যে জানেনা এবং জানে যে সে জানেনা সে সরল, তাকে শেখাও। যে জানেনা এবং জানেনা যে সে জানে না, সে বোকা-তাকে পরিত্যাগ কর। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন টালমাটাল অবস্থা। রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক অস্থিরতাও চলছে। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বেড়ে গেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনি সহ কতিপয় আলোচিত খুন এবং গুম এই অবস্থাটাকে আরও উস্কে দিচ্ছে। এরমধ্যে রাজনৈতিক নেতা এম ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বেড়েছে। টানা কয়েকদিন হরতাল অবরোধে উত্তপ্ততা আরো বেড়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে সরকারি দল এবং বিরোধী দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থান রাজনৈতিক অশান্তি বাড়াচ্ছে। জনগণ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পাচ্ছে সাম্প্রতিক এই অস্থিরতায়।
বাংলাদেশের রাজনীতি সংঘাতপূর্ণ এবং ষড়যন্ত্রময়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রের রাজনীতির সূত্রপাত। আরেক ষড়যন্ত্রে পড়ে ১৯৮১ সালে নিহত হলেন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে ষড়যন্ত্র কিন্তু থেমে থাকে নি। অন্য এক ষড়যন্ত্রে ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ বৎসর এরশাদের সামরিক শাসন সইতে হয়েছে এদেশকে।
১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে এক গণঅভ্যূত্থানে সামরিক শাসক এরশাদের পতন হয়। সকল ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে চুড়ান্তভাবে বিজয়ী হয় এদেশের জনগণ। নূর হোসেন, ডাঃ মিলনদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় গণতন্ত্র। ১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয়। এ পর্যন্ত চারবার পাল্টাপাল্টিভাবে বিএনপি এবং আওয়ামীলীগ নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেছে।
দুইবার করে নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন দুই দলের দুই নেত্রী। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়েও শান্তি নেই। যে কোনো সরকারের আমলেই গণতন্ত্রটা স্বৈরতন্ত্রে রূপ নেয়। তাই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র চলছেই।
রাজনীতিতে এই অসুস্থ সংস্কৃতি চলে আসছে গণতান্ত্রিক যুগে পদার্পণের পর থেকেই।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র মানে হচ্ছে ভোটের দ্বারা নির্বাচিত করে জনপ্রতিনিধিকে সংসদে পাঠানো। প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য বাংলাদেশকে ৩০০ টি সংসদীয় আসনে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এই আসনে সংসদ প্রার্থী হিসেবে ভোটের নির্বাচনে জড়িয়ে পড়েন প্রার্থীরা। ছলে-বলে-কৌশলে সবচেয়ে বেশি ভোট নিজের পক্ষে নিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন। একজন সাংসদ হচ্ছেন আইনপ্রণেতা।
সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সাংসদরা মিলে সরকার গঠন করেন এবং দেশ পরিচালনা করেন। দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে আইন প্রণয়নের প্রয়োজন হয়। সাংসদরা দেশের স্বার্থে জনকল্যাণমূলক আইন প্রণয়ন কার্যে জড়িত থাকবেন-এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু আমাদের দেশে এই স্বাভাবিক বিষয়টি অস্বাভাবিক হয়ে গেছে। এই আইন প্রণেতাদের শতকরা ৮০ জনই ব্যবসায়ী বা শিল্পপতি।
ব্যবসায়ী বা শিল্পপতিদের অর্থ থাকে। এই অর্থের জোরে তারা নির্বাচিত হয়ে আসেন। আইনপ্রণেতা হিসেবে অধিকহারে ব্যবসায়ী শিল্পপতির রাজনীতিতে আগমন গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এমন যে একজন সন্ত্রাসীও রাজনীতিতে ভালো অবস্থানে চলে যায়। সন্ত্রাসী চাঁদাবাজি করে অর্থ-বিত্ত কামিয়ে রাজনীতির পদতলে অর্থ ঢেলে বড় নেতা হয়ে যাওয়া বিচিত্র কিছু নয়।
তারপর ভোটের রাজনীতিতে ভোট কিনে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর গুম হওয়া নিয়ে একটি রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। ইলিয়াছ আলী সিলেট বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি। একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। নেতা হতে গেলে নিজের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য পেশী শক্তির প্রয়োজন হয়।
কথিত আছে ইলিয়াছ আলী এই পেশী শক্তির বলেই নিজের আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন।
এম ইলিয়াছ আলীর ন্যয় সন্ত্রাসের তকমা লাগানো অনেক ছাত্রনেতা এখন জাতীয় রাজনীতিতে উঠে এসেছেন সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে। আওয়ামীলীগ কিংবা বিএনপি উভয় দল থেকেই এরকম ছাত্রনেতারা উঠে আসছেন। পাশাপাশি কোনোদিন রাজনীতিতে পদার্পণ না করা অর্থ-বিত্তের মালিকরাও উঠে আসছেন। কিন্তু একটি দেশের আইনসভার জন্য যোগ্য আইনপ্রণেতা উঠে আসছেন না সেভাবে।
শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, উদ্যোক্তা, পেশাজীবী সবার মধ্য থেকে প্রতিনিধিত্ব থাকলে সংসদ প্রাণবন্ত হতো।
জাতীয় সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদের এক বক্তব্য দিয়ে লেখাটি শেষ করবো। কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি আয়োজিত এক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, জাতীয় সংসদের সদস্যদের ৮০ ভাগ শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী। আইনজীবী ও রাজনীতিবিদের সংখ্যা কম। যেখানে আইন তৈরি হয় সেখানে আইনপ্রণেতারা না থাকলে সংসদ চলবে কীভাবে এবং সংসদ কার্যকরই হবে কীভাবে? স্পিকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, নির্বাচনে পয়সার জোরে শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা জয়ী হন।
এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
এ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হলে কি করণীয় তা নির্ধারণ করাটাই সবচেয়ে বেশি জরুরী।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।