৯৭) পনের বছর পর
মেয়েটি একদিন খুব ভোরবেলা
নিশ্চিন্তপুরে যায়।
বাঁশ বাগানের নীচ দিয়ে
মেঠো পথ দিয়ে ঘুরে ঘুরে
অনেক দুরের বট গাছটার নীচে গিয়ে বসে।
বাতাসেরা চেনা গন্ধ মেখে
মাতায় চারিদিক।
মেয়েটাকে খুব অবাক করে দিয়ে দুর থেকে
হেঁটে আসতে থাকে অনেক কালের চেনা কেউ।
অপেক্ষার অজস্র পথ পাড়ি দিয়ে
তার সাথে দেখা।
দু'চোখের দৃষ্টিকে মেলে দিয়ে
তাকিয়ে থাকে দু'জনায়।
"এলে?এতদিন পর এলে?"
প্রশ্ন করে ছেলেটি খুব আস্তে করে।
"এমনিতো কথা ছিলো....
পনের বছর পর!"
মেয়েটি বলে।
ছেলেটি বলে, "পনের বছর অনেক দীর্ঘ সময়।
আগে জানি নাই।
অপেক্ষার পনের বছরে জানলাম।
মনে হলো, অনন্তকাল তোমার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। "
ছেলেটি হাতের ডাব টি বাড়িয়ে দেয় মেয়েটির দিকে।
"নাও। তৃষ্ণা মেটাও।
"
"তৃষ্ণা মেটাব?"
অবাক মেয়েটি ছেলেটার দিকে তাকায়।
"কত কাল তৃষ্ণার্ত হয়ে আছি।
দু'চোখের তৃষ্ণাকে ছুঁতে পারে নাই কিছু।
মনটাকে মরুভূমির মত ধূ ধূ বালুচর করে রেখেছি। "
মহাসড়কের কোনায় এসে বসে পড়ে মেয়েটি।
সামনে এগিয়ে যাওয়া দীর্ঘ একটু নুয়ে পড়া ছেলেটি
ওর দিকে ফিরে আসে।
"কষ্ট হচ্ছে খুব?"
"কষ্ট!"
মেয়েটি হেসে ফেলে।
"হৃদয় কতটা পুড়লে তাকে কষ্ট বলে?"
ওর হাসির ছটায় ছেলেটার মুখটাও হাসি হাসি।
রাস্তার পাশে বসে থাকা দুইটা মানুষ।
পনের বছর পর।
হাতে হাত।
চোখে চোখ।
হায়রে পনেরটি বছর!
মহাকাল ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
ওদের আত্মত্যাগের জন্য
পৃথিবীর কারো কি কোন লাভ হয়েছিলো?কোথাও?
না বলা অজস্র কথারা ওদের চোখে।
না বলা অনেক বেদনারা ওদের বুকে।
আজ ওদের দু'চোখ মেলার দিন।
আজ ওদের হিসাব মেলাবার দিন।
"বাতাসে খুব ধূলোবালি ঘুরে বেড়াচ্ছে
তোমার এই সবুজ গ্রামেও",
অনুযোগ করে মেয়েটি।
ছেলেটি দু'চোখের বালি খুঁজে দেবে বলে
খুব কাছে এসে দাঁড়ায়।
মেয়েটার চোখে বালি।
ছেলেটার চোখে জল।
আজ কে কার চোখের বালি খুঁজে দেবে?
পনের বছর পর?
ছেলেটা বলে পাগলী মেয়ে।
মেয়েটা বলে পাগল ছেলে।
ভীষনভাবে কাঁদতে থাকা দু'টো মানুষ
হাতে হাত রেখে হাঁটতে থাকে
অস্তগামী সূর্যের দিকে ........
ঐ সূর্যের নীচেই ছেলেটার স্বপ্নের বৃদ্ধাশ্রম।
যেই স্বপ্ন পূরণের জন্য ছেলেটা মেয়েটাকে
ছেড়ে এসেছিলো।
পনের বছরের শপথ শেষে
দু'টো মানুষ আবার পৃথিবীর পথ হাঁটে।
আজ অক্টোবর ১/২০০৯
বন্ধু সহেলীকে কবিতাটা উৎসর্গ করলাম।
ও এমন গভীর বোধ সম্পন্ন একজন মানুষ, ওকে খুব চেনা মনে হয়।
নিজের ভিতরকার একজন মনে হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।