মন ভাল নেই...
ম্যাকডোনাল্ডসে বসে শিঙাড়া খাচ্ছি। ওদের শিঙাড়াটা অসাধারণ। আমেরিকার সব রেস্টুরেন্টেই বাংলাদেশি খাবার থাকে। নইলে রেস্টুরেন্ট অচল। হঠাৎ দাঁতে শক্ত কী যেন একটা আটকাল।
বাদাম নাকি? আবার কামড় দিলাম। উহু, বাদাম এত শক্ত হয় না। মুখ থেকে জিনিসটা প্লেটে ফেললাম। ঠন করে শব্দ হলো। একি! শিঙাড়া রক্স! মানে শিঙাড়ার ভেতর পাথর।
আরেকটু বড় হলে এটাকে মার্বেল বলে চালান
ো যেত। রকশিল্পীর মতো চিৎকার করে ডাকলাম, ওয়েটার! এদিকে না তাকিয়েই ওয়েটার নির্বিকারভাবে বলল, ফিল্টার পানি নাই। মেজাজটা শিঙাড়ার চেয়েও গরম হয়ে গেল। আরও জোরে বললাম, এদিকে আয় ব্যাটা! ওয়েটার হাত মুছতে মুছতে পাশে এসে বলল, কী সমস্যা? আমি প্লেটের পাথরটা দেখিয়ে বললাম,
-এটা কী?
-পাথর। শিঙাড়ার সঙ্গে ফ্রি দেয়া হয়েছে।
আপনার অ্যাকুরিয়ামের জন্য।
-মশকরা করছ?
-কাস্টমারদের সাথে আমরা মশকরা করি না। করলে আপনাকে তার জন্য এক্সট্রা চার্জ দিতে হতো।
ওয়েটার চলে গেল। রাগে আমার গা জ্বলছে।
দেশের অবস্থা ভয়াবহ! এটা বাংলাদেশ হলে রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে মামলা করে দিতাম। তখন বুঝত, কত শিঙাড়ায় কত আলু! কিন্তু কেট এখনো আসছে না কেন? পকেট থেকে বাংলা ডিকশনারিটা বের করে পড়া শুরু করলাম। একটু পরই হন্তদন্ত হয়ে ঢুকল কেট। দ্রুত এসে চেয়ারে বসে বলল,
-হাই, নিকোলাস!
-হাই মানে? তোমার কি ঘুম আসছে? বাংলায় হাই হলো ঘুম আসার পূর্ব লক্ষণ!
-সারাক্ষণ বাংলা বাংলা কোরো না তো। তুমি একজন আমেরিকান।
-কিসের আমেরিকা? চলে তো বাংলাদেশের টাকায়!
-কী যে বলো! তুমি না বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য ডিভি ফরম পাঠিয়েছিলে? হয়েছে?
-না। এত সোজা নাকি? পৃথিবীর সব দেশ থেকে ওখানে যাওয়ার জন্য মানুষ ডিভি পাঠায়। ওদের কি ঠ্যাকা পড়েছে আমাদের জায়গা দেয়ার? তাও তো ওরা ডিভি নিচ্ছে। আহা, কত সুন্দর একটা দেশ!
-দেশেই কিছু করার চেষ্টা করো। মুরগির ফার্মটার্ম।
-ধুর। দেশে কিছু হবে না। পয়েন্টে পয়েন্টে দুর্নীতি। রিপাবলিক আর ডেমোক্র্যাট দেশটা শেষ করে দিল। সব শালা চোর।
বাংলাদেশে আমাকে যেতেই হবে। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী আর সৎমানুষের দেশ ওটা। কদিন আগে রিডার্স ডাইজেস্ট বাংলাদেশের রাস্তায় রাস্তায় মানিব্যাগ ফেলেছে। প্রতিটা ব্যাগে ছিল ৫০০ টাকা আর ব্যাগের মালিকের ঠিকানা। বিশ্বাস করবে না, সবগুলো মানিব্যাগ ফেরত এসেছে।
সবচেয়ে অবিশ্বাস্য ব্যাপার হচ্ছে, প্রায় সবগুলোতে ৫০০ টাকার বদলে ছিল ১০০০ টাকা। ভাবতে পারো? বাংলাদেশিরা কত সৎ? আমেরিকা হলে একটা মানিব্যাগও ফেরত আসত না।
-কিন্তু, ওখানে যাবে কী করে? স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে পারো। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট—এগুলো বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠান। তুমি চান্সই পাবা না।
তার চেয়ে হার্ভার্ডে পড়ো, পরে না হয় বাংলাদেশের কোনো একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রান্সফার হয়ে যেয়ো। ওদের প্রাইভেট ভার্সিটির র্যাংকিং অনেক ওপরে।
-পাগল! হার্ভার্ডে লেখাপড়ার পরিবেশ আছে? ছাত্রসংগঠনগুলো সারা দিন মারামারি আর হল দখল নিয়ে ব্যস্ত। টিচাররা ব্যস্ত রাজনীতি নিয়ে। এই যে সামনে নির্বাচন আসছে, টিচাররা দুই দলে বিভক্ত হয়ে যাবে।
আমেরিকার ভবিষ্যৎ অন্ধকার!
-তাহলে তুমি করবেটা কী? বাবা কিন্তু বাংলাদেশ-প্রবাসী ছেলে ছাড়া বিয়ে দেবে না।
-নিউইয়র্কের এক আদম ব্যাপারির সঙ্গে কথা হয়েছে। তাকে ৬০ হাজার ডলার দিয়েছি। সে বাংলাদেশের নীলফামারীর একটা কলেজে আমার ব্যবস্থা করে দেবে। আজই কাগজপত্র বুঝিয়ে দেয়ার কথা।
স্টুডেন্ট ভিসায় যাব। কাজ করে খাব। বাংলাদেশে গিয়ে লেগুনার হেলপার হলেও শান্তি।
-লেগুনার হেলপার?
-অফকোর্স! আমেরিকা থেকে যারা ওখানে যায়, তারা লেগুনার হেলপারি করে কত টাকা কামাচ্ছে, তা চিন্তাও করতে পারবে না। আমার পরিচিত এক হেলপার আছে, অ্যান্ড্রুু নাম।
তার কাছে শুনেছি। পাঁচ টাকা ভাড়া, যাত্রী দিয়েছে ১০০ টাকার নোট। অ্যান্ড্রু বলল, স্যার, ভাংতি নাই। ওই ভদ্রলোক হাসিমুখে বলল, ঠিক আছে, লাগবে না। ভাবা যায়?
-আমি যাই।
টিউশনি আছে।
-যাও। তবে বাংলাটা ভালোভাবে শেখো। বর্তমান যুগে বাংলা না জানলে কিছু করতে পারবে না। বেশি করে ঢালিউডের মুভি দেখো।
হলিউডের তো যা-তা অবস্থা! মোটা মোটা নায়িকার আজেবাজে সিনেমা। এরা কোনো দিনও ঢালিউডের কাছাকাছি যেতে পারবে না।
-তুমি আজকাল বেশি কথা বলছ। গেলাম।
আমিও বেরোলাম।
আদম ব্যাপারির কাছে যেতে হবে। রাস্তায় ভয়াবহ জ্যাম। রিপাবলিকানরা কী নিয়ে যেন মানববন্ধন করছে। ঘুরে অন্য রাস্তায় যাব, সে উপায়ও নেই। ওখানে আবার ডেমোক্র্যাটরা রিপাবলিকানবিরোধী কর্মসূচি পালন করছে।
কী যে অবস্থা! এরা কি বাংলাদেশের দলগুলোর মতো হতে পারে না? ওখানে দুটো দল কত সুন্দর আলোচনা করে দেশ চালায়। কোনো মারামারি নেই, হরতাল নেই। দেখতেই ভালো লাগে। নাহ্, ওখানে গিয়ে বাংলাদেশি একটা মেয়েকে বিয়ে করে গ্রিন কার্ড নিয়ে নিতে হবে। তারপর আর যাব না আমেরিকা! আমি হাঁটা শুরু করলাম।
আদম ব্যাপারির অফিসের সামনে এসে দেখি, শত শত লোক দাঁড়িয়ে কাঁদছে। মনে মনে হাসলাম। কাঁদলেই বাংলাদেশে যাওয়া যায় না, লিংক লাগে। ভিড় ঠেলে অফিসের সামনে যেতেই পুলিশ আটকাল:
-কোথায় যাবে?
-বাংলাদেশে।
-যে লোকগুলো কাঁদছে, ওদের সঙ্গে গিয়ে কাঁদো।
-কেন?
-তোমাদের আদম ব্যাপারি সবার টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়েছে।
আমার মাথায় স্ট্যাচু অব লিবার্টি ভেঙে পড়ল। সব শেষ। আমার আর বাংলাদেশে যাওয়া হবে না। এই চোরের দেশ আমেরিকাতেই পচে মরতে হবে।
ইশ, পুলিশগুলো বিশ্রীভাবে হাসছে। আমি নিশ্চিত, বাংলাদেশের পুলিশ কখনোই এভাবে হাসত না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।