আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মশার কামড়ে অতিষ্ঠ নগরজীবন

যেমন কর্ম তেমন ফল। ‘মশার কামড়ে পড়ার টেবিলে বসতে পারছিনা। মশারা মনে হয় সবাই মিলে তুলে নিয়ে যাবে আমাকে। রাত হোক আর দিন হোক কয়েল না জ্বালিয়ে পড়তে বসতে পারিনা। একটু অসতর্ক হলেও মশার হুল বিঁধে যন্ত্রণায় কাঁতরাতে হয়।

’ মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করছিলো আজিমপুর গার্লস স্কুলের এস এস সি পরীক্ষা লালবাগ চৌরাস্তার বাসিন্দা জেসমিন আক্তার। শুধু লালবাগেই নয়, সারা ঢাকা শহরেই মশার এমন উপদ্রব। ‘নগরবাসীকে বেশি সেবা দেওয়ার জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশনকে বিভক্ত করা হলো। এখন দেখি যে আগে যে সেবাটুকু পেতাম তাও পাই না। মশার রাজত্বেও কোথাও স্থির হয়ে দাঁড়ানোর উপায় নাই।

’ এমন অভিমত ব্যক্ত করলেন আজিমপুর পুরানা পল্টন লেনের বাসিন্দা আবুল কাশেম। তার অভিযোগ, শহরে মশারা দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করলেও সিটি করপোরেশন মনে হচ্ছে সেই রাজত্ব মেনে নিয়েছে। এভাবে কিছুতেই চলতে পারে না বলে চরম বিরক্তি ও হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। নগরবাসীর এমন অভিযোগ ধরে খোঁজ নেওয়া হয় উভয় সিটি করপোরেশনেই। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যথারীতি দাবি করছেন, তারা নিয়মিত মশক নিধন করছেন।

যদিও সারা ঢাকা শহরের কেউই সাম্প্রতিক অতীতে এমন মশার উপদ্রব দেখেনি। তারপরও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের জায়গায় অনড় থেকে দাবি করেন যে মশক নিধন কাজ তারা নিয়মিত করছেন। সূত্র জানায়, অবিভক্ত ডিসিসির চলতি বছরের বাজেটে মশক নিধন বাবদ ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আর মশক নিধন কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে প্রায় এক হাজার জনবল। এরমধ্যে ৩২৭ জন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মশক নিবারনী দফতরের ক্র-ম্যান, বাকি সব দুই সিটি করপোরেমনের স্প্রে-ম্যান।

এসব মশকনিধন কর্মিদের প্রতিদিন সকালে ড্রেন-ডোবা-নালায় লার্বিসাইড (লার্ভনিধন ঔষধ) ছিটানোর কথা এবং সন্ধ্যায় এডাল্ডিসাইড (উড়ন্ত মশক নিধন ঔষধ) ফগার মেশিনের ম্যাধমে স্প্রে করার নিয়ম রয়েছে। সংস্থা থেকে প্রতিদিন এ বাবদ ঔষধ দেওয়া হলেও নগরীতে কার্যত ঔষধ ছিটানো হচ্ছেনা। প্রতিছরই এমন অঙ্কের একটি বরাদ্দ রাখা হয়। নগরবাসীর অভিযোগ, মশক নিধন বাবদ প্রতিবছর এই বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ আসলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আত্মসাত্ করেন। নগরবাসীর যুক্তি, তারা যদি টাকাটা আত্মাসাত্ না করতেন তাহলে তো মাঠে মশক নিধনকর্মীদের দেখা যেত।

যেহেতু কর্মীদের কোথাও দেখা যায় না তাই বলা যায় বরাদ্দকৃত ১৭ কোটি টাকার বেশির ভাগই লুটপাত হয়। নাম কাওয়াস্তে যে কাজ হয়, তা ওই লুটপাট জায়েজ করতে। মশার উপদ্রব এখন রাজধানীর অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে বস্তিতেও। নগরবাসী বলছেন, আগে তাও অতিষ্ঠ হয়ে উঠলে স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলা যেত। এখন তো কাউকে বলারও নেই।

সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, নগরীতে পাঁচ শতাধিক জলাশয় রয়েছে। এসব পরিষ্কারের কোন উদ্যাগ নেই। তাই এসব জলাশয় হয়ে মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এসব জলাশয় পরিস্কার করলেও মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া যেত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। সব রকম নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কাজ করছে দাবি করে এ ব্যাপারে সচিব মো: শামসুজ্জামান বলেন, আমি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে সব দেখছি।

আমি সব সময় এসব কার্যক্রম তদারকি করি। যোগাযোগ করা হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্যকর্মকর্তা ডা: মোহাম্মদ নুরুন্নবী বলেন, এখন মশার প্রজনন মৌসম চলছে। তাই উপদ্রব একটু বেশি। মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিনিয়ত কাযক্রম চালানো হচ্ছে। চলতি মাসের শুরুতে সপ্তাহব্যাপী ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালানো হয়েছে।

তবে তিনি বলেন, নগরীর বেশিরভাগ ড্রেনের উপর ঢেকে দেওয়ায় ড্রেনে ঔষধ ছিটানো যায় না। আর যে সব ডোবা-নালা রয়েছে সেগুলো পরিষ্কার না করায় মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তাই, মশক নিধন কর্মিরা প্রতিনিয়ত কাজ করলেও মশা দমিয়ে রাখা যাচ্ছেনা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।