আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বলছি - বাংলাদেশের ছদ্মবেশী একজন ''ঘাতক'' এর গল্প !!!!!

ঘটনা ১ - ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের কিছুদিন আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একটি গ্রামের নাম 'শিমুলতলী'। সেই গ্রামেরই প্রভাবশালী ও সবার শ্রদ্ধেয় ছিলেন আশরাফ চৌধুরী। যার পিতাও একজন দয়ালু ব্যক্তি হিসেবে পুরো গ্রামে সুপরিচিত ছিলেন। আশরাফ সাহেবের একজন পালিত ভাই ছিল যাকে আশরাফ সাহেবের বাবা শিশুকালে কুড়িয়ে এনেছিলেন এবং উনার বাড়িতে নিজের সন্তানের মতো বড় করেছেন। যার নাম জমির বক্স।

জমির বক্স পেশায় একজন উকিল। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে আশরাফ চৌধুরী তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু পাশের গ্রাম রসুলপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোয়াজ্জেম হোসেন এর একমাত্র ছেলে কিশোর হাসান এর সাথে উনার একমাত্র কিশোরী বালিকা লাবনীর বাল্য বিবাহ দেন। দুই বন্ধুর সম্পর্ক আরও মজবুত করার জন্য তাঁরা তাদের দুই কিশোর কিশোরীর বিয়ের আয়োজন করেন। কথা হয় যখন লাবণী সাবালিকা হবে তখন স্বামী হাসান এর ঘরে তুলে দেয়া হবে। ঘটনা ২- লাবণী ও হাসানের বাল্য বিবাহের কয়েকদিন পর দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে যায় , ১৯৭১ এর ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর মুলত পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে যার পরিনামে শুরু হয় পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার যুদ্ধ।

সেই যুদ্ধের সময় শিমুলতলির আশরাফ সাহেব মুক্তিযুদ্ধে অংসগ্রহন করার জন্য গ্রাম ছেড়ে যান। আর এই সুযোগে সবকিছুর দেখাশোনার জন্য দায়িত্ব পায় আশ্রিত ভাই জমির বক্স যিনি গোপনে একজন পশ্চিম পাকিস্তানপন্থী। শিমুলতলিতে পাক হানাদার ক্যাম্প করলে তাদের সহযোগী হিসেবে জমির বক্স সহায়তা করে এবং আশরাফ চৌধুরীর বাসভবন 'সোনার বাংলা ভবন'' এ পাকিস্তানী হানাদারের ক্যাম্প বসায় জমির বক্স। এরমাঝে যুদ্ধরত অবস্থায় হাসান এর বাবা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মারা যায় এবং জমির বক্স হাসানদের বাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। আগুন লাগানোর আগে তা টের পেয়ে হাসান এর মা হাসান কে নিয়ে পালিয়ে যায়।

এমনিভাবে নয় মাসের যুদ্ধ শেষে স্বাধীন বাংলাদেশে লাবনীর বাবা যুদ্ধ জয় করে ফিরে আসে। গ্রামের সবাই জমির বক্সের যুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য আশরাফ সাহেবের কথা মতো শাস্তি স্বরূপ জুতার মালা পরিয়ে গাধার পিঠে চড়িয়ে জমির বক্সকে গ্রাম থেকে বের করে দেয়। ঘটনা ৩- স্বাধীনতার পর ২৫ টি বছর কেটে যায় একদিন তাড়িয়ে দেয়া জমির বক্স আবার শিমুলপূরে আশরাফ সাহেবের বাড়িতে ফিরে এসে অতীতের কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং ভালো হয়ে দেশের সেবা করার সুযোগ চায়। আশরাফ সাহেবও জমির বক্সের কথা বিশ্বাস করে তাকে ক্ষমা করে দেন। এরপর শুরু হয় একজন 'ঘাতক' রুপি ভণ্ডের নতুন ষড়যন্ত্র যা তাঁর ২৫ বছর আগের পশ্চিম পাকিস্তানীদের পরাজয়ের প্রতিশোধ এর খেলা।

কিন্তু সবশেষে সেই 'ঘাতক' জমির বক্সের সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয় এবং এই দেশকে পাকিস্তানীদের সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার সকল মিশন ব্যর্থ হয়। যা ছবির প্রতিটি টানটান দৃশ্য দেখতে পাবেন। বন্ধুরা এতক্ষন যে ''ঘাতক'' এর গল্প বলছিলাম তা হলো ১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শহিদুল ইসলাম খোকন এর একটি অনবদ্য ছবির গল্প। যেখানে পরিচালক খুব সফল ভাবেই স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধীকারীর অতীত ও স্বাধীন বাংলাদেশে তাদের ছদ্মবেশে থাকা দেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডের একটি চিত্র চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। ছবির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি দৃশ্যর শক্তিশালি চিত্রনাট্য ছবির প্রান এবং সকল অভিনেতা অভিনেত্রীর অভিনয় দুর্দান্ত ছিল।

বিশেষ করে 'ঘাতক' চরিত্রে হুমায়ুন ফরিদি এক কথা অসাধারন। এছাড়া আলমগীর (হাসান) শাবানা (লাবণী) আশরাফ চৌধুরী ( খলিল) এর অভিনয় চমৎকার ছিল। এই ছবির গানগুলোর কথা ও সুর ছিল একটু অন্যরকম যা ছবিটিকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। মিলটন খন্দকারের লিখা আর আমাদের কিংবদন্তি সুরকার আলম খান এর মেলোডি সুর করা ছিল সবগুলো গান। ের মধ্য এন্দ্রু কিশোর এর কণ্ঠে আলমগীরের ঠোঁটে '' যদি মানুষের মত মানুষ হতে চাও'' গানটি ছিল অসাধারন।

যেখানে আমাদের দেশের সকল গুণীদের রুপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে । দীপিকা দিঠি ও সজিব রহমান এর কণ্ঠে , আলমগীর ও শাবানার ঠোঁটে '' এতো কাছে দুজনে '' গানটিও বাংলা মেলোডি রোমান্টিক গানের ভক্তদের মন জয় করবে এই কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সব শেষে শুধু এইটুকু বলবো যে যারা বাংলা সিনেমা না দেখে না বুঝে শুধুই আধুনিকতা প্রকাশের জন্য নাক সিটকান তাঁরা ছবিটি দেখবেন এবং আশাকরি ভালো লাগবে। আমাদের গরীব দেশের প্রজুক্তির সুবিধাবঞ্ছিত মেধাবী পরিচালক এর একটি ভালো গল্প ও চিত্রনাট্যর ছবি 'ঘাতক'। যারা আজ থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার, ব্যাচেলর টাইপ নাটক কে বাণিজ্যিক ছায়াছবি বলে চালিয়ে দেন এবং যেসব দর্শক সেসব ছবি দেখে বাণিজ্যিক ছবির কোন ধারনা পায়না তাদের জন্য '' ঘাতক'' দেখাটা অবশ্যই জরুরী।

এই 'ঘাতক'ই হলো আমাদের মুলধারার বানিজ্জিকছবির একটি সফল উদাহরণ। ব্যাচেলর, চন্দ্রগ্রহন এর ছবির পরিচালকদের বলবো আপনারা মুল বাণিজ্যিক ছবি কি ও কেমন হয় আগে তা শিখুন ও জানুন এরপর দর্শকদের জন্য সিনেমা তৈরি করুণ। এতে আপনার ও দর্শকদের সবারই মঙ্গল হবে। শহিদুল ইসলাম খোকন এর ঘাতক বাংলার সব সেরা কিছু পেতে এই ভাণ্ডারের লিঙ্কে খোঁচা দিন - একটি শিক্ষিত রেডিও  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.