আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি। কিস্তি-২২
সপ্তাহখানেক হলো হলে উঠলাম। ছাত্রদলের টগর গ্রুপ আমাকে হলে তুলেছে। বঙ্গবন্ধু হলের ১১৭ নম্বর রুম আমার ঠিকানা।
নিচতলার এ রুমে অনেক আলাপই হয়। এর খ্যাতিও অনেক। আমাদের পূর্বসূরী এক ভাই বিয়ে করে হলের এ রুমেই বাসর রাত কাটিয়েছেন। সে খবর জানালেন রুমের সিনিয়র ভাই নাজমুল।
আমি এখনো সাংবাদিক হিসাবে পরিচয় দিচ্ছি না।
পরিচয় গোপন রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু আলোচিত খবর করাটাই আমার প্রধান দায়িত্ব বলে মতি ভাই জানিয়ে রেখেছেন। তাই এ হল ও হল ঘুরি আর ইনফো নেই।
১১৭ নম্বর রুমের বাসিন্দাদের মধ্যে আছে নাজমুল ভাই, জুনিয়র জিপু, সহপাঠি মোরশেদ এবং সিনিয় আরেক ভাই সাথী। আমরা সবাই বেশ মজা করতাম। অনেক গল্প শোনা হতো।
জিপু হ্যান্ডসাম বালক। তার খালার মহিলা কলিগদের সাথে বেশ খাতির, সেটা নিয়ে প্রায়ই আলাপ হতো।
তলে তলে নাজমুল ভাই দিনাজপুর মহিলা কলেজের এক ছাত্রীর সাথে পত্রালাপ করছিলেন। সাথী ভাই আরেকজনের বিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে ভালোই আছেন। সব মিলিয়ে আমাদের ভালো কেটে যাচ্ছে ।
পরে অবশ্য জেনেছি ওই প্রেমিকা ডিভোর্সি ছিলেন। সার্থী ভাই তাকে বিয়ে করে এখন ভালোই আছেন।
মোরশেদ পড়ে, মানে সারাদিন পড়ে। ইংলিশ টু বেঙ্গলি ডিকশনারি মুখস্থ করছে সে। পড়তো পাবলিক অ্যাডে।
মানব জমিনে আমার দুপর্বের রিপোর্ট প্রকাশের পর রুমের সবাই বললো, মানবজমিন তো ফাটিয়ে দিলো। ছাত্রদলের রক্ত বের হচ্ছে। আমি চুপ থাকি। আলাপে জড়ালে যদি ওরা বুঝে ফেলে আমিই সেই। তাহলে সমস্যা হতে পারে।
ডিসেম্বর প্রথম সপ্তাহে গেস্টরুমে নেতারা তাদের পালিত ক্যাডারদের নিয়ে বসলেন, কীভাবে আমি রুম ভিত্তিক অবৈধ ক্যাডারদের অবস্থানের পরিসংখ্যান দিলাম সেটি বের করার জন্য । টগর গ্রুপের নেতৃত্বে তখন তিনটি হল। তারা সভাশেষে সিদ্ধান্ত নিলো, এ রিপোর্টারকে খুঁজে বের করে মারধর করা হলো ফরজ কাজ। একই রকম সিদ্ধান্ত এফএইচ হল থেকেও এলো।
বঙ্গবন্ধু হলে আমাকে মারা হবে এ ঘোষনা রাতেই শুনতে পেলাম।
কিন্তু কাউকে কিছু জানাতে পারলাম না। ছাত্রদলের সে সময়কার দাঙ্গাবাজ কিন্তু নিবেদিতপ্রাণ নেতা ছিলেন মামুন ভাই। মনির ভাই ভদ্রোবেশি নেতা। দুজনের দু গ্রুপ। এর বাইরে টগর গ্রুপ পিন্টু ভাইয়ের উত্তসূরী।
এ সব নিয়ে আমি বেশি ভাবছিলাম না।
আমার বয়স কম, রক্ত একটু বেশি গরম, তাই পাত্তা না নিয়ে হলে ফাও খাবার নিয়ে আরেকখান রিপোর্ট মেরে দিলাম। এতে পুরো ছাত্রদল ক্ষেপে গেলো।
সংবাদ মাধ্যমে তাদের লোকজন নেই বললে চলে, তাই তারা সাংবাদিকদের মারবেন এটাই স্বাভাবিক। ছাত্রলীগ বা বাম দলের লোকে ভরা সংবাদপত্র।
সেখানে ছাত্রদল বা বিএনপি এতিম। আমি ছাত্রদলকে সমর্থন করলও সত্য উচ্চারণে কোনো ছাড় নয়- এমন নীতিতে বিশ্বাস করতাম।
ইতোমধ্যে মতি ভাইয়ের কানে খবর গেলো। বাড়াবাড়ি রকমের রিপোর্ট হচ্ছে। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, সাবধানে থাকবেন।
কোনো একটা গ্রুপ হাতে রাখবেন। নইলে বিপদ হতে পারে। বললাম, মতিভাই ওসব নিয়ে ভাবার দরকার নেই। সব সাংবাদিক যখন চুপ, তখন আমি লিখছি, সবাই আমাকে সাপোর্ট করছেন। আমিতো অভিযুক্ত নেতাদের বক্তব্যসহ রিপোর্ট লিখছি ।
কেবল সামনে যাচ্ছি না। টেলিফোনে এ সব বক্তব্য নেয়া।
পরে কিস্তি ছাত্রদলের হাতে দাবড়ানি খাওয়া নিয়ে- ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।