সবাইকে শুভেচ্ছা... লেখালেখিতে যাদের হাত ভাল চাইলে উপন্যাস লিখতে পারেন কমলাকে নিয়ে। তার দেখা পেতে একটু কষ্ট করতে হবে এই যা। রাজধানীর সদরঘাট হতে ভোলাগামী লঞ্চ ধরে যেতে হবে তজুমদ্দিন নামক একটা উপজেলায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোন এক কোনায় শুয়ে আছে গল্পের নায়িকা কমলা বেগম। শরীরে অজস্র ক্ষতচিহ্ন, চোখে বাধ ভাঙা অশ্রু আর সামনে অনিশ্চয়তার সমুদ্র।
একজন কমলার অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যত নিয়ে গড়ে উঠা এ কাহিনী লিখতে গেলে পার্শ্বচরিত্রের অভাব হবেনা। খন্ড খন্ড কিছু ঘটনা, বিচ্ছিন্ন কতগুলো চরিত্র এবং কালের প্রবাহ হতে খসে যাওয়া কিছু সময় একত্র করলে তৈরী হবে বিশাল ক্যানভাসের এক গল্প। যেখানে থাকবে ক্ষুধা আর দরিদ্রের সাথে লড়াই করে বেড়ে উঠা এক তরুণীর জীবন যুদ্ধ। গল্পের কোন নায়ক নেই। আছে একাধিক খলনায়ক।
এক বছর আগে কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যায় কমলা। তারও আগের ঘটনা। প্রতিবেশি অলিউল্লাহর ঘটকালিতে বিয়ে হয় তার। বাকপ্রতিবন্ধী রিকশাচালক মিজানকে ভাগ্য মেনে নিয়ে কমলা শুরু করে নতুন জীবন। কিছুদিন যেতেই বুঝতে পারে বিয়েটা ছিল আসলে অলিউল্লার প্রতারণা, তাকে ভোগ করার মহাপরিকল্পনার অংশ মাত্র।
সুযোগ পেয়ে একদিন রাস্তা হতে উঠিয়ে নেয় কমলাকে। অজ্ঞান করে নিয়ে যায় ঢাকা শহরে। ভয় আর প্রলোভনের কাছে পরাজিত হয় কমলা। ১২০০ টাকায় বাসার গৃহপরিচারিকার কাজ যোগাড় করে দেয় অলিউল্লাহ। কমলার শরীর আর তার পরিশ্রমের পূরো টাকাটাই ভোগ করতে থাকে গল্পের খলনায়ক।
কিন্তু এক সময় বেঁকে বসে কমলা। অস্বীকার করে অলিউল্লার পুতুল হয়ে বেচে থাকতে। শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। কয়েক দফা নির্মম পেটানোর পর পাঁচজনের একটা দলের কাছে বিক্রি করে দেয় কমলাকে। গল্পের ঘটনা প্রবাহ হতে বিদায় নেয় গোলকপুর গ্রামের রোস্তম আলীর ছেলে অলিউল্লাহ।
তবে বেশি দিনের জন্যে নয়।
কমলাকে ঠেলে দেয়া হয় দেহব্যবসায়। এখানেও বেঁকে বসে সে। অস্বীকার করে অন্ধকার জীবনের সাথে ফয়সালা করতে। ফলশ্রুতিতে নেমে আসে অকথ্য নির্যাতন।
ব্লেড আর ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয় তার শরীর। আশংকাজনক অবস্থায় রাস্তায় ফেলে চম্পট দিতে বাধ্য হয় দালালের দল। নদীতে অনেক পানি গড়িয়ে শেষপর্যন্ত নিজ গ্রামে ফিরে আসতে সক্ষম হয় কমলা। সবাইকে বলে দেয় তার কাহিনী। এবার গণরোষের শিকার হয় গল্পের খলনায়ক অলিউল্লাহ।
গণধোলাইয়ে মারাত্মক আহত অলিউল্লাহকে পুলিশ উদ্ধার করে এবং ভর্তি করে দেয় হাসপাতালে। এখান হতে দ্বিতীয়বারের মত হারিয়ে যায় সে।
প্রভাবশালী মহল বলতে একটা মহল আছে বাংলাদেশের শহর-বন্দর ও গ্রাম-গঞ্জে। তজুমদ্দিন উপজেলার শম্ভুপুর গ্রামও এর ব্যতিক্রম নয়। অলিউল্লার উদ্ধারে এখানেও এগিয়ে আসে এই প্রভাবশালী মহল।
এলাকার যুবলীগ নেতা শাহজাবুদ্দিন ও তার দলবল কমলাকে হাসপাতাল হয়ে উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। ভয় ভীতি দেখায় মামলা তুলে নেয়ার জন্যে।
এখানেই গল্পের শেষ হতে পারে। কারণ এর পর কমলার ভাগ্য কোনদিকে গড়াবে তার খবর কাউকে রাখতে হয়না। আসলে রাখার দরকারও হয়না।
কমলাদের মত হাজার হাজার যুবতী বাংলাদেশের জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও পাড়ায় পাড়ায় অলিউল্লাহ, প্রভাবশালী মহল আর আইনী লোকদের লোভ লালসার শিকার হয়ে নিয়মিত নির্যাতিত, নিষ্পেষিত আর ধর্ষিত হচ্ছে। এসব নিয়েই আমাদের দেশ। দেশকে ভালবাসলে এগুলোও ভালবাসতে হবে কিনা বুঝতে পারিনা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।