বৃটেনে শিক্ষাগ্রহণকে অত্যন্ত সহজলভ্য এবং প্রত্যেকের জন্য উপযোগী করা হয়েছে। এ জন্য সে দেশে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা শিক্ষা প্রদানের বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে। বৃটেনের শিক্ষা কর্তৃপক্ষের লক্ষ্যই হলো প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য বয়স অনুযায়ী নির্দিষ্ট মান ও মাত্রার শিক্ষা নিশ্চিত করা, এটা যে কোন ভাবেই আদায় হোক না কেন। নিচে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বর্ণনা প্রদত্ত হলো।
ক. গৃহশিক্ষা
যুক্তরাজ্যে আইনত ৫-১৮ বছর বয়সীদের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক।
তবে, তা প্রথাগত স্কুলে গিয়ে হতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। যদি কোন পিতা-মাতা/অভিভাবক সন্তানদেরকে নিজের বাসায় অথবা অন্য কোন হোম টিউটোরিয়ালে পড়াতে চান, তাহলে পড়াতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে লোকাল এডুকেশন অথরিটিকে অবহিত করে রাখতে হয়। প্রয়োজন মনে করলে কর্তৃপক্ষ ঘরোয়া শিক্ষার ব্যবস্থাপনা পরিদর্শনে আসতে পারেন। তারা যদি কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশ নিতে চায় তাহলে কোন কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করে সরাসরি বোর্ডের সাথে রেজিস্ট্রেশন করতে হয় এবং তাদের পরীক্ষার ফলাফল পোস্টের মাধ্যমে সরাসরি বাসায় চলে যায়।
খ. বিভিন্ন ধরনের স্কুল
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাকে সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সরকার ১৯৯৮ সালের স্কুল স্ট্যানডারডস এন্ড ফ্রেম ওয়ার্ক এ্যাক্টের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষালয় পরিচালনা ও অনুমোদন দিয়েছে। এগুলো প্রধানত: তিন প্রকার -
১. কমিউনিটি স্কুল। যা সরাসরি সরকার তথা স্থানীয় এডুকেশন অথরিটি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত। বিভিন্ন বিষয়ে স্কুলের নিজস্ব স্বাধীনতা এখানে আছে, তবে তা সীমিত আকারে।
২. ফাউন্ডেশন স্কুল।
গভর্নিং বডি বা এর সাথে সংশ্লিষ্ট দাতব্য প্রতিষ্ঠান বা স্কুলের জমির মালিক দ্বারা এ ধরনের স্কুল নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে। তারা স্টাফ নিয়োগ দেন এবং ছাত্র ভর্তিসহ অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করেন।
৩. ভলানটারী এইডেড স্কুল। বিভিন্ন ধর্মীয় ও দাতব্য সংস্থা, বিশেষত খৃস্টানদের পরিচালিত স্কুলগুলোকে এ নামে পরিচিত। এসব প্রতিষ্ঠানে সরকার বিশেষ সহায়তামূলক অর্থ দিয়ে থাকে।
তবে এসব স্কুলগুলো যথেষ্ট স্বাধীনতা ভোগ করে থাকে।
গ. অন্যান্য বিশেষ স্কুল
১. বিশেষায়িত স্কুল (Specialist Schools)
ইংল্যান্ডের যে কোন মাধ্যমিক স্কুল নিজেদের যোগ্যতা অনুসারে স্পেশিয়ালিস্ট স্কুল হবার জন্য আবেদন করতে পারে। যেসব বিষয়ের জন্য তারা মনোনিত হতে পারে, তা হলো- প্রযুক্তি (বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়, গণিত, টেকনোলোজি), আধুনিক বিদেশী ভাষা, খেলাধুলা ও কলা। এসব প্রতিষ্ঠানে যথারীতি ন্যাশনাল কারিকুলামের বিষয়গুলোও পড়ানো হয়। তবে ঐসব বিশেষ বিষয়ে আলাদাভাবে জোর দেয়া হয়।
এ জন্য তারা সরকার থেকে অতিরিক্ত বরাদ্দ পেয়ে থাকে।
২. সিটি কারিগরি কলেজ (CTCs)
বেশ কিছু বেসরকারী স্কুল/কলেজ বিজ্ঞান, গণিত ও টেকনোলোজিতে বিশেষ পারদর্শিতার জন্য এই নামের মর্যাদা লাভ করে এবং বিশেষ সরকারী অনুদান পায়। এখানে ন্যাশনাল কারিকুলাম সাবজেক্টও পড়ানো হয়। তাদের কলেজের রুটিন দীর্ঘ। বিভিন্ন কোম্পানির সাথে তাদের বিশেষ সম্পর্ক আছে।
৩. সিটি একাডেমি (City Academy)
যে সমস্ত শহর এলাকার সরকারী স্কুলগুলোয় ভর্তি চাপ বেশী, সে সমস্ত শহরে সিটি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের সুযোগ-সুবিধা সাধারণ সরকারী স্কুলের চেয়ে একটু বেশী।
ঘ. বেসরকারী স্কুল/কলেজ
ইংল্যান্ডে যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান স্কুল/কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে পূর্বেই সরকারী অনুমোদন নিতে হয়। সরকারী ন্যাশনাল কারিকুলামের বিষয়গুলো পড়াতে হয়।
এখানে সরকার কোন প্রকার অনুদান দেয় না। তবে তাদেরকে সরকারী ইন্সপেকশনের মুখোমুখী হতে হয়। এখানে শিক্ষার্থীরা ফিস প্রদান করে। এখানকার শিক্ষার্থীরা সরকারী স্কুলের শিক্ষার্থীদের মতই কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এরা এখান থেকে পাস করে পরবর্তীতে অন্যান্য কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারে।
বেসরকারী স্কুলের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও আচার-ব্যবহারের মান সাধারণ স্কুলের শিক্ষার্থীদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে ভাল। বৃটেনের ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থায় ধার্মিকেরা খুব বেশী সাচ্ছন্দ অনুভব করেন না। তাই তারা নিজেদের কৃষ্টি-কালচার বজায় রাখার জন্য এসব স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। খৃস্টান ও ইহুদীরা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের চেয়ে এ ব্যাপারে অনেক বেশী অগ্রসর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।