দ্য বেঙ্গলি টাইমস ডটকম ডেস্ক
মিসরে সাম্প্রতিক বিপ্লবে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কয়েক দশক ধরে চলতে থাকা হোসনি মোবারকের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের অবসানে রাজপথের আন্দোলনে পুরুষদের তুলনায় নারীদের অবদান কোনো অংশেই কম ছিল না। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রায় নিজেদের আসন পাকাপোক্ত করে নারী অধিকার সামনে নিয়ে আসার লক্ষ্যে তারা ঘর থেকে রাস্তায় নেমে আসে। কিন্তু মোবারকের পতনের পর সামরিক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করলে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণ আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় কমে যায়। মোবারকের শাসনামলে নারীদের জন্য পার্লামেন্টে ৬৪টি আসন বরাদ্দ ছিল।
পরবর্তীতে মিসরে সামরিক সরকার ক্ষমতায় এসে তা বাতিল করে দেয়। কয়েকদিন আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ইসলামি দলগুলো বিপুল জয় পায়। দেশটির নারীবাদীরা মনে করছেন, কট্টরপন্থী মুসলিমদের এ জয়ের ফলে কায়রোর রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ আরও হ্রাস পাবে। মিসরে পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণ খুব কম দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। তার মতে, নারীদের পেছনে রেখে মিসরের রাজনীতি সঠিক পথে অগ্রসর হচ্ছে না।
নারীরা আজও কায়রোর রাজপথে নানাভাবে হেনস্তা হচ্ছে। পুলিশ তাদের সম্ভ্রমহানি করছে। দেশটিতে এই অবস্থা চলতে থাকলে প্রত্যাশিত ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আসতে পারে না বলে সতর্ক করে দেন হিলারি।
মিসরের ওমেন অ্যান্ড মেমোরি ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওমাইমা আবুবকর দেশটির পরিবর্তিত পরিস্থিতি সম্পর্কে সংবাদ সংস্থা আলজাজিরাকে বলেন, ‘আমরা ভিন্ন ভিন্ন হুমকি মোকাবেলা করে ব্যতিক্রমী এক ঐতিহাসিক সময় অতিক্রম করছি। ’ মিসর বিপ্লব নারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদিসহ কায়রো সব ধর্মাবলম্বী নারীদের জন্য এটি একটি বড় ধরনের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। এটি ভবিষ্যতে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে। কারণ হিসেবে ৫৪ বছর বয়স্ক অধ্যাপক উল্লেখ করেন, কায়রোর নারীরা রাজপথের আন্দোলন ও জাতীয় রাজনীতিতে অংশ নিয়ে ইতোমধ্যেই নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। এই অভিজ্ঞতা দেশটির তরুণ প্রজন্মকে আন্দোলিত করবে। কায়রোয় সমাজের প্রতিটি স্তরে আন্দোলন চলছে, চলবে।
নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলন সার্থক না হয়ে পারে না বলে আবুবকর দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
মিসরের নারীবাদীরা সমঅধিকারের দাবিতে সংগঠিত হচ্ছে। মিসরের মতো কট্টর ইসলামপন্থী দেশে সর্বদা নারীসমাজকে আড়ালে রেখেই সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হতো। নারীরা গৃহস্থালির কাজকর্ম করবে আর পুরুষরা তাদের শাসন করবে, এমনটাই এতদিন ধরে অনুশীলন হয়ে আসছে। মোবারক সরকারের পতনের পর সামরিক সরকারও নারীদের পেছনে ফেলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছে।
এর প্রতিবাদে নারীবাদীরা তাদের সর্বজনীন সমঅধিকার নিশ্চিত করতে কঠিন আন্দোলনে নামছে। আরব নারীদের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে ওমেন অ্যান্ড মেমোরি ফোরাম। সংগঠনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আবুবকর ওমাইমা বলেন, মিসরে ইসলামপন্থী ও মধ্যপন্থীরা সুজানা মোবারকের আইন পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে। এর আগে মিসরের প্রাক্তন ফার্স্টলেডি সুজানা মোবারক বিবাহবিচ্ছেদে নারীদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দিয়ে এ আইন প্রণয়নে ভূমিকা রাখেন। আগে মিসর পার্লামেন্টে নারীদের জন্য ৬৪টি আসন বরাদ্দ ছিল।
তা সত্ত্বেও নারীরা মাত্র ৮টি আসন পায়। নারীরা বুঝতে পারে অধিকার প্রতিষ্ঠায় মোবারকের পতন নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং রাজপথই দাবি আদায়ের একমাত্র মাধ্যম। বিক্ষুব্ধদের দমনে মোবারক সরকারও কম যায়নি। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি নির্যাতন শুরু করে দেয়।
দীর্ঘ আন্দোলনে নারীদের পাশাপাশি পুরুষরা দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে রাজপথ দখল করে। মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম হাসান আল বান্নার পৌত্রি সানা আল বান্না সংবাদ সংস্থা আলজাজিরায় দাবি করেন, মিসর বিপ্লবে নারীরা মুখ্য ভূমিকা পালন করলেও তার কৃতিত্ব নিয়েছে দেশটির ইসলামপন্থীরা। তরুণ নারীসমাজ কায়রোতে একনায়কের পতন নিশ্চিত করতে রাজপথে অনন্য ভূমিকা পালন করার সময় ইসলামপন্থী মুসলিম ব্রাদারহুড ও সালাফিরা অন্ধকারেই ছিল। অথচ এই আন্দোলনের ফলেই বিগত নির্বাচনে ইসলামপন্থীরা জয়ের স্বাদ লাভ করে। আজও মিসরের নারীদের ৮০ শতাংশ যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
যেটা শরিয়াহ আইন ও মানবাধিকার উভয়েরই লঙ্ঘন। এই পরিসংখ্যান দেখলে মিসরের রাজনীতিতে মৌলিক কোনো পরিবর্তন আসছে, এটা বলা যাবে না।
সামনের দিনগুলোতে মিসরে কী ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ মজন হাসান মনে করেন, কায়রোর রাজনীতিতে দুটি অনিবার্য বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে। একটি হল নারীদের সমঅধিকার নিশ্চিত হতে পারে দেশটিতে, অন্যটি হল নির্বাচনে জয়লাভ করা দলগুলো নারী অধিকার লঙ্ঘনের কালো ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে মজন হাসানের বিপরীত মতামত পোষণ করেন ওমেন অ্যান্ড মেমোরি ফোরামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আবুবকর।
তার মতে, মিসরের নারী সংগ্রামকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে ঠিকই, তবে তাদের বিচরণের জায়গাও বিস্তৃত হতে যাচ্ছে দেশটিতে।
মিসরে পরিবর্তনের জন্য সম্ভাব্য সংগ্রাম অনেকেই বিস্তৃত পরিসরে দেখতে চান। তাদের মধ্যে একজন কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রনীতির গবেষক নাগওয়ান এল আসওয়াল মনে করেন, মিসরে নারীবাদীদের সংগ্রাম হচ্ছে সব মিসরীয়র সংগ্রাম। এ সংগ্রাম মিসরের নিষ্পেষিত জনগণকে মুক্তি দেবে। নারী-পুরুষ নিয়ে প্রশ্ন নয়, বিষয় হচ্ছে কায়রোতে নতুন অধ্যায় সূচিত হতে যাচ্ছে।
সূত্র আল জাজিরা।
তথ্যসূত্র-
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।