আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার শিক্ষকদের খুব মনে পড়ছে

একজন চরম বোরিং মানুষ, কোন এক্সসাইটমেন্ট নাই আমার মাঝে। চিল্লাপাল্লা ভালো লাগেনা। হিন্দি সিনেমা এখনকার দিনে তেমন দেখা হয় না, তারপর কিছু দেখি। পাঠশালা ফ্লপ খাওয়া সিনেমাগুলির একটি। হয়তো একটু বেশিই দেখিয়ে ফেলেছে।

কিন্তু কয়েকটা দৃশ্য আমাকে পুরনো সেই দিনগুলির কথা মনে করিয়ে দেয়। হোস্টেলের থাকার সবচেয়ে বেশি সুবিধা হল শিক্ষকদের কাছে থাকা যায়। আর তাই জীবনের সাতটি বছর তারাই আমার বাবা – মা। আমার হয়তো পরিবার গত তেমন স্মৃতি নেই। কিন্তু আছে শিক্ষকদের মমতা ভরা নানা স্মৃতি।

পাঠশালা মুভিতে যখন শাহিদ কাপুর রোহান এর বেতন দিয়ে দিল, কতটাই না হৃদয় বিদারক দৃশ্য মনে হল। অথচ আমাদের শিক্ষকরা মনে হয় অনায়াসেই এই কাজ করতেন। আব্দুল কাদের জিলানির বাবা দূরে থাকত, একবার বেতনের সময়ে তিনি একদমই পারছিলেন না। আমরা একদমই ৪ এর বাচ্চা। ওয়ালি ম্যাডাম এর কাছে সে বললো, ম্যাডাম বললেন আমি দিয়ে দিচ্ছি।

আমরাও খুশি। খেলতে গেলাম। কিছুই মনে রাখলাম না। অথচ এখন বুঝি, এই কমার্শিয়াল এর যুগে এটা কতটা অপ্রতুল। ইন্টার পরিক্ষা শেষে যখন পরিক্ষা হল থেকে ফিরছি, দেখি সেই ওয়ালি ম্যাডাম দাঁড়িয়ে আছেন।

ম্যাডাম ডাকলেন, বললেন শুনলাম তোমরা নাকি এখানে পরিক্ষা দিচ্ছ, তাই এলাম। আমি কাছে গিয়ে কি করব বুঝতে পারছিলাম না, ম্যাডাম হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নিয়ে বললেন, হাসের বাচ্চা কত বড় হয়ে গিয়েছে। বলে রাখি ক্লাস থ্রিতে ম্যাডাম আমাকে হাসের বাচ্চা ডাকতেন, আমার বালিশ খুব নরম থাকত, আর আমি তেমন পরিস্কার থাকতাম না। সারাদিন হাসের বাচ্চার মত নোংরা থাকতাম। জানিনা কতটা মমতা দিয়ে তিনি তখন ডাকতেন।

নতুন যুগের শিক্ষকরা জানি না কেমন হচ্ছেন। আমরা যারা ক্লাস ৩ থেকে পড়তাম, ক্লাস ১২তে এসেও সেই খালি পুরাতন স্যারদের ক্লাস গুলোতেই বেশি মনযোগি থাকতাম, কেন জানি আলাদা একটা সম্মানবোধ তাদের জন্য কাজ করত। মঞ্জুরুল ইসলাম স্যার এর কাছে ইন্টার এর সময় প্রাইভেট পড়তাম। তখন দেখেছি, স্যার এর জাপান গার্ডেন সিটিতে ফ্লাট কেনা ছিল। তিনি চাইলেই তাতে থাকতে পারতেন, তবুও তিনি তার সেই সরকারী বাসভবন ছাড়েননি।

পানি থাকত না, দুই তিন পর মাঝে মাঝে পানির দেখা মিলত, তবুও তিনি রাতের ক্লাসে ছাত্রদের সাথে দেখা হবে বিধায় ছুটে যেতেন না অন্য কোথাও। মানুষের নাম মুখস্থ করবার আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল তার। আমি যেখানে আমার অনেক প্রিয় বান্ধবীর ফোন নাম্বার মুখস্থ করবার চেস্টা করেও পারিনি, সেখানে একবার বলেই তিনি আমার নাম রোল সবকিছু মনে রেখেছেন। আজ হয়তো জীবনে সায়াহ্নে এসে তিনি হয়তো বলে উঠবেন “মারুফ মোরশেদ-মারুফ মোরশেদ, বুজছো বুজছো” স্যারদের আরো কথা বলতে থাকলে আমার হয়তো ভালো লাগবে , কিন্তু মনটা আরো খারাপ হয়ে যাবে। আব্দুল্লায় আবু সায়ীদ তার এক বইয়ে বলেছিলেন-তার সময়ে স্যার রা ছিলেন, নিজ বিষয়ে আলোর মত।

বাংলা স্যারদের পাশ দিয়ে হেটে গেলে মনে হত সংস্কৃতের এক পন্ডিত হেটে যাচ্ছেন। এখন কোন কিছু না হলে মানুষ এই পেশায় আসে। সে যাই হোক, আপনাদের সাথে কিছু মনের কথা শেয়ার করলাম। তা আপনাদের ভালো লাগুক আর নাই লাগুক। আমার ভালো লেগেছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.