমার পড়াশোনা ক্লাস এইট পর্যন্ত। মাথায় আমার বাবরি চুল আপনার মতোই।
আর আমার লেখা কবিতার সংখ্যা পনের হাজার। তো আমি কেন নজরুল ইসলাম হতে পারবো না?”
বেচারা কবির কথা শুনে নজরুল অবাক হয়ে হতবাক। এর কথায় সায় দেয়া ছাড়া আপাতত গতি নেই। তিনি উত্তর দিলেন, হক কথা। তোমার কাছে ভাই আমি হার মানলাম।
যেহেতু তোমাকে আমার চেয়ে কমবয়সের বলে মনে হচ্ছে- তাই কদমবুসি করা থেকে বিরত থাকলাম।
কাজী নজরুলের কথার মর্মার্থ বুঝতে পারলেন না বেচারা কবি। উল্টো আরও লম্বা হলো তার আলাপ। ‘আচ্ছা! এই গানগুলো নিয়ে আমি এখন কী করতে পারি?’
নজরুল বললেন, আমি যা করেছি তাই করুন।
আপনি কি করেছেন?
আমার সব গান জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছি।
কত গান লিখেছি, কাকে দিয়েছি, কখন দিয়েছি, কেমন করে দিয়েছি- এসব নিজেও জানি না। কিছু গান রেকর্ড হয়েছে গ্রামোফোন থেকে, গীতিকার হিসেবে আমার নাম আছে। কিছু বই বেরিয়েছে। বাকি অনেক গান ভক্তরা এখনও খুঁজে বেড়াচ্ছে।
বেচারা কবি এসব শুনে চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকলো কবির দিকে।
খুব সহজ ভঙ্গিতে তিনি কাজী নজরুলকে বললেন, তাই নাকি! তাহলে আমার গানগুলো শিয়ালদা স্টেশনে গিয়ে যাকে পাই একটি করে ধরিয়ে দেই? কী বলেন!!
নজরুল সায় দিয়ে বললেন, জ্বি, তাই করুন।
গ্রাম্যবেচারা কবির সামনে নজরুল অতিকষ্টে হাসি চেপে রেখেছেন। ভাগ্যিস, লোকটি বিদায় হলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।