লিখে খাই, সবার ভাল চাই
রাত পোহালেই পহেলা বৈশাখ। নতুন বছর। নতুন সূর্য। নতুন দিন। গেল বছরের যতসব গ্লানি মুছে নতুনকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত সবাই।
কিন্তু নতুন সূর্য কি নতুন কোন বারতা নিয়ে আসে? প্রতি বছর শুভ কিছুর আশা নিয়ে দিনটি পালন করে বাঙালি জাতি। হিংসা, হানাহানি দূরে ঠেলে দেয়ার শপথ করে সবাই। বাস্তবে কি এর কোন প্রতিফলন দেখা যায়? ব্যক্তি পর্যায়ে, গোষ্ঠী পর্যায়ে, বন্ধুত্বেÑ এমনকি রাজনীতিতেও তা অনুপস্থিত। কিন্তু কেন? অসহিষ্ণুতাই কি এর কারণ? নাকি নিজেকে বড় জানা, নিজে যা বলেছি তা-ই ঠিক ভাবাÑ হলে হতেও পারে। বর্তমান রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু দারুণভাবে আলোচিত।
গত ক’মাস রাজনীতির ময়দান উত্তপ্ত করে তুলেছে এই ইস্যুটি। আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ ইস্যু জ্যান্ত থাকবে এটি নিশ্চিত। তবে ’৯৬ সালে তৎকালীন সরকারের মতো যদি বর্তমান সরকারও না বোঝার ভান করে তাহলে আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠবে রাজনীতির মাঠ। বিরোধী দল আগামী ১০ই জুন পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়েছে। এর মধ্যে সরকার কিছু করবে বলে মনে হচ্ছে না।
আবার বিরোধী নেতা আলোচনার জন্য বসে আছেন। সরকার আলোচনায়ও রাজি নয়। তাহলে কি অনিবার্য সংঘাত? অনেকেই বলেন, অপেক্ষা করুন, দেখুন কি হয়। আবার কেউ কেউ বলেন, তত্ত্বাবধায়কে ফিরে আসতেই হবে। এছাড়া কোন উপায় নেই।
সম্প্রতি এক আড্ডায় এ নিয়ে আলোচনা চলছিল ক’জনের মধ্যে। মাঝে মাঝে উত্তাপ ছড়ায়, আবার ঠাণ্ডা হয়ে আসে পরিবেশ। একজন বললেন, সরকার যদি বিরোধী দলের দাবি না মেনে নির্বাচন দেয়, তাহলে মনে রাখবেন ওই নির্বাচনটি হবে আরেকটি ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন। বিএনপি যেমন সেই নির্বাচন করে রাতারাতি সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি চালু করেছিল, তাদেরও তা করতে হবে। আরেকজন বলেন, আরে না, এই দিবাস্বপ্ন দেখলে হবে না।
এ দেশে ১৫ই ফেব্রুয়ারির মতো কোন নির্বাচন আর হবে না। তবে আগামী নির্বাচনই হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। সরকার যে দিবাস্বপ্ন দেখছে তা ওই তেলওয়ালার মতোই হবে। তেলওয়ালা মানে? হ্যাঁ শুনুন। এক তেলওয়ালা গ্রামে গ্রামে ঘুরে তেল বিক্রি করতেন।
একদিন তেল বিক্রি করতে করতে খুবই কান্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। এক সময় একটি গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়ালেন। অবশ হয়ে উঠছে তার পা। এক পর্যায়ে বসে পড়লেন। শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছে।
ঘাড়ের গামছা বিছিয়ে শুয়ে পড়লেন। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লেন টেরই পেলেন না। ঘুমের মধ্যে ওই তেলওয়ালা স্বপ্নে দেখছেন, তেল বিক্রি করতে করতে কিছু টাকা জমিয়েছেন। তারপর ওই টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছেন। কিছুদিন পর ওই গরু দিয়েছে বাছুর ।
এখন দুধ বিক্রি করেন। এভাবে ক’বছরে তার বেশ ক’টি গরু হয়ে গেছে। এক সময় বড় ক’টি গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। এ টাকা দিয়ে ছনের ডেরা ভেঙে বিল্ডিং বাড়ি করেছেন। এখন তিনি সুখী।
মহাসুখী। এবার বিয়েও করেছেন। বছর শেষে পুত্রসন্তানের পিতা হয়েছেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আদর্শ পরিবার তার। এর মধ্যে কেটে গেল ক’বছর।
ছেলে এখন দৌড়াতে পারে। স্কুলে ভর্তি করতে হবে। একদিন দুপুরে ছেলেকে মা বললো তোর বাবাকে ডেকে নিয়ে আয়। দুপুরের খাবার এক সঙ্গে খাবি। তেলওয়ালা স্বপ্নে দেখছে তার ছেলে এসে তাকে ডাকছে, বাবা ওঠো ভাত খাবে।
সঙ্গে সঙ্গে তেলওয়ালা হাত-পা নেড়ে বলেÑ না, এখন না পরে খাবো। পা নাড়ানোর সময় পায়ের কাছে রাখা তেলের টিনটি পড়ে সব তেল ভেসে যায়। দেখে গাছের নিচে সে ঘুমিয়ে আছে। তার আসল পুঁজিই এখন হারিয়ে ফেলেছেন। এটি হলো দিবাস্বপ্ন।
যাকগে সেসব কথা। কালকের নতুন বর্ষে যেন কেউ এমন দিবাস্বপ্ন না দেখেন এই বাসনাই রইলো সবার কাছে। বাস্তবের আলোকে যেন আমরা ভাবতে পারি দেশকে নিয়ে। সমাজকে নিয়ে। পরিবারকে নিয়ে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।