চট্টগ্রাম: নগরীর কোতয়ালী থানার সিআরবি এলাকায় সাত রাস্তার মোড়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে যুবলীগ ও
ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে শিশুসহ দু’জন নিহত হয়েছেন।
সোমবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের রেলওয়ের তিনটি প্রকল্পের টেন্ডার জমাদানকে কেন্দ্র করে এ
ঘটনা ঘটেছে।
নিহতরা হলেন, সাজু পালিত (২৮) এবং মো.আরমান হোসেন (৮)।
নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘দু’পক্ষে গোলাগুলির সময় শিশু আরমান
ঘটনাস্থলে মারা গেছে। আহত অবস্থায় সাজুকে হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়েছে।
’
যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও টেন্ডার কাজে ফোর স্টার খ্যাত হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক
সাইফুল আলম লিমন গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
লিমন ও তার অনুসারী ছাত্রলীগ ক্যাডাররা যুবলীগ নেতা দিদারুল আলম দিদারের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েল এসোসিয়েট‘র
পক্ষে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল বলে জানা গেছে। দিদারুল আলম দিদার যুবলীগ নেতা দাবি করলেও যুবলীগের কোনও পদে নেই।
চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সমর্থিত যুবলীগ নেতা এবং সিএমপির তালিকাভুক্ত
সাবেক সন্ত্রাসী হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর। সাইফুল আলম লিমন নগর আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছিরউদ্দিন সমর্থিত ছাত্রলীগ
নেতা।
ঠিকাদার দিদারও আ জ ম নাছির সমর্থিত কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান যুবলীগ নেতা বলে জানা গেছে।
নিহত শিশু আরমান স্থানীয় দরিদ্র রিক্সাচালক মো.সিদ্দিকের ছেলে। সিআরবি এলাকার ফ্রান্সিস রোডের একটি বস্তিতে তিনি ভাড়া থাকেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রায় দেড়কোটি টাকার তিনটি কাজের টেন্ডার জমা দেয়ার শেষ
দিনে টেন্ডার জমা দিতে আসে বাবর গ্রুপ ও লিমন গ্রুপ। তবে ঘটনাস্থলে লিমন উপস্থিত থাকলেও বাবর অনুপস্থিত ছিল।
সূত্র জানায়, টেন্ডার জমা দিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর থেকে লিমনসহ অন্যান্যদের চা খাওয়ার কথা বলে বাবর গ্রুপের লোকজন
সাত রাস্তার মাথায় নিয়ে যায়। সেখানে উভয় পক্ষের কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় বাবর গ্রুপের ক্যাডার অজিত বিশ্বাস,
শিমুল প্রসাদ পিন্টু একটি নাইন এমএম পিস্তল দিয়ে গুলি করে। অজিত বিশ্বাস ও শিমুল প্রসাদ পিন্টু নাইন এমএম পিস্তল থেকে ৬ রাউন্ড
গুলি করে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
দু’পক্ষের গোলাগুলির এক পর্যায়ে বাবর গ্রুপের সদস্য সাজু পালিতকে একা পেয়ে সাইফুল আলম লিমন তার মাথায় পিস্তল
ঠেকিয়ে গুলি করে বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী ও টেন্ডার ওপেন কমিটির সদস্য আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, ভতসলা স্টেশনের
পুন:নির্মান কাজ, ফেনি ও কুমিল্লায় দুটি নতুন লেভেল ক্রসিং এর কাজের টেন্ডার জমাদানের শেষ সময় ছিল সোমবার।
তিনি জানান, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টেন্ডার জমা পড়েছে। প্রত্যেকটি কাজের বিপরিতে দুটি করে টেন্ডার জমা পড়ে।
নিহত শিশু আরমানের বাবা সিদ্দিক বাংলানিউজকে জানান, তার ছেলে আরমান কদমতলী এলাকায় একটি মাদ্রাসার ছাত্র। সকালে সাত রাস্তার
মোড়ে নানার বাসায় যাবার পথে আরমান গোলাগুলির মাঝে পড়ে।
এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আরমান ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
সিদ্দিকের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার টিকনিয়ারচর এলাকায় বলে তিনি জানান।
এ ঘটনার পর পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনাস্থল পুরো সিআরবি এলাকা জুড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ-র্যাব মোতায়েন
করা হয়েছে।
এদিকে নিহতদের স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিবেশ।
এ নির্মম ঘটনায়
চট্টগ্রামে তোলপাড় চলছে।
র্যাব পুলিশের ব্যর্থতা:
সিআরবিতে টেন্ডার জমাদানকে কেন্দ্র করে বাব বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও ওই এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেনি কর্তৃপক্ষ।
তারা অফিস এলাকায় সংঘর্ষ হয়নি বলেই দায় এড়াতে চাইছে।
নির্বাহি প্রকৌশলী ও টেন্ডার ওপেন কমিটির সদস্য আবুল কালাম বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টেন্ডার জমা পড়েছে। এখানে কোন ধরণের
সমস্যা হয়নি।
তবে বাইরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে নিহতের ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি।
অন্যদিকে ঘটনাস্থলের পাশেই ছিল র্যাবও পুলিশের ক্যাম্প। কিন্তু দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় তারা যথাসময়ে উপস্থিত হতে পারেনি।
দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন খোদ পুলিশেরই একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
ঘটনার পর পুলিশের অভিযান:
টেন্ডার নিয়ে সংঘর্ষে দুই জনের মৃত্যুর পর ছাত্রলীগ-যুবলীগের ঘাটি হিসেবে পরিচিত নগরীর নন্দনকানন, ডিসিহিল ও সিআরবি এলাকায়
অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।
অভিযানে নেতৃত্বে রয়েছেন কোতোয়ালী থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম।
উল্লেখ্য বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন টেন্ডার নিয়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে দু’টি পক্ষের
বিরোধ সৃষ্টি হয়। রেলওয়ের সব ধরনের টেন্ডারই নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে এ দু’টি গ্রুপের লোকজন যাদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের
অভিযোগ রয়েছে।
টেন্ডার নিয়ে প্রায় সময়ই দু’টি গ্রুপ সিআরবিতে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
সর্বশেষ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষে দু’জনের মৃত্যুর
ঘটনা ঘটল।
সুত্রঃ বাংলানিউজ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।