আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়াসার পানি উৎপাদন কমে গেছে ১৫ থেকে ২০ কোটি লিটার,মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ পানিসঙ্কট

https://www.facebook.com/arshinogorer.porshi

ঢাকা ওয়াসার পানি উৎপাদন হিসাব শুভঙ্করের ফাঁকি। মহানগরীতে স্থাপিত ৫৭৮টি পাম্পের উৎপাদনৰমতার হিসাব নিয়ে ওয়াসা বলছে, তারা প্রতিদিন ২১০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে। বাস্তবে কোন পাম্পেই উৎপাদনৰমতা অনুযায়ী পানি উৎপাদন হচ্ছে না। প্রতিটি পাম্পে খমতার চেয়ে এখন মিনিটে এক থেকে দেড় হাজার লিটার পানি কম উৎপাদন হচ্ছে। ১৫ থেকে ২০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন কমে গেছে।

ফলে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানির চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও পানির জন্য এলাকাবাসী মিছিল ও সড়ক অবরোধ করছে। রাজধানীতে পানি সঙ্কটের ব্যাপারে ওয়াসার এমডির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। সূত্র জানিয়েছে, বেশকিছু পুরনো পাম্পে 'ফিল্টার জ্যাম' হয়ে গেছে। পুরনো পাম্পগুলো নিয়মিত সংস্কার হচ্ছে না।

এভাবে চলতে থাকলে এপ্রিলের শেষ ও মে'র শুরম্নতে নগরীতে পানির সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ওয়াসাকে হিমশিম খেতে হবে। বর্তমান সরকার ৰমতায় আসার পর পানি নিয়ে নগরীতে ভয়াবহ পানি সঙ্কট দেখা দেয়। তখন সরকার প্রতিটি এলাকায় স্থানীয় এমপির নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পাশাপাশি বিভিন্ন পাম্পে সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল।

এবার ওয়াসা বলছে, তারা নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। সেনা মোতায়েন বা এমপিদের নিয়ে কোন কমিটি করতে হবে না। কিন্তু বাসত্মব অবস্থা অন্য রকম। নগরীর নাখালপাড়া, মনিপুরিপাড়া, মিরপুর, শাহজাহানপুর, উত্তর শাহজাহানপুর, খিলগাঁও, বাসাবো, মুগদাপাড়া, মগবাজার, পিয়ারাবাগ, আমবাগান, রামপুরা, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুরসহ বহু এলাকায় পানির চরম সঙ্কট চলছে। কোন কোন এলাকায় লোকজন পানির দাবিতে রাসত্মায় নামছে।

এরপরও ওয়াসা বলছে, তারা প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ দিতে না পারলেও প্রতিটি এলাকায় কম-বেশি পানি সরবরাহ দিয়ে আসছে। দুই কারণে পানি উৎপাদন কম হচ্ছে। একটি হচ্ছে কোন কোন এলাকায় পানির সত্মর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে গেছে। এসব এলাকায় পানি উত্তোলন কম হচ্ছে। আরেকটি কারণ হচ্ছে_ ডিপ টিউবওয়েলের পাইপের গভীরে স্থাপিত পাম্প ও ফিল্টারগুলো অনেক সময় ময়লা লেগে জ্যাম হয়ে গেছে।

আগে এই জ্যাম পরিষ্কার করতে পুরো পাইপ তুলে পারিষ্কার করা হতো। এখন মেশিনের মাধ্যমে (হাই প্রেসার) বাতাসের প্রবাহ দিয়ে জ্যাম ছাড়ানো হচ্ছে। নতুন এই পদ্ধতি এবারই চালু করা হয়েছে। এতে খরচ অনেক কম হয়। গোটা পাইপ তোলা হলে খরচের পরিমাণ অনেক বেশি।

বর্তমানে পানির কিছুটা সমস্যা তৈরি হচ্ছে এটা ঠিক। তবে এবার শুষ্ক মৌসুমে পানি সরবরাহে প্রকট সমস্যা হবে না। নতুন করে বেশ কয়েকটি পাম্প বসানো হয়েছে। বর্তমানে পানি উৎপাদন হচ্ছে প্রতিদিন ২১০ কোটি লিটার। পানিতে দুর্গন্ধ নিয়ে যে অভিযোগ ছিল এখন তা অনেকটাই কমে গেছে।

ভারতে ও সিলেটে ভারি বর্ষণের কারণে শীতালৰ্যা নদীতে পানি প্রবাহ বেড়েছে। নদীতে পানি বাড়লে ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধও কমে যায় এবং পানি স্বচ্ছ হয়। সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারে কেমিক্যালের পরিমাণ কম দিতে হয়। এদিকে বেশ কয়েকটি পাম্পে সরেজমিন খবর নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি পাম্পে বর্তমানে মিনিটে ৩শ' থেকে সাড়ে ৩শ' লিটার পানি উৎপাদন কম হচ্ছে। এক একটি পাম্পের উৎপাদনৰমতা এক এক রকম।

কোন কোন পাম্পে মিনিটে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার লিটার পানি উৎপাদন হয়। একটি পাম্পে যদি মিনিটে ৩শ' লিটার করে পানি উৎপাদন কম হয় তাহলে ২৮ ঘণ্টায় ৭ হাজার ২শ' লিটার পানি উৎপাদন কম হচ্ছে। নগরীতে ৫৭৮টি ওয়াসার পাম্প রয়েছে। এই পাম্পগুলো বেশিরভাগই পুরনো। ফলে গড়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন কম হচ্ছে।

ওয়াসা কর্তৃপৰ বার বার বলে আসছে_ ওয়াসার পানি খাবার উপযোগী ও বিশুদ্ধ। কিন্তু বাসত্মবে ওয়াসার পানিতে ময়লা, আর দুর্গন্ধের ফলে পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নগরবাসী ওয়াসার পানি ব্যবহার করে নানা রকম পেটের পীড়ায় আক্রানত্ম হচ্ছে। সম্প্রতি সংসদীয় কমিটির এক সভায়, পানি সবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনে নগরবাসীর সীমাহীন ভোগানত্মির পেছনে ওয়াসার অনিয়ম, দুনর্ীতি ও গ্রম্নপিংকে দায়ী করেছে। শুধু ড্রেনেজ তৈরির ৰেত্রেই নামেমাত্র কাজ করে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে ওয়াসার কর্মকতর্া-কর্মচারীর একটি চক্র।

স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নগরবাসীর দুর্ভোগ কমাতে ওয়াসাকে নির্দেশ দিয়েছে। ঢাকা মহানগরীর পানি সমস্যা দূর করতে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার ১০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। পাগলা, সায়েদাবাদ ও খিলৰেতে 'ওয়াটার ট্রিটমেন্ট পস্ন্যান্ট' স্থাপনের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাসত্মবায়ন করা হবে। প্রকল্পটি বাসত্মবায়ন হলে প্রতিদিন দেড় শ' কোটি লিটার ভূ-উপরিস্থ পানি পাওয়া যাবে। পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধ দূর করার জন্য সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিন হাজার কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপন করার কাজ চলছে।

এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এক শ' কিলোমিটার মূল এবং ২শ' কিলোমিটার ব্রাঞ্চ পয়ঃনিষ্কাশন পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ এ বছরই শুরম্ন হবে। দুই শতাধিক পানির পাম্পে বিদু্যতের 'ডুয়েল কানেকশন' দেয়া হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে ২শ' জেনারেটর কেনা হবে। বর্তমান সরকার ওয়াসার উন্নয়নে এসব প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে নগরীর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা খুব একটা ভাল হবে না।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.