আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সকল শিক্ষকদের স্মরনে...........

...............................................................................................................................................................। “সালাম জানাই সহস্রবার,আমার যিনি গুরু। যার কাছেই করেছিলাম শিক্ষা জীবন শুরু। ” হাঁটি হাঁটি পা পা করে আমরা অনেকে আজ নিজেকে সু-প্রতিষ্ঠিত হিসেবে দাবী করে আসছি। দেশের অনেক বড় বড় পদমর্যাদার পদ দখল করে আছি।

নামের আগে যোগ হয়েছে নানা বিশেষন। কারো কারো বিশেষন এত বড় যে,তার নামকেও হার মানায়। নামের আগে ডিগ্রি লিখতে গিয়ে নির্দিষ্ট জায়গাও শেষ হয়ে যায়,অতিরিক্ত জায়গার দরকার পড়ে। আজকে যারা ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,আইনজীবী কিংবা প্রশাসনের বড় পদে অধিষ্ঠিত আছেন,দেশ চালাচ্ছেন নিজেদের দায়িত্বে,প্রত্যেকেরই সামনে দাড়াতে হয়েছে,মুখোমুখি হতে হয়েছে কোন শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকের। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে,নানা বিশেষনে বিশেষায়িত হওয়ার পেছনে,নিজের শ্রম,চেষ্টা আর মা বাবার অবদান যেমনটি রয়েছে,তেমনি এক বিশাল স্থান জুড়ে আছে শিক্ষকদের অবদান।

কোন শিক্ষকের কোন না কোন আদেশ,উপদেশ কিংবা বেত্রাঘাতের চিহ্ন এ সাফল্যের জোর অংশীদার। মানুষ গড়ার কারিগর তারা। কারিগর যেমন সুনিপুন হাতে তার কর্মে কোন সুন্দর কিছু তৈরী করেন। তেমনি শিক্ষক মহোদয়গনও আপন হাতে সুনিপুন ভাবে সুশিক্ষার মাধ্যমে তৈরী করেন দেশের জন্য এক একটি সম্পদ। তাদের চোখে সব ছাত্রই সমান।

কোন ভালো কাজের উপদেশ তিনি নির্দিষ্ট কারো জন্য দেন না। তারা স্বপ্ন দেখেন না তার ছাত্ররা বড় হয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে নিজেদের অর্থ সহায়তা করবে। তারা স্বপ্ন দেখেন তার ছাত্ররা বড় হয়ে,প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশের সেবায় এগিয়ে আসবে। কোন অহংকার থাকবেনা। অধিষ্ঠিত লক্ষ্যে পোছার পর শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের সালাম করে বলবে-স্যার,আমি সফিক,আপনার ছাত্র।

আমি আপনাদের দোয়ায় ব্যারিষ্টার হয়েছি। আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেন দেশের জন্য কিছু করতে পারি। এমন দৃশ্য অবলোকন করার পর কোন শিক্ষকের মনে কোন আক্ষেপ থাকেনা। যত সংগ্রামেই দিন কাটুক,মনে হবে-শিক্ষক জীবন আমার সার্থক। কিংবা কোন অচেনা পরিবেশে,লোক লোকারন্যে বড় পদে অধিষ্ঠিত বা দেশ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত কোন ছাত্র সালাম করে বলে-স্যার,আমি রফিক।

আপনি ভালো আছেন?চিনতে পারছেন না?আমি সেই রফিক ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্ট ছাত্র,স্যার আমি…কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর/আমি…/…। কোন প্রয়োজন হলে বলবেন আর আমার জন্য দোয়া করবেন। আনন্দে অশ্রুসিক্ত শিক্ষক মনে মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাবেন আর বলবেন আমার শিক্ষক জীবন সার্থক। –‘দোয়া আছে বিধায় এতদুর এগিয়েছো,নিশ্চয়ই আরো দূর এগুবে’। উপদেশের বানী গুলো শিক্ষকদের সারাজীবন তাড়া করে বেড়ায়,উপদেশ যে তাকে দিতেই হবে-‘বাবা,দেশটার দিকে একটু লক্ষ্য রেখ’।

এমন স্বপ্ন অবিরাম দেখে যান শিক্ষক। বিলাসিতা নেই,অহংকার নেই। আর থাকবেই বা কিসে?তার জীবন যে ভয়াবহ। সেই মাসের শুরুতে বেতন হাতে পেলে কটা দিন সুখের। আবার কিছুদিন পর টানা হেচড়া,কখনো বা ধারের আশ্রয় অথবা একটু গুটিয়ে চলা,আশা মাস শেষ হবে কখন?এভাবেই চক্রাকারে চলছেই।

ঝড় বৃষ্টি যাই থাকুক সেই সকাল হলে স্কুলের পথে যাত্রা আবার ক্লান্ত মনে বিকেল বেলা বাড়ি ফেরা। প্রতিদিনের গন্তব্য একটাই। তবু কোন ক্লান্তি নেই,বিরক্তি নেই,একঘেয়েমি নেই,দুঃখ নেই,যেন এর মাঝেই নিহিত সব টুকু সুখ। সবার সম্মান,পথে হাজারো লোকের সালাম কিংবা কখনো দোকানে বা বাজারে কারো সাথে দেখা হলে,আসসালামুয়ালাইকুম,স্যার ভালো আছেন? বসেন একটু চা খেয়ে যান। এই যে প্রাপ্তি,এই যে সম্মান,এ হাজার বছরের লক্ষ্ বছরের পাওয়া,বড়ই আনন্দের,সুখের।

এ প্রাপ্তি আছে বলেই আজো শিক্ষক সমাজ বেচে আছে,বেচে আছে মানুষ গড়ার কারিগররা। কখনো বা জীবনের প্রয়োজনে হাজির হন কোন প্রতিষ্ঠিত ছাত্রের দরজায়। একখানা চিঠি হাতে ছেলেকে পাঠান রফিকের কাছে। স্নেহের রফিক, পত্রের শুরুতে আমার দোয়া রইল। আশা করি সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় ভালোই রহিয়াছো।

সেদিন তোমার সাথে দেখা হইবার পর মন ভরিয়া গেল,যখন জানলাম তুমি বড় চাকুরি কর,উপর মহলে বেশ পরিচিত এবং সুনাম কুড়াইতেছ। আমরা স্কুলের সকল শিক্ষক তোমাকে নিয়ে গর্ববোধ করতেছি। ছোটনকে তোমার দ্বারস্থ করিলাম। যদি পার একখানা চাকুরির ব্যবস্থা করিও। ও আসতে চায়নি,লজ্জাবোধ করিতেছিল।

আমি বলিয়াছি,রফিক আমাকে খুব সম্মান করে। ও তোমাকে দেখে খুশি হইবে। তোমার সাফল্য কামনা করছি। ভবিষ্যতে তুমি আরো বড় হইয়া দেশের জন্য বিরাট ভুমিকা রাখিবে সে দোয়াই করছি। ইতি তোমার শিক্ষক…… চিঠিখানা দেখিয়া হয়ত কোন কোন রফিক খুশি হয়,সাদরে গ্রহন করে ছোটনকে,সাদ্যমত চেষ্টা করে।

আর কোন কোন রফিক বিরক্তি মুখে গেট থেকেই পার করে দেয় দারোয়ান মাধ্যমে। আমরা শিক্ষকের যথাযথ মর্যাদা চাই। আজ প্রায়শই শিক্ষকদের নামে নানা অপপ্রচার শোনা যায়। যত যাই থাকুক,যে যাই বলুক। হাজারো প্রকৃত কারিগর পড়ে আছে অন্তরালে।

জীবন যাদের কাটছে খুব বেশি দুর্বিষহ না হলেও অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝে। সীমাবদ্ধতার মাঝে তারা খুজে বেড়ায় সুখ। তবুও সরকারি কোষাগারের মাঝে সন্তুষ্ট থেকে যুগের পরিবর্তনে,সমাজের আধুনিকায়নে সামঞ্জস্য রেখে চলা খুবই কঠিন। একটি উন্নত দেশ,জাতি গঠনে শিক্ষকদের ভুমিকা অপরিহার্য। যাদের হাত ধরে আগামীর দেশ পরিচালনাকারির জন্ম হবে।

ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,ব্যারিষ্টার, শিল্পপতির জন্ম হবে,তাদের যদি যথাযথ মুল্যায়ন করা না হয়,তাহলে কেমন করে সম্ভব হবে আলোকিত মানুষের জন্ম দেয়া,সুশিক্ষায় জাতি গঠন করা। একজন শিক্ষক অনেক ছাত্রের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম,শুধুমাত্র তার সুশিক্ষা,সৎকর্মের আদেশ উপদেশ দ্বারা। সকল পর্যায়ের শিক্ষক দের জন্য আলাদা বেতন স্কেল অতীব দরকারী। চারা গাছের পরিচর্যা না করলে যেমন বড় হয়ে গাছ ভালো ফল দেয় না,তেমনি শিক্ষকদের যথাযথ মুল্যায়ন না হলে আমাদের ভবিশ্যত প্রজন্ম পড়বে হুমকির মুখে,সুশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে তারা। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন স্কেল তৈরীর কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন।

যেভাবেই হোক,আর যে-ই করুক,এত দিন পর হলেও এ উদ্যেগ নেয়ার জন্য সরকার মহলকে ধন্যবাদ জানাই। এ দাবী শিক্ষক সমাজের দীর্ঘদিনের দাবী। আশা করবো,শিক্ষকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে একটি সুনির্দিষ্ট আশানুরুপ বেতন কাঠামো যেন নির্ধারন করা হয়। যাতে আমাদের শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকের অনুপ্রানিত হয় তাদের কর্মে। এর ফলে শিক্ষকসমাজের মনে কিছুটা হলেও আনন্দের সর ঘটবে,এ কথা অনস্বীকার্য।

এ আশ্বাস যেন তাড়াতাড়ি ফলে পরিনত হয়। যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। আমাদের দেশে পেশা অনেকটা অবহেলার মুখে। এখন আর ছাত্র ছাত্রীদের মুখে খুব বেশী বলতে শোনা যায় না-‘আমার স্বপ্ন আমি একজন আদর্শ শিক্ষক হব’। এ পেশায় যদি ভালোদের,মেধাবীদের উপস্থিতি কমে যায়,তাহলে আমাদের সুশিক্ষার প্রসারও বিঘ্নিত ঘটবে নির্ধিদ্বায়।

একটা কথা ভুলে গেলে চলবেনা,উপরমহলে যত লোকেরই বসবাস,যারা আজ যোগ্য স্থানে তারা কেউ বিদ্যালয়ে না গিয়ে এতদুর আসেননি। শিক্ষার প্রকৃত স্থান বিদ্যালয়। শিক্ষার জন্য আমি আপনি যেমন বিদ্যালয়ের দ্বারস্থ হয়েছি তেমনি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকেও এর দ্বারস্থ হতে হবে। শিক্ষকদের স্মৃতি মনে থাকলে ভবিষ্যতে সঠিক লক্ষ্যে পৌছা যায় না। শুরু করেছিলাম জেমসের গাওয়া একটি গানের কয়েকটি লাইন দিয়ে।

আমাদের মাতৃভুমির কোলে দন্ডায়মান প্রতিটি স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা,বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রতি রইল আন্তরিক সালাম। আশা করবো অতীতের মত ভবিষ্যতেও আপনারা জ্ঞান বিলিয়ে যাবেন নিঃস্বার্থ ভাবে। ছোটবেলায় আমরা ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ নামে একটি কবিতা পড়েছিলাম। শিক্ষকের চরনে ছাত্র পানি ঢেলেছে কিন্তু নিজ হাত দিয়ে ধুয়ে দেননি সেজন্য ছাত্রের বাবা অখুশি হয়েছেন। আমরা গুরুর যথাযথ মর্যাদা চাই সর্বক্ষেত্রে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.