আমি কিছুই না..... আবার অনেক কিছু । অনেক কষ্টে বাসে উঠলো আনিস । যাবে এক অনুষ্ঠানে । প্রচন্ড ভীড় বাসে । সবাই দাড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে ।
যদি একটা সিট খালি হয় এই আশায় ।
কপাল টা ভাল বলতেই হয়, তার সামনের সিটের লোক টা উঠে গেল । ধপ করে বসে পড়লো সে । শান্তিতে যাওয়া যাবে এখন ।
হটাৎ মধ্যবয়সী এক মহিলা উঠলো বাসে ।
অনেকক্ষন ধরে চেয়ারের হাতল ধরে দাড়িয়ে ছিলেন । কিন্তু বাস বার বার ব্রেক কষছিলো আর শুধু হেলে পড়ছিলেন । ওপরের হাতল অনেক ওপরে, তাছাড়া এত ওপরে হাত দিয়ে ধরা সম্ভব না একজন মহিলার ।
সবাই সবার মত যাচ্ছে । আনিস হটাৎ তার সিট টি ছেড়ে দিয়ে বললো, খালাম্মা, এইখানে বসেন ।
বেচারী কোন মতে এসে বসলেন।
হটাৎ করে পাশের কয়েকটি ছেলের দলের ভেতর থেকে একটা ছেলে বলে বসলো, " পার্ট টা তো ভালোই নিলা মামা "
না শোনার ভান করলো আনিস । অন্য দিকে তাকানোর চেষ্টা করলো।
আরেক টা ছেলে বলে উঠলো, " মা* দেখছে তো...."
আনিসের মাথায় রক্ত চেপে গেল । সে জিজ্ঞাসা করলো , কি বললি ?
২টা ছেলের একটা ছেলে বললো, " হুনোস নাই কি কইছি ?"
কি যেন হয়ে গেল শান্ত শিষ্ট আনিসের।
প্রথম ছেলেটির কলার চেপে নাক বরাবর একটি ঘুষি মারলো। পাশের ছেলেটি ঘটনার ধাক্কা সামলে নিতে নিতে তার চিবুকে একটা ঘুষি খেল।
নাক থেতলে যাওয়া ছেলেটির রক্তে ভেসে যাচ্ছিল শার্ট, তা দেখে আনিস কেমন যেন তৃপ্তি অনুভব করলো । চিবুকে ঘুষি খাওয়া ছেলে টা তার দিকে তাকাতেই আনিস আরেকটা দিতে যাবে এমন সময় বাসের সবার হুশ ফিরলো। হায় হায় করতে লাগলো সবাই।
ছেলেটির জন্য আনিস কে তিরষ্কার করতে লাগলো এই রক্তারক্তির কারনে । সমমবেদনার ঝড় উঠলো।
সবাই মিলে ছেলেটি কে রিকশায় তুলে দিলো হাসপাতালের উদ্দ্যশ্যে। যাওয়ার সময় বাকি একজন বলতে বলতে গেলো, " তোরে চিনা রাখালাম, খোদার কসম তোরে আমি খুন করুম, মতিঝিল এলাকায় আইবি না...... হ্যান ত্যান"
আনিস কে নামিয়ে দেয়া হল বাস থেকে, অভদ্র এবং পশু শ্রেনীর ছেলে দের বাসে নিবে না যাত্রী রা ।
তবুও আনিস ওই মহিলাটির মুখ খুজতে থাকে...... নাহ... বাস ছেড়ে দেয়, দেখা হয় না তাকে আর।
রাস্তায় হাটতে থাকে সে, হটাৎ বুঝতে পারে হাতটা মচকে গেছে । রক্ত লেগে আছে।
নাহ, আজ আর অনুষ্ঠানে যাবে না সে, চলে যায় বড় ভাইয়ের বাসায় । যাওয়ার পথে ধুয়ে নেয় ওই কুলাঙ্গারের রক্ত।
আজ আনিসের অনেক মন খারাপ, সকালেই চোখে পড়লো কয়েক টা কুত্তার বাচ্চা এক মেয়ের গায়ে ..........মাথা আবার গরম হয় আনিসের।
হাত টা নিশপিশ করতে থাকে । মনে পড়ে যায় ছোটবেলার ঘটনা, যেদিন তার বোনের ওড়না টান দিয়েছিল কয়েকটা ছেলে । ছোট্ট আনিসের মনে সেদিন দাগ কেটে গিয়েছিল। দু হাতে বুক ঢাকার চেষ্টায় বোনটা.....
নাহ, আর পারছে না সে । শুধু মনে হচ্ছিল... যদি কুত্তার মত পিটাতে পারতো.... পিটাতে পিটাতে মুখ দিয়ে সকল পৌরুষ বের করে ফেলতে পারতো.... ওরা মরার আগেও যদি ভাবতো যে আমরা পাপ করেছি, তাই এই যন্ত্রনা দায়ক মৃত্যু হচ্ছে তাদের ।
সবাই বলবে মানব বন্ধনের কথা, বলবে পরিবর্তনের কথা, গোল টেবিল বৈঠকের কথা......আনিস বলবে, কুত্তার মতো ঘাড়টা ভেঙে দেবার কথা ।
বি:দ্র: কে এই আনিস ? আমাদের ভেতরের ই একজন সে । বাসে, ট্রেনে কিংবা রাস্তায় হয়তো একদিন দেখা হয়ে যাবে সেই হিংস্র আনিসের সাথে । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।