ভুল করেছি,প্রায়শ্চিত্য করবো না, তা তো হয় না চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা লেখাপড়া শেষ হওয়ার আগেই চাকরি পেয়ে যায়। এখানকার নিয়ম হল- সরকারী,বেসরকারী সব কোম্পানিই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জব ফেয়ারে অংশ নেয়। আর এখানেই ছাত্রদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি হয়। অনার্স কিংবা মাস্টার্স শেষ করার ৪/৫ মাস আগেই চাকরি পেয়ে যায়। মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিগুলো বিভিন্ন প্রদেশের শুধু সেরা ভার্সিটি তে যায়, যেমন হারবিন প্রদেশের সেরা ভার্সিটি হা-কোং-তা; জার্মানির মেশিনারিজ টুলস্ প্রস্তুতকারক কোম্পানি BOSCH তারা শুধু সেরা ভার্সিটি গুলোতে অংশ নেয়, আর এতে ঐ ভার্সিটির ছাত্র ছাড়াও অন্যান্য ভার্সিটির ছাত্ররাও অংশ নিতে পারে।
অবাক লাগে এরা চাকরির জন্য টেনশন করে পাশ করার আগেই, পাশ করার পরে কোন টেনশন নাই-সোজা অফিসে গিয়ে কাজ শুরু করে,একদিনের জন্যও বেকার থাকতে হয় না, বাপের কাছ থেকে কোন টাকা নিতে হয় না । আর আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর ৬ মাস বেকার ছিলাম, পাশ করার পর ঢাকায় এসে মেসে উঠেছিলাম, অবশ্য ঢাকায় আসার পরপরই একটা চাকরী হয়েছিল বেঙ্গল প্লাস্টিক,টঙ্গী ফ্যক্টরীতে কিন্তু তারা বেতন বলেছিল ৭৫০০ টাকা, থাকা-খাওয়া নিজের, দুপুরে লাঞ্চ বাবদ ২০ টাকা দিবে। তখন ভেবেছিলাম এত কম বেতনে চাকরী করব,এজন্য আর জয়েন করা হয় নি; পরে ৬ মাসে টের পেয়েছি কি ভুল করেছি, বাংলাদেশে চাকরি পাওয়া কত কঠিন। অথচ চাইনিজ ছাত্রদের কি মজা, জব নিয়েও চিন্তা নাই আবার বেতনও ভালো। চীনে যেসব কোম্পানি মনোপোলি বিজনেস করে সেগুলোতে বেতন বেশি, যেমন-চায়না মোবাইল, চীনে এরাই একমাত্র GSM কোম্পানি।
এছাড়া আছে Baidu, এরা google r মত জায়ান্ট; QQ - Skype, gtalk, yahoo messenger, msn র মত QQ. এগুলোতে অনার্স পাশ করা ছাত্ররা ৬/৭ হাজার RMB তে জয়েন করে আর মাস্টার্স ছাত্ররা ৯/১০ হাজার RMB এ জয়েন করে। এতথ্যগুলো আমি চাইনিজ ছাত্রদের কাছে শুনেছি, সঠিক কি না জানি না।
আমরা কয়েকজন সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা বেকার একসাথে শেওড়াপাড়াতে একটা মেস নিয়ে থাকতাম,বাপের কাছে টাকা চাইতে লজ্জা লাগত। ক্যম্পাসে থাকাকালীন সময়ে টিউশনি করার সুযোগ ছিল,কিন্তু ঢাকায় নতুন –কে দিবে টিউশনি,আমার কয়েক বন্ধু ওরা “টিউশনি করাতে চাই” এটা লিখে তা ফটোকপি করে ফার্মগেট-মনিপুর আবাসিক এলাকা, মিরপুর এলাকায় পোস্টারিং করেছিল;যদিও একটা টিউশনিও পাওয়া যায় নি। একজন একটা পেয়েছিল তার ভাইয়ের বন্ধু বিয়াম হাইস্কুলের শিক্ষক,উনার রেফারেন্সে।
বুয়েট সহ কিছু ভার্সিটির ছাত্ররা পাশ করার আগেই চাকরি পায় তবে এই সংখ্যা শতকরা হিসেবে খুবই কম। অধিকাংশেরই বেকারত্নের অভিশাপে ভুগতে হয়। আমাদের দেশের সরকার প্রধানরা- গণতান্ত্রিকভাবেই আসুক কিংবা সেনাবাহিনী থেকেই আসুক, তাদের এই বেকারদের কর্মসংস্হান সৃষ্টি নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কারিগরি & বিজনেস বিষয়ক সাবজেক্ট বেশি,কলা বিষয়ক সাবজেক্টগুলোতে আসন খুবই কম,কারন চীনারা কারিগরি & বিজনেস এর উপরই বেশী গুরুত্ব দেয়। চাইনিজরা ছেলেরা মূলত কারিগরি বিষয় নিয়ে পড়ে আর মেয়েরা বিজনেস বিষয়ে পড়ে।
নরমাল ইংরেজি, ইংরেজি সাহিত্য এগুলো কম; এরা পড়ে বিজনেস ইংলিশ,কমিউনিকেটিং ইংলিশ। বিজনেস ইংলিশের এক ছাত্রীর কাছে শুনেছি- আগে এই বিষয় পড়ে খুব সহজেই ভাল ভাল চাকরি পাওয়া গেলেও এখন কঠিন হয়ে পড়েছে কারন ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্ররাও এখন ইংরেজী শিখতেছে,তারা CET-6 পাশ করতেছে [CET-6 হল ইংরেজী বিষয়ক পরীক্ষা]। তবে বিজনেস ইংলিশের স্টুডেন্টদের চাকরির নতুন সুযোগ হয়েছে-চীনা কোম্পানির চাকরি নিয়ে বিদেশে যাওয়া। কিন্তু অধিকাংশ চাইনিজ ছাত্ররা চাকরী জীবনের শুরুতেই বিদেশে যেতে চায় না। আর আমরা বাংলাদেশীরা চাকরী নিয়ে বিদেশ যাওয়া তো দূরের কথা দেশের ভিতরেই পাই না।
অবশ্য দোষ আমাদেরই, ভোট দেওয়ার সময় দেখি-কোন চেয়ারম্যান বা এম.পি আমার এলাকায় রাস্তাঘাট করছে, ব্রিজ-কালভার্ট করছে;তাকে ভোট দেও। কে বেকারদের কর্মসংস্হানের ব্যবস্হা করল,এই আওয়াজ তুলি না।
আমি এখানে যে ল্যাবে Research এর কাজ করি সেখানে ৫ জন ছাত্র এই মাসে মাস্টার্স কমপ্লিট করবে, তাদের সবার চাকরী আগেই হয়ে গেছে; আগামী মাসে যার যার কর্মস্হলে যোগদান করবে। তারা ৫ জন মিলে কয়েকদিন আগে ডিনার পার্টি দিল,শিক্ষকসহ ল্যাবের সবাই ছিলাম। এদের মধ্যে একজন চায়না স্পেস স্যাটেলাইট কোম্পানি তে চাকরী পেয়েছে।
ভাবি আর শুধু অবাক হই-চাইনিজ বয়স্ক ব্যক্তিরা যুবকদের কল্যাণ নিয়ে চিন্তা করে আর আমাদের সমাজপতিরা আছে শুধু বস্তা পঁচা কিছু ডায়ালগ নিয়ে- যুবক সমাজের নৈতিক অবক্ষয়,সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়,ধর্মীয় অবক্ষয়। বেকারদের কাজের কোন ব্যবস্হা করবে না, তাদের কষ্ট বোঝার চেস্টা করবে না। বেকার হলে গার্লফ্রেন্ড তাকে ছেড়ে চলে যায়,বাপে টাকা দেয় না- কথা শোনায়;আবার এদিকে যৌন আকাঙ্খা মেটানোর জন্য পতিতার কাছে যাওয়া যায় না,শুরু হয় অপরাধ- ধষন,চুরি,ছিনতাই,ডাকাতি। সমাজে যারা এই অপরাধগুলো করে তাদের অধিকাংশই প্রথমে বেকার ছিল বলেই এই পথ বেছে নিছে কিন্তু যদি এরকম পাশ করার আগেই চাকরীর ব্যবস্হা হতো তাহলে এই শিক্ষিত বেকারদের জীবন কতই না সুন্দর হত।
চীনে কোম্পানীগুলো ছাত্রদের মাস্টার্স পড়ার ব্যবস্হা করে দেয়, আমার এখানে এক চাইনিজ বন্ধু আছে-সে ২ বছর Dalian এ জব করেছে এরপর ঐ কোম্পানি তাকে মাস্টার্স পড়ার ব্যবস্হা করে দিয়েছে, এখানে ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার্স ২ বছর ৯ মাস আর এসময়টাতে সে বেতন ঠিকই পাচ্ছে।
চাইনিজরা মাস্টার্স এর খুব গুরুত্ব দেয় কিন্তু বাংলাদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে মনে করা হয় শুধু টিচাররা মাস্টার্স করবে, কোম্পানীর ইঞ্জিনিয়ারদের মাস্টার্স করার দরকার নেই, বি.এস.সি যথেষ্ট।
চাইনিজ বন্ধুরা আমাকে বলে ইংরেজী জানা বিদেশীদের জন্য চীনে ভাল কোম্পানিতে চাকরি পাওয়া খুব সহজ। আমার কি যে হবে? অ্যামেরিকান অ্যাকসেন্ট বুঝি না,অথচ চীনের সর্বত্রই অ্যামেরিকান ইংরেজি; এখন কোনটা রেখে যে কোনটা করি? চাইনিজ ভাষা শিখব না কি অ্যামেরিকান ইংরেজি না কি আমার মাস্টার্স এর পড়া পড়ব!!!!!!!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।