যে শপথে ভর করে স্বাধীন স্বদেশ, কতটুকু পেল তার প্রিয় বাংলাদেশ! আমি আমার লেখার প্রথমেই বলতে চাই, এটা কোন ক্যাচাল পোষ্ট না, অর্থাৎ রাজাকার-নাস্তিকমূলক ক্যাচাল একেবারেই প্রযোজ্য নয়। একজন মুসলমানের সন্তান হিসাবে, একজন মুসলমান হিসাবে বলছি নবী করিম (সা) এর বিরুদ্ধে কথা বলা শুধু অন্যায় নয়, মহাঅন্যায়। যারা আল্লাহর হাবীবের বিরুদ্ধে কথা বলবে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, সেটা ব্লগার হোক, ডাক্তার হোক, ইঞ্জিনিয়ার হোক, মাওলানা হোক আর পত্রিকার সম্পাদক হোক।
আবার এ কথাটাও বিবেচনায় রাখতে হবে, যেকোন ধর্মের অবমাননার ক্ষেত্রেও আমাদের সোচ্চার থাকতে হবে। আজকে নবী করিম (সা) এর নামে কোন ব্লগ লেখার কারণে যেমনি এটি গর্হিত কাজ তেমনি আমাদের মসজিদের উপর হামলাও আমরা সহ্য করবো না।
আর তাই আমরা কোন মন্দিরে হামলা হলেও নিশ্চুপ থাকবো না। আজকে আমাদের আলেম সমাজ ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা আমাদের ধর্মের অবমাননার জন্য যে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন তেমনি হিন্দু, বৌদ্ধরা সংখ্যালঘু না হলেও হয়তো তেমনি প্রতিক্রিয়া হতো। আবার আমরা যদি সংখ্যা লঘু হতাম তাহলেও সংখ্যালঘুর নিরীহতা মেনে নিয়ে চুপচাপ সহ্য করা ছাড়া হয়তো উপায় থাকতো না।
পক্ষান্তরে, কোন নাস্তিকের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন করাও আমার দৃষ্টিতে উচিত না। (দয়া করে গালাগালি শুরু করবেন না।
আগে পড়ুন, এবং তার পর প্রতিক্রিয়া ঝাড়তে পারবেন। )
একজন ব্যক্তি নাস্তিক হতেই পারে, সেটা তার ব্যপার। নাস্তিক যেকোন ধর্মের লোকই হতে পারে, হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলমান যেকেউ-ই নাস্তিক হোন না কেন সেটা তার ধর্ম বলে বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু নাস্তিকতা এক জিনিস, কোন ধর্মকে হেয় করা ভিন্ন জিনিস। যেকোন ধর্মকে অপমান অপদস্ত করলে তার প্রতিবাদ হবে, শাস্তি হতেই হবে।
আমি মনে হয় প্রসঙ্গ থেকে কিছুটা দূরে সরে এসেছি। আবার মূলে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
আমি ব্লগার, আপনি ব্লগার, আমরা যারা বিভিন্ন প্লাটফরমে মুক্তমতের, মুক্ত বুদ্ধির চর্চা করছি তারা আজ বড় বেশি বির্তকিত। আমি ব্লগার মানেই নাস্তিক নই। গুটি কয়েক ব্যক্তি যেকোন ব্লগ প্লাটফর্মে রাসুলের অবমাননা করার কারণে ঐ গুটি কয়েক ব্লগারেরই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে পারে।
তাই বলে আপনি সকল ব্লগাদের নাস্তিক হিসাবে আখ্যায়িত করতে পারেননা। নবীকে নিয়ে কটাক্ষ তো শুধু ব্লগেই হয়নি! ফেসবুকে হয়েছে, তাহলে ফেসবুকারদের নাস্তিক বলছেন না কেন? কারণ সাধারণ মানুষ অনেকেই ব্লগ কি জিনিস বুঝেন না, এমনকি যে মাওলানা মৌলিবিরা আন্দোলন করছেন তারা শুধু ব্লগ শব্দটিই জানেন, এর বেশি কিছু জানেননা এমন সংখ্যাই বেশি। এখন সাধারণ মানুষকে ব্লগাররা নাস্তিক এ কথাটা যত সহজে বুঝানো যাবে, ফেসবুকাররা নাস্তিক ততো সহজে বুঝানো যাবে না। কারণ আজকালকার মুফতী মাওলানা সাহেবদের বৌ-ছেলেমেয়েরাও ফেসবুকিং করছেন। তাই তারা প্রথমেই ঘরে বাধার সম্মুখীন হবেন।
তারপর রিক্সাঅলা থেকে শুরু করে গার্মেন্ট কর্মীরাও ফেসবুক ব্যবহার করেন, তাদেরও ভুল বুঝানো যাবে না। কারন তারা সেটাকে নিজ চোখে দেখে পরখ করে নিতে চেষ্টা করবেন।
আবার মনে হয় প্রসঙ্গের বাইরে চলে এসেছি। দু:খিত। যে কথাটা বলছিলাম- গুটি কয়েক ব্লগার অন্যায় অপরাধ করার কারণে যখন আপনি ব্লগারদের নাস্তিক বলছেন, যখন ব্লগাররা একটা আন্দোলন করার কারনে সেই পুরো আন্দোলনটাকেই নাস্তিকদের আন্দোলন বলছেন তখন তা কতটা যুক্তিযুক্ত? শাহবাগে কি শুধুই নাস্তিকরা আন্দোলন করে? ওখানে তো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ুয়া মানুষও যায় তাহলে কোন যুক্তিতে আপনি তাদের সবাইকে নাস্তিক বলছেন বিনা বিচারে? আচ্ছা মানলাম ওখানে যারা আন্দোলন করছে তাদের কেউ কেউ নাস্তিক।
তাই বলে সবাইকে নাস্তিক বলছেন? আপনাকে একটা প্রশ্ন করি? পত্রিকায়, খবরে নিশ্চয় দেখে থাকবেন, অনেক মাওলানা মাদ্রাসার ছাত্রীকে ধর্ষন করার অপরাধে এলাকাবাসী তাকে ধরে পুলিশি দিযেছে, আর নিজের চোখে দেখা বিষয়গুলো না হয় নাই বললাম। তাই বলে কি সকল মাওলানা, সকল মাদ্রাসার শিক্ষকই নারী ধর্ষণকারী?
বিষয়টাকে বিবেচনায় নিতে হবে যে- ধর্মকে শাহবাগের মুখোমুখি করার দায়িত্বটা মাহমুদুর রহমান সাহেব ই নিয়েছেন। তিনি তুরুপের তাষটা খেলে এখন দেখেন কত লক্ষী ছেলের মতো তামাষা দেখছেন। এখন কিন্তু মাহমুদুর রহমান নিয়ে কেউ কোন টু শব্দটি পর্যন্ত করছেন না। তিনি সত্যিই একজন মাথাওয়ালা মানুষ এবং আপাতত দৃষ্টিতে সফলও (আপাতত বলছি এ কারণে , ধর্ম নিয়ে যারাই যুগেযুগে খেলার চেষ্টা করেছে একসময় তাদের অবস্থান হয়েছে ইতিহাসের আস্তকুড়ে।
)। কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছি আমরা ব্লগাররা। অপবাদের ঝুড়ি মাথায় নিয়ে ঘুড়ছি। এক সময় গর্ব করে বলতাম আমি একজন ব্লগার, এখন বেমালুম চেষ্টা করি চেপে যেতে, জীবনের ভয়তো সবারই আছে? প্রেস্টিজ আর মান-ইজ্জত তো সবারই কম বেশি আছে তাই নয়কি? আর আমাদের ব্যর্থতা আমরা নিজেরাই তৈরি করেছি। কারণ আমরা দ্বিধাবিভক্ত।
আমার এ পোস্টেও হয়তো ক্যাচাল শুরু হবে আর আমরা প্রমাণ করবো আমরা আসলেই বিভক্ত। আমাদের ঐক্যদ্ধ হওয়া খুব বেশি দরকার। আমাদের অপবাদ আমাদেরকেই ঘুচাতে হবে। রক্ষা করতে হবে আমাদের মুক্তমতের মাধ্যম ব্লগগুলোকে। কারণ বিএনপি যেমনি রাজনীতি করছে এই ব্লগাদের ধর্মের মুখোমুখি করে ফায়দা লুটার জন্য তেমনি সরকার (আওয়ামীলীগ)ও চেষ্টা করছে ব্লগারদের তুরুপের তাষ বানিয়ে বলির পাঠা করতে।
তাই আমাদের প্রয়োজনেই আমাদের সোচ্চার হতে হবো। গলা ছেড়ে আওয়াজ তুলতে হবো আমি নাস্তিক নই, আমি ব্লগার।
এই নাস্তিকতার দোহাই দিয়ে রাতারাতি বিস্তৃতি লাভ করার হেফাজতে ইসলাম প্রতিটা মহানগরে তাদের শাখা তৈরি করে ফেলেছে, প্রতিটা মহানগরে অফিস আছে, আমির আছে আছে সেক্রেটারি জেনারেল, সব অন্য একটা সংগঠনের আদলে, হুবহু মিলে যায়, শুধু নামের একটা অংশ পরিবর্তন ছাড়া।
আর নাস্তিকদের শাস্তির দাবিতে নেমে তারা ধরিয়ে দিয়েছেন ১৩ দফা। সমাবেশে অংশ নেওয়া ৮০ শতাংশ লোকই একটা দাবি ছাড়া বাকিটা বলতে পারবেন না।
আর ঐ একটা দাবির জন্যই তারা যেকোন লড়াইয়ে লড়তে রাজি আছে, বাকীগুলোর জন্য না, কিন্তু হেফাজতে ইসলাম এই সূক্ষ দাবিটার পেছনে আদায় করতে চাইছে অযৌক্তিক বাকী দাবিগুলো। এটা নি:সন্দেহে ধোকাবাজি।
তাই এখনি সময়, ধর্ম নিয়ে যে স্ট্যন্ডবাজিটা হয়ে গেলো এবং হচ্ছে, তাকে হেফাজতের ১৩ দফা দিয়েই মোকাবেলা করতে হবে। এটাকের উপর কাউন্টার এ্যাটাক। মাহমুদুর রহমান প্রজন্ম চত্ত্বর, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হেফাজতের মুখোমুখি করেছেন, হেফাজত চেষ্টা করছে ইসলাম এবং নারীকে মুখোমুখি করতে।
ইসলামকে হেফাজতকারী একমাত্র আল্লাহ, কোন ব্যক্তিকে ইসলাম ইজারা দেওয়া হয়নি। মতিঝিলে সমাবেশ করলেই ইসলামের হেফাজত হয়না। বরং হেফাজত করতে হবে দক্ষতা, আন্তরিকতা, ধৈর্য্য দিয়ে। যারা একজন নারীর হেফাজত করতে পারেননা, তারা ইসলামের মতো এতো মহৎ, এত বৃহৎ ধর্মকে কিভাবে হেফাজত করবেন? সকল ধর্মের চেয়ে একমাত্র ইসলামই নারীকে বেশি মর্যাদা দিয়েছে।
তাই বলছি, জাগো নারী, সময় এখনি প্রতিবাদ করার, যদি নিজেকে বন্দী না করতে চাও গৃহের চারকোণে, যদি ব্যর্থ করতে না চাও বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামারের মতো অসংখ্য মহৎ নারীর জীবন সংগ্রামকে।
জাগো বাহে, কোনঠে সবে....। যদি বাংলাদেশকে আফগানিস্তান, পাকিস্তান না বানাতে চাও। জয় বাংলা।
সকল ভুলের ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, ভুল হলে গঠনমূলক সমালোচনা করবেন, গালাগালি নয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।