যেমন কর্ম তেমন ফল।
ঢাকা ওয়াসা’র অনেক সিবিএ নেতার স্ত্রী ওয়াসার বিভিন্ন পদে চাকরি করেন। আশ্চর্য হলেও সত্য তাদের কেউই অফিস করেন না! এদের কেউ কেউ মাঝে মধ্যে অফিসে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই চলে যান। আবার কারো বাসায় হাজিরা খাতা নিয়ে যায় কর্মচারীরা। ওইসব কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন করছে তাদের অর্ধস্তন কর্মকর্তারা।
নেতাদের ভয়ে ওইসব কর্মকর্তারাও গাঁধার খাটুনি খেটেই চলেছে। বছরের পর বছর এভাবে চললেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। এসব ঘটনা এখন ওয়াসার সর্বত্র আলোচিত।
ঘটনা-১:সুলতানা কায়সার। ঢাকা ওয়াসার মিটার বিভাগের হেড ক্লাক।
তিনি ঢাকা ওয়াসা’র সিবিএ সভাপতি হাফিজুর রহমানের স্ত্রী। স্বামীর ক্ষমতার দাপটে তিনি ডিউটি ছাড়াই বেতন নেন। অনুসন্ধানে জানাগেছে, সুলতানা কায়সার কোন কোন মাসে দু’একদিন অফিসে আসেন, আবার কোন মাসে অফিসেই আসেন না। যে মাসে অফিসে আসেন সে মাসে ১০/১৫ দিনের স্বাক্ষর একত্রে করেন। আর যে মাসে আসেন না সে মাসে কর্মচারীরা বাসায় খাতা নিয়ে যায়।
গত ৭ আগস্ট রোববার থেকে ১১ আগস্ট বৃহস্পতিবার পর্যস্ত সুলতানা কায়সারের অফিস ডিউটির বিষয়টি ফলোকরা হয়। ওই এক সপ্তাহে একদিনও তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। অফিসিয়াল ছুটিও নেননি বলে জানান ওই বিভাগীয় প্রধান। এ বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে ওই বিভাগে তার নম্বর খোঁজা হলে কেউই জানেন না বলে জানায়। বিধায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দপ্তরের এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নেতার বউ বলে কথা। বিনা ডিউটিতে বেতন। আরেক কর্মকর্তা এ ব্যাপারে বলেন, ওয়াসার প্রশাসন চলে সিবিএ নেতাদের কথায়। তারা যা বলে তাই হয়, তাহলে এখানে আবার নিয়ম কিসের।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বলেন, গত এক সপ্তাহ তার কোন ছুটি ছিলনা।
ঢালাও অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ঘটনা-২: দেলওয়ারা আক্তার। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের হেডক্লার্ক হিসেবে কর্মরত। তিনি সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশীদের স্ত্রী। সিবিএ নেতার স্ত্রী বলে কথা।
গত প্রায় এক দশক ধরে অফিসে এসেই স্বাক্ষর করে চলে যান। জানাগেছে, তিনি প্রতিসপ্তাহেই অফিসে আসেন, তবে একত্রে কয়েকদিনের স্বাক্ষর করেই চলে যান। তার অবর্তমানে দায়িত্বপালন করেন অফিস সহকারী আব্দুল বাতেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে যতদিন আছি আমার দায়িত্ব ও ম্যাডামের দায়িত্ব একই সঙ্গে পালন করে যাচ্ছি। গত রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তার কার্যক্রমও ফলোকরা হয়।
কোনদিন ১০টার পরে তাকে পাওয়া যায়নি।
এপ্রসঙ্গে আলোচনায় ওই অফিসের এক মহিলা কর্মচারী দুঃখ করে বলেন, আমরা অসুস্থ থাকলেও ছুটি পাইনা। ওভারটাইম করেও সঠিক বেতন পাইনা। আর নেতাদের বউরা অফিস না করেই বেতন উঠান। বড় স্যারেরা ঘটনাটি জানলেও এ ব্যাপারে মাথাঘামান না।
এ ব্যাপারে জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। যোগাযোগ করা হলে প্রধান প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা জোয়াহের আলী সিদ্দিকী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন এসব ধারাবহিকভাবে চলে আসছে।
ঘটনা:-৩: মুরশিদা জাহান। সিবিএ সেক্রেটারী জাবের হোসেনের স্ত্রী। ওয়াসার রাজস্ব জোন-৬ (ফকিরাপুল) হেডক্লার্ক হিসেবে কর্মরত।
মাঝে মধ্যে অফিসে এসে স্বাক্ষর করে চলে যান। তার দায়িত্ব পালন করান রাজস্ব পরিদর্শক সিরাজুল ইসলামকে দিয়ে। হেডক্লার্কের চেয়ারে সার্বক্ষণিক ওই পরিদর্শককে বসে থাকতে দেখাযায়। বরি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবারে গিয়ে এ চিত্র দেখাগেছে। এ ব্যাপারে সিরাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ম্যাডাম এসে অল্প কিছু সময় থেকে চলে যান।
তার অসুস্থতার পাশাপাশি সাংসারিক ব্যস্ততা থাকে। এজন্য আমাকে দিয়ে কাজ করান। ম্যাডামের ব্যক্তিগত নম্বর জানতে চাইলে তিনি বলেন, জীবনগেলেও নম্বর দেওয়া জাইবো না। কোনভাবে ফাঁস হইলেই চাকরি যাবে। এজন্য চেষ্টা করেও মুরশিদা জাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে উপ-প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, কি করার আছে ভাই বুলন। কোন ব্যবস্থা নিলে উল্টো আমাদেরই অপদস্ত হবে হবে।
যোগাযোগ করা হলে ওয়াসার ব্যবস্থা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, সিবিএ নেতাদের স্ত্রীরা অফিস না করার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।