আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হারানোর খাতায় আরো কিছু বন বিড়াল

আমি খুব সাধারণ একজন। সাধারণের ভিড়েই আমার বেড়ে ওঠা ,সাধারণের ভিড়েই বিচরণ আর সাধারণের ভিড়েই পথ চলা ...... Click This Link রেজু ভাই মোবাইলে ছবিটি দেখেই চিৎকার করে উঠল “জানো এগুলি কিসের ছবি?” কোন ভয়ংকর দৃশ্য দেখলেও এত বিচলিত হতাম না কিন্তু চারটি বন বিড়ালের (Jungle Cat) মৃতদেহ দেখে খুবই খারাপ লাগছিল যাদের অল্প কিছুক্ষণ আগেই মারা হয়েছে। গত বছর মৌলভি বাজারের হাইল হাওড়ে মেছো বাঘের উপর একটি গবেষনা সার্ভে করতে গিয়ে ঐদিনের মত সার্ভে কাজ শেষ করে স্থানীয় একটি ছোট বাজারে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। এমন সময় একটি ছেলে বাজারে এসে মোবাইলে কিসের ছবি যেন দেখাচ্ছিল সবাই খুব ভিড় জমিয়ে দেখছিল আর এই ছবি ছিল বন বিড়াল হত্যার নির্মন ছবি। লোকটির কাছে বিস্তারিত শুনে ঘটনার স্থলে নিয়ে যাওয়ার কথা বললাম।

প্রথমে রাজি না হলেও অনেক অনুরুধ ও কিছু হবে না আশ্বাস দেওয়ার পরে নিয়ে গেল যেখানে এই বন বিড়ালদের মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। হাওড়ের বিশাল মাঠে তাদের ফেলে রাখা হয়েছিল যাতে রাতেই শিয়াল খেয়ে ফেলে। দূর থেকেই বুঝা যাচ্ছিল কারণ ছোট ছোট পিচ্চি বাচ্চারা জায়গাটা ঘিরে রেখেছিল ও প্রবল উৎসাহে তারাও মৃতদেহগুলিতে লাঠি দিয়ে আঘাত করছিল। গিয়ে দেখলাম একটি বড় ও তিনটি বাচ্চা বন বিড়ালের মৃতদেহ । এদের ছবি তুলতে গিয়ে কি যে কষ্ট হচ্ছিল বুঝাতে পারব না।

পরীক্ষা করে দেখা গেল বড় বন বিড়ালটি মা ও তিনটি বাচ্চা এদের একটা পুরুষ ও দুইটা স্ত্রী। হত্যার বিবরনঃ ঐদিন দুপরে গৃহস্থ ঘরের মাচায় উঠেই দেখতে পেল পাঁচ টি বনবিড়াল ঘুমিয়ে আছে মাচার কোনে। কিছুদিন ধরেই নাকি গৃহস্থের বাড়ি থেকে হাঁস মুরগি খোয়া যাচ্ছিল। তাই তার সব রাগ গিয়ে পড়ল এই নিরীহ বন বিড়ালগুলির উপর। নিঃশব্দে নেমে এসে আশেপাশের থেকে অনেক লোক একত্রিত করল।

বীরত্বের আমেজে লাঠিসোটা, কোচ, ধারালো আস্ত্র নিয়ে হাজির হল প্রায় তিরিশ জন মানুষ যেন সবাই কোন যুদ্ধ করার জন্য এসেছে। বন বিড়ালদের ঘিরে ফেলে কয়েকজন উঠে গেল মাচার উপর। ঘুমন্ত পাঁচটি বন বিড়ালের মধ্যে চারটিকেই টিকেই তারা বিদ্ধ করে ফেলল কোচের ধারালো আঘাতে। তারপর মটিতে ফেলে লাঠি দিয়ে আঘাতের পর আঘাতে জীবন প্রদীপ চিরতরে নিবিয়ে দিল বুকের তিন সন্তান সহ মায়ের। কোন রকমে পালিয়ে বাচল বাবা বন বিড়ালটি।

বাচ্চা তিনিটির বয়স ৬ মাসের বেশী হবে বলে ধারনা করা গেছে হয়ত আর কিছুদিন পরেই তারা মায়ের কাছ থেকে চলে যেত কিন্তু মানুষের হিংস্র তান্ডবের কাছে তাদের জীবন গেল মায়ের সাথেই। বন বিড়াল নিশাচর প্রাণী বলে দিনের বেলায় এরা সাধারনত গুমিয়ে কাটায় আর এই সুযোগেই তাদের হত্যা করা হল। আমাদের পোষা বিড়াল এই বন বিড়ালেরই গৃহপালিত রূপ। একসময় সারা বাংলাদেশের সর্বত্রই এই বন বিড়াল পাওয়া গেলেও বর্তমানে তাদের সংখ্যা কমে গেছে আসঙ্খাজনক হারে। ক্রমবর্ধমান হারে বন জঙ্গল কেটে সাফ করে দেওয়ায় ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় অন্যান্য সকল বন্যপ্রাণীর মত এই বন্যপ্রাণিটিও আজ হুমকির মুখে।

মানুষের লোকালয়ে যেগুলি কোন রকমে টিকে আছে তাদেরও প্রায়ই জীবন দিতে হয় মানুষের হাতেই। বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য দুর্বল আইন থাকলেও এই আইন প্রয়োগের হারও প্রায় শুন্যের কোঠায়। তাই প্রতিনিয়ত বন্যপ্রাণী নিধনের খবর পত্রিকাগুলিতে আসলেও এদের সংরক্ষণে সরকারের তেমন কোন উদ্যেগ দেখা যায় না। মূল লেখা ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।